Alapon

স্বাধীনতার ৪৭ বছরঃ চাই নতুন রেঁনেসা

স্বাধীন বাংলাদেশে সূচনা থেকেই দরকার ছিল সুশৃঙ্খলা, সর্বাঙ্গীন উন্নতির পরিকল্পনা, স্বাধীন রাষ্ট্ররূপে বাংলাদেশকে গড়ে তোলা দূরদর্শী প্রচেষ্টা। কিন্তু গোড়া থেকেই বাংলাদেশ চলেছে বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে। রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, জননিরাপত্তা, সেনাবাহিনী, প্রশাসনিক ব্যবস্থা, বিচার ব্যবস্থা ও শিক্ষা ব্যবস্থা পরিচালিত হয়েছে বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে। এর মধ্যেও কৃষক ও শ্রমিকরা কঠোর পরিশ্রম করে উৎপাদনের কাজ চালিয়ে গেছে। সর্বস্তরের লোকের শৃঙ্খলা আশা করেছে। ১৯৭২ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশের সংবিধান রচিত হয়। এর মধ্যে সারা দেশে প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ করা হয়। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে পুনর্গঠনের কাজ চালিয়ে যাওয়া হয়। অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা এবং সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর নানা ষড়যন্ত্র চলছিল।

এর মধ্যে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন। অনেক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশের রাজনীতিতে সংগঠিত হয়েছে। বিশৃঙ্খলার মধ্যে গিয়েছে সামরিক শাসনের কাল। দীর্ঘ সময়ের মধ্যেও কোনো রাজনৈতিক দল গণতান্ত্রিক কিংবা সমাজতান্ত্রিক চরিত্র নিয়ে পুরোপুরি গড়ে ওঠেনি। ১৯৮০ দশকের শুরু থেকে বাংলাদেশে দ্রুত গড়ে উঠেছে এনজিও, সিভিল সোসাইটি অরগানাইজেশন। ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, বিশ্বব্যাংক, এনজিও সিভিল সোসাইটি অরগানাইজেশনগুলোর কার্যক্রম অতিক্রম করে বাংলাদেশে কোনো রাজনৈতিক নেতা, কোনো রাজনৈতিক দল গণতান্ত্রিক চরিত্র নিয়ে গড়ে ওঠেনি। বাংলাদেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের নেতারা সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রসমূহের দূতাবাসগুলোতে গণতন্ত্রের জন্য সাহায্য চাইতে যান। তারা গণতন্ত্রের জন্য সাহায্য চাইতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দিষ্ট ডেস্কে চলে যান। এসব লক্ষ্য করে বলা যায়, বাংলাদেশটাকে গড়ে তোলার উপযোগী, এমনকি পরিচালনা করার উপযোগী কোনো রাজনৈতিক দল গড়ে ওঠেনি। দেশের উচ্চ শ্রেণীর লোকেরা তাদের ছেলেমেয়েদের যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক করে চলছেন। এ অবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা নিয়ে শঙ্কিত হতে হয়।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কল্যাণে দুনিয়াজুড়ে নানা সুবিধা জনজীবনে দেখা দিয়েছে। কৃষি উৎপাদন গত ৩০ বছরের মধ্যে চারগুণ হয়েছে। ফলে মানবজাতি এখন খাদ্যাভাব থেকে মুক্ত। সিনথেটিক ফাইভারে কাপড় তৈরির ফলে মানবজাতির মধ্যে কাপড়ের কোনো অভাব নেই। বিদেশে শ্রমশক্তি রফতানি করে আয়ের বিরাট সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আছে পোশাক শিল্প থেকে আয়, আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা বাহিনীতে সৈন্য পাঠিয়েও আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এসবের ফলে বাংলাদেশ আর্থিক দিক দিয়ে সমৃদ্ধি অর্জন করেছে। ভবিষ্যতেও এ সুযোগ বাংলাদেশ গ্রহণ করে চলতে পারে। এটা আশা প্রদেয়।

কিন্তু দেশের রাজনীতি দুর্বল হওয়ার ফলে, অগণতান্ত্রিক হওয়ার ফলে বিরাট বিরাট সব সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা দুঃখজনকভাবে বিপথগামী। প্রশাসন ব্যবস্থা দারুণভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত। বিচার ব্যবস্থা স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। যে আর্থসামাজিক রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা চলছে তাতে মানুষ মানবিক গুণাবলী হারিয়ে ফেলছে। মানুষ এখন মনোবল হারা। তবে এ অবস্থা নিয়ে মানুষের অভিযোগ ও অসন্তোষ আছে। জনজীবনের এ অবস্থাকে ভিত্তি করে সর্বজনীন গণতন্ত্রের আদর্শ ও লক্ষ্য নির্ধারণ করে নতুন রাজনীতি সৃষ্টি করা হলে তাতে অতীতের মতোই জনগণের অতুলনীয় শক্তির পরিচয় পাওয়া যাবে।

দরকার নতুন রেনেসাস ও নতুন গণজাগরণ। রেনেসাসের জন্য কেবল জ্ঞান চর্চাই যথেষ্ট নয়। জ্ঞানের সঙ্গে চাই নতুন চরিত্রবল। জনগণ লেখক শিল্পীদের থেকে নতুন চরিত্রবল আশা করে। আর গণজাগরণের জন্য দরকার জনগণের ভেতরে মহোৎসব মানবীয় গুণাবলীর আত্মপ্রকাশ। এর জন্য দরকার মহান লক্ষ ও নেতৃত্ব। সাধনা ও সংগ্রাম দেখা দিলে আমাদের জাতি ও রাষ্ট্রের শক্তিশালী হওয়ার প্রক্রিয়া সূচিত হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে বিপথগামিতার ফলে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তির প্রসার ঘটছে বলে অনেকে মনে করেন। আমার ধারণা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী কোনো শক্তি বাংলাদেশে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসতে পারবে না। দরকার হাজার বছরের ইতিহাসের ধারায় আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে নতুনভাবে উপলব্ধি করার, তার ভিত্তিতে দূরদর্শী কর্মসূচি নিয়ে কাজ করা। এর জন্য রাজনীতি ও রাজনৈতিক নেতৃত্বকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।

পঠিত : ৭৭০ বার

মন্তব্য: ০