Alapon

কে এগিয়ে? ইসলাম নাকি জাহেলিয়াত?

যদি প্রশ্ন করা হয়, পঁচিশ বছর আগে ইসলামের প্র্যাকটিস বেশি হতো, নাকি ২০১৮ সালে এসে ইসলামের বেশি প্র্যাকটিস হচ্ছে? সচেতন মাত্রই উত্তর করবেন, নিঃসন্দেহে এখন ইসলামের প্র্যাকটিস অনেক বেশী হচ্ছে। সুন্দরভাবে হচ্ছে। কিশোর, যুবা, বৃদ্ধ ইসলামের প্র্যাকটিস করছে। মসজিদগুলোতে মুসল্লি বাড়ছে। হজ্ব এজেন্সিগুলোর ব্যস্ততা বাড়ছে। দান-সাদাকা বাড়ছে। ইসলামের বিপ্লবী প্রাণসত্তা সম্প্রসারিত হচ্ছে।

আরেকটি প্রশ্ন যদি করা হয়, পঁচিশ বছর আগে জাহেলিয়াতের প্র্যাকটিস বেশি হতো, নাকি ২০১৮ সালে বেশি জাহেলিয়াতের প্র্যাকটিস হচ্ছে? উত্তরে আপনাকে অবশ্যই বলতে হবে, আগের চেয়ে এখন জাহেলিয়াতের প্র্যাকটিস অনেকগুণ বেড়ে গেছে। আগের চেয়ে এখন অনেক ভয়াবহভাবে জাহেলিয়াতের আক্রমণ চলছে। নেশার আসরে উপস্থিতি বাড়ছে, খুন-রক্তপাত বাড়ছে, পর্দার লঙ্ঘন-ধর্ষণ বাড়ছে, সুদ-ঘুষ-অপকর্ম বাড়ছ। জালিয়াতির নিত্য নতুন স্টাইল বাড়ছে।

একবার ভেবে দেখেছেন, ইসলাম ও জাহেলিয়াতের এই ক্রমবর্ধমান বিস্তৃত প্র্যাকটিসের প্রাসঙ্গিক কারণ কী?

প্রথমেই বলতে পারেন, জনসংখ্যা বাড়লে মসজিদের মুসল্লি যেমন বাড়ে, আবার নেশার আসরের উপস্থিতিও বাড়ে। হজ্ব যাত্রী বাড়ে, পতিতালয়ের যাত্রীর সংখ্যাও বাড়ে। দান-সাদকা বাড়ে, সুদ-ঘুষও বাড়ে। আমি এই পয়েন্টে সচেতনভাবে একমত। 

সারাবিশ্বে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে ভাল ও খারাপ মানুষের সংখ্যাও বেড়েছে। ইসলামের প্র্যাক্টিক্যাল ফলোয়ারের সাথে সাথে জাহেলিয়াতের ফলোয়ারও বেড়েছে। কিন্তু এখানেও একটা বড় প্রশ্ন সামনে এসে দাঁড়ায়, ভাল-খারাপের যুগল বৃদ্ধিতে কে এগিয়ে? কম্পেরাটিভলি ইসলামিস্ট বেড়েছে নাকি জাহেল বেড়েছে?

এই কম্পেরাটিভ স্টাডি একটু পরে করি। তার আগে ইসলাম ও জাহেলিয়াতের প্র্যাকটিস বৃদ্ধির দৃশ্যমান কারণের আরেকটা দিকে নজর দিই। আমাকে যদি প্রশ্ন করা হয়, ইসলাম ও জাহেলিয়াত উভয়ের প্র্যাকটিস কেন বেড়েছে? আমি বলব, ইসলাম ও জাহেলিয়াত উভয় প্র্যাকটিসের ম্যাটেরিয়ালস (উপকরণ) বেড়েছে।

আশির দশকে ইসলাম জানার উপায়-উপকরণ কী কী ছিল? গ্রামের ওয়াজ মাহফিল, রেডিও-টিভির এক ঘণ্টার ইসলামি আলোচনা এবং লিটারেলি মোকছেদুল মোমেনিন, ফাজায়েলে আমল ছাড়া আর কী ছিল বলুন? তখন ইসলাম মানেই কিছু দোয়া-দরুদ, ব্যক্তিগত আমল, মসজিদের গিয়ে নামায আদায় আর রাতের বেলায় কয়েক কিলোমিটার দূরে গিয়ে ইসলামি জালসা শ্রবন। আশির দশকে ইসলামি সাহিত্যের অবস্থা কেমন ছিল কল্পনা করতে পারেন? সে সময় সত্যিকারার্থেই ইসলামের প্রানসত্তা জানার কোন রিসোর্স ছিল না। ইসলামি জীবন দর্শনই জানা ছিল না। ইসলামের বিপ্লবী জীবনবোধের কোন ধারনায় ছিল না।

কিন্তু এখন? ২০১৮ সালে এসে দেখুন ইসলামের প্র্যাকটিস করার উপায়-উপকরণ কতটা চেঞ্জ হয়েছে। বাংলা ভাষায় ইসলাম জানার শত শত সোর্স নাগালের মধ্যেই। চাইলেই ইসলাম সম্পর্কে জানা যাচ্ছে। শত শত ইসলামী সাহিত্য প্রকাশিত হয়েছে। পৃথিবীতে বিদ্যমান প্রায় সকল তাফসির বাংলা ভাষায় অনূদিত হয়েছে। সিহাহ সিত্তার সকল হাদিস এখন বাংলায় পাওয়া যাচ্ছে। আলহামদুলিল্লাহ। 

অনলাইনে ইসলাম নিয়ে প্রায় সকল বিষয়ে প্রচুর তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যাচ্ছে। অর্থনীতি, রাজনীতি, সংস্কৃতি, সামাজিক আচরণ ও নীতি, বিচার ব্যবস্থা, আইন-কানুন নিয়ে ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গি সকলের কাছে সহজলভ্য। প্রকৃত জ্ঞানের অভাবে ১০/১৫ বছর আগেও ইসলামি রাজনীতি নিয়ে সাধারন মানুষের মাঝে ভুল ম্যাসেজ ছিল। ইসলামি রাজনীতিকে হারাম বলে কত শত প্রচারণা হয়েছে, তার ইয়ত্তা নাই। কিন্তু এখন? সবাই এক বাক্যে ইসলামী রাজনীতির বৈধতা স্বীকার করে নিয়েছে। ইসলাম মানুষের কাছে ক্রমেই ‘দ্বীন’ হয়ে উঠেছে। 

সবকিছুই সম্ভব হয়েছে ইসলাম সম্পর্কে জানার রিসোর্স বেড়েছে বলে। অনলাইনে হাজারো ভিডিও, অডিও। বিষয়ভিত্তিক আলোচনা। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের শায়েখ ও স্কলারদের জ্ঞানগর্ভ আলোচনা, ভিডিও আমাদের হাতের মুঠোয়। মসজিদের সম্মানিত খতিববৃন্দও জুমার খুতবায় দারুণ আলোচনা করছেন। মিডিয়াতে আলেমদের সরব উপস্থিতি। বিষয়ভিত্তক শত শত ইসলামি ওয়েবসাইট, অ্যাপস। ইউটিউবে হাজারো টপিকস নিয়ে ইসলামি আলোচনা। আলহামদুলিল্লাহ্‌। ইসলাম সম্পর্কে জানার এসব উপকরণই মূলত ইসলামের প্র্যাকটিস বাড়িয়ে দিয়েছে।

এখন আসুন জাহেল্যিয়াতের প্রসারের কারন অনুসন্ধান করি। কী কারনে ইসলামের প্র্যাকটিসের সাথে জাহেলিয়াতের প্র্যাকটিসও বেড়ে গেল? সোজা উত্তর আগের মতই। জাহেলিয়াতের রিসোর্স বেড়েছে। সাহিত্য, মিডিয়া, সংস্কৃতি, শিক্ষাব্যবস্থা সবকিছুই জাহেলিয়াত তার গ্রিপের মধ্যে এনেছে। ফলাফল যা হবার, তাই হয়েছে। আগে যিনা করা জন্য পতিতালয়ে যেতে হতো। এখন একটি ফোনেই হোম সার্ভিসে বাসায় এসে কলগার্ল হাজির হয়। ঘরে বসে এন্ড্রোইড ফোনেই যিনা করা যায়। কত শত জাহেলি ওয়েবসাইট, অ্যাপস। সাহিত্য জগতে জাহেলদের কী পরিমাণ পদচারণা ভেবে দেখুন তো? ইসলাম নিয়ে ইসলামিস্টরা যতটা না লিখেছে, এন্টি-ইসলামিষ্টরা তার চেয়ে কয়েকগুণ লিখেছে। ইসলামের যেকোনো বিষয়ে গুগলে সার্চ  দিলে পজেটিভ লিখার চেয়ে নেগেটিভ লিখা বেশি সামনে আসবে। বর্তমান জাহেলিয়াতে সেরা উপাদান সম্ভবত মিডিয়া।

সাদাকে কালো আর কালোকে সাদা বানাতে মিডিয়া অতুলনীয়। মিডিয়ার কল্যানে বাংলাদেশের তারুণ্য কীভাবে মোটিভেটেড হচ্ছে, সবাই জানে।

কাম টু মাই পয়েন্ট:
ইসলাম নিয়ে যে পরিমান রিসোর্স বেড়েছে, তার চেয়ে কয়েকগুণ জাহেলিয়াতের রিসোর্স বেড়েছে। দুইটার রেশীও (তুলনামূলক অবস্থান) অনেক বেশি। ইসলামি রিসোর্স যতটা বেড়ে ইসলামের প্র্যাকটিস বেড়েছে, তার চেয়ে অনেকগুণ জাহেলিয়াতের রিসোর্স বেড়ে জাহেলিয়াতের প্র্যাকটিস বেড়েছে। সাহিত্যাঙ্গনে ইসলামের ও জাহেলিয়াতের কম্পেরাটিভিটি একবার ভাবুন তো ! 
মিডিয়াতে? 
কালচারে? 
শিক্ষায়? 
অনলাইনে? 
জাহেলিয়াতের উত্তরসূরিরা অনেক বেশি প্রো-একটিভ। আর সেই জাহেলি প্রো-একটিভিটির মোকাবেলায় আমরা অনেক বেশি রিএকটিভ। মনে রাখা ভালো, প্রো-একটিভিজম সব সময় একটা এ্যাডভান্টেজ পায়। রিএকটিভিটিকে একটা ন্যাচারাল ডিজ-আডভ্যান্টেজ ফেইস করতে হয়। ইসলামিস্টদের অনেক বেশি প্রো-একটিভ কাজ করার দিকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।

নিশ্চিত থাকুন, যার রিসোর্স যত বাড়বে, তার প্র্যাকটিস তত বাড়বে। আমরা যারা ইসলামি জীবনাদর্শ নিয়ে কাজ করছি, জাহেলিয়াতের মোকাবেলায় তাদের অবশ্যই ইসলামের রিসোর্স বাড়িয়ে দিতে হবে। পৃথিবীজুড়ে ইসলামের রিসোর্স ও কন্টেন্ট বাড়াতে হবে। সবাই সবকিছু করতে পারবে না। তবে স্পেসিফাই ফিল্ডে অবশ্যই স্পেসিফিক লোক কাজ করবে। পৃথিবীবাসীর কাছে ইসলামকে অত্যন্ত স্মার্টলি রিপ্রেজেন্ট করা সময়ের দাবি। জাহেলিয়াতের রিসোর্সের কয়েকগুন ইসলামি রিসোর্স দরকার। মিডিয়া, সাহিত্য, অনলাইনে ইসলাম নিয়ে প্রচুর কাজ করার আছে। যতটা পাড়া যায়, ইসলামী কনটেন্ট বাড়িয়ে নিতে হবে।

সিদ্ধান্ত নিতে হবে কে সাহিত্য নিয়ে, কে সংস্কৃতি নিয়ে, কে শিক্ষা নিয়ে, কে মিডিয়া নিয়ে, কে সোস্যাল একটিভিজম নিয়ে, কে এনজিও নিয়ে কাজ করবেন।

গত ২৫ বছরের ডাটা আমাদের এ কথাই স্বরণ করে দেয়, রিসোর্স বাড়াতে পারলে মানবতার মুক্তি ইসলামের প্র্যাকটিসের দিকেই সংখ্যাগরিষ্ঠরা ঝুঁকে পড়বে।

উম্মাহর জন্য অনেক কাজ করতে হবে। ছোটখাটো ডিবেট ভুলে আসুন, সম্মিলিত উদ্যোগে উম্মাহর জন্য কাজ শুরু করি। আল্লাহ্‌র ওয়াদা, আমরা উপযুক্ত হলে, তিনি অবশ্যই আমাদের এই দুনিয়াতে সম্মানিত করবেন। আর ওপাড়ের প্রতিদান তো অপেক্ষা করছেই !

কৃৃতজ্ঞতায়: নুর মোহাম্মদ আবু তাহের

পঠিত : ৭৮৭ বার

মন্তব্য: ০