Alapon

পাপ-অপরাধ ও অন্যায় যেভাবে সমাজে স্বাভাবিক হয়




আপনারা একমত হবেন কি-না জানি না, তবে আমার মনে হয় সমাজে খারাপ কাজ, পাপের কাজ, অন্যায় কাজ নরমাল হবার অন্যতম একটা উপায় হলো সচেতনতার নামে এগুলো নিয়ে অতিরিক্ত মাতামাতি করা। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে এটা আমাদের কতিপয় দীনি ভাইয়েরাই করেন।**

আসলে পাপগুলো প্রথমে যখন হয়, তখন ঘৃণার মধ্যেই থাকে। মানুষ তা ঘৃণার চোখেই দেখে। এরপর যখন এগুলো বারবার পত্রিকায়, মিডিয়ায়, মানুষের মুখে মুখে আলোচনা হয়, তখন তা সহনীয় মাত্রায় চলে আসে।

তখন আর আগের মতো পাপের কথাটা শুনলে চোখগুলো কপালে উঠে যায় না। ভ্রু কুচকে আসে না। প্রচারে প্রচারে প্রসার হয়ে গেছে যে! দেখতে দেখতে, শুনতে শুনতে তো সবকিছুই স্বাভাবিক হয়ে যায় মানুষের কাছে।

তবে হ্যাঁ, এই পর্যায়ে কিন্তু পাপের কথা, অন্যায়ের ঘটনা শুনলে আফসোস হয়। মাঝেমধ্যে ডিপ্রেশনও হয়তো নেমে আসতে চায় জীবনে। তবে আগের মতো না। এখন চিন্তা হয় এমন— যা হবার হোক, এগুলো নিয়ে এতো মাতামাতি করে আর ফায়দা কী! নিজের মতো করে নিজের ঈমান আমল, নিজের নীতি-নৈতিকতা, মূল্যবোধ নিয়ে ভালো থাকি, এটাই বেস্ট।

এরপর পাপ, অন্যায়, অসামাজিক কাজ আরো নরমাল হয়। এই পর্যায়ে এসে মানুষ তখন উক্ত পাপ এবং পাপীকে নিয়ে ট্রল করে। হাসাহাসি করে। যেমন: শালা তুই গে নাকিরে! আরেহ, এ দেখি শরিফা আফা..! এরকম আরো নানাভাবে। নানান উপায়ে। নানান বিষয়ে।

এরপরের ধাপ হয় ভয়াবহ পর্যায়ের। তখন পাপ, অন্যায় অনাচার হয়ে যায় ব্যক্তি স্বাধীনতা। বক্তব্য আসে— পাপীকে নয়, পাপকে ঘৃণা করুন (মানে পাপ পছন্দ করেন না ঠিক আছে, অপছন্দের কাজ করলেও পাপীকে সমাজে স্পেইস দাও, সেও মানুষ। তারও বাচার অধিকার আছে। চলার অধিকার আছে। তাকে তার কাজ করতে দাও। সে তো তোমার ক্ষতি করছে না)।

শেষ পর্যায়টা হয় ভীষণ ভয়াবহতার। তীব্র বিপর্যয়ের। কারণ, সচেতনতার নামে সংবেদনশীল এসব বিষয়-আশয় নিয়ে অতিরিক্ত মাতামাতির এই জিনিসগুলো, এই হাসিঠাট্টা ও ট্রল-বিদ্রুপের এই দিকগুলোই এক পর্যায়ে হয়ে যায় বাস্তবতা। সমাজের অংশ। অংশ থেকে হয়ে যায় মূলধারা। আর, শুদ্ধচিন্তা হয়ে যায় প্রতিক্রিয়াশীলতা। উগ্রতা।

বিশ্বাস করতে কষ্ট হলেও আমার কাছে মনে হয় পাপপূর্ণ চিন্তাধারা ও কাজকর্মগুলো, সমাজ-সভ্যতায় এভাবেই নরমাল হয়৷ ছড়িয়ে যায়, আধিপত্য বিস্তার করে।

মূলত যে পাপ যতো শক্তপোক্তভাবে নিষিদ্ধ থাকে আল্লাহর দীনে, সে পাপের প্রতি শয়তানেরও শক্তিশালী শ্রম ও মেধার বিনিয়োগ থাকে।

শয়তান আল্লাহর নিষিদ্ধ কাজকে তার জীবনের সূচনা থেকেই মানুষের কাছে আকর্ষণীয় হিসেবে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করছে, করে যাচ্ছে।

কারণ, বনী আদমকে মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার অনানূগত, অবাধ্য, জাহান্নামের লাকড়ি বানানোই তার টার্গেট যে.....

★[সচেতনতার নামে এগুলো নিয়ে অতিরিক্ত মাতামাতি করেন আমাদের মানহাজি ভাইদের মধ্যেই কেউ কেউ তথা আল-কায়েদা ও এই সংশ্লিষ্ট ভাইয়েরাই। আপনি এসব লোকদের মধ্য আসিফ আদনান ভাই, মুহতারাম উস্তাদ হারুন ইজহার, ডাক্তার সামছুল আরেফিন শক্তি ভাইদের একনিষ্ঠ অনুসারী, তাদের কঠিন সমর্থক ভাইদেরকেই বেশি দেখবেন।

এর মানে এটা না যে, আমাদের সেসব ভাইয়েরা সব বিষয়ই এমন করেন। এবং এটাও না যে তারা খারাপই চান সমাজ-মানুষ, দীন ধর্মের খারাপই চান।

আসলে আমি মন থেকে তাদের অনেক কাজকেই পছন্দ করি। পছন্দ করার মতোই। তাদের ইখলাস, আমল, তাকওয়া, দীন কায়েমের ব্যাপারে বিশুদ্ধ চিন্তার আগ্রহের প্রতি অনুরক্ত থাকতে চাওয়া, ইবাদাত-আমলে একনিষ্ঠতা, ইত্যাদির জন্য তাদেরকে ভালোবাসি।

কিন্তু তারা অধিকাংশ সময় হটকারী ও অতি-আবেগী হয়। তারা তাদের এ-সমস্ত কাজের চূড়ান্ত ফলাফল কী হবে, কার ঘরে যাবে, সেসব চিন্তা করে না।

যাহোক, মুমিন হয়ে থাকলে কারো পক্ষ-বিপক্ষ নিয়ে কাউকে গালাগালি করবেন না আল্লাহর ওয়াস্তে। কারো কিছু কিছু কাজ মাথামোটার মতো হতেই পারে, সেজন্য তাকে কাফিরদের মতো শত্রুজ্ঞান করা, গালাগালি করা মোটেও শোভনীয় নয়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন।]

পঠিত : ২৪৮ বার

মন্তব্য: ০