Alapon

স্বাধীনতা কি আমরা আসলে পেয়েছি?


১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে পূর্ব পাকিস্তান তথা এখনকার বাংলাদেশের উপর পাকিস্তান হানাদার বাহিনী শাসকগোষ্ঠীর প্রত্যক্ষ নির্দেশে নিজেদের ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করতে মজলুম জনতার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। শুরু হয় নির্যাতন নিপিড়ন, হত্যা,ধর্ষণ,লুটপাট। এতে মা-বাবা তার সন্তান হারা হয়, ভাই বোনহারা হয়, বোন ভাইহারা হয়, স্বামী স্ত্রী হারা হয়,স্ত্রী স্বামী হারা হয়। বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, ভাষা সৈনিক, ডাক্তার, ইন্জিয়ারসহ  অসংখ্য  মেধাবী ছাত্রকে হারানোর মাধ্যমে অর্জিত হয় আমাদের এই বিজয়।

কেন হয়েছিল আমাদের উপর নির্যাতন?
কেন আমরা নিজের লালিত স্বপ্নকে দেশের জন্য বিলিয়ে দিয়েছি? কেন আমরা স্বাধীনতা সংগ্রামে নিজের প্রাণপণ চেষ্টা করেছি? 
কি পাওয়ার আসায় হাজারো মা বোন,বুদ্ধিজীবী হারিয়েছি?

এর উত্তর আমাদের জানা প্রয়োজন।
আমরা মুক্তির আসায় নিজের জীবন দিতে প্রস্তুত হয়েছি। নিজের কাছে যা ছিল তা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছি।

কিসের মুক্তি??
পশ্চিম পাকিস্তান কর্তৃক পূর্বপাকিস্তানকে শোষনের হাত থেকে বাঁচার মুক্তি। ন্যায়বিচারের বঞ্চনা, চলাফেরা ও কথাবলার স্বাধীনতা না পাওয়ার বঞ্চনা,শ্রমিক তার মজুরী না পাওয়ার বঞ্চনা,মেধাবী তার মেধার মূল্যায়ন না পাওয়ার বঞ্চনা, মোলিক অধিকার ফিরে না পাওয়ার বঞ্চনা থেকেই মুক্তির আসায় দলমত নির্বেশেষে সবাই  যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। শুধুমাত্র মুক্তির আসায়। পৃথিবীর মানচিত্রে আলাদাভাবে নিজেদেরকে তুলে ধরার আসায়।


আজ আমরা স্বাধীনতার ৪৭ বছর পার করেছি। আজ আমাদের মূল্যায়ন করা দরকার আমরা যা চেয়েছিলাম তার কতটুকু পেয়েছি?

আমরা কি শুধুমাত্র শহীদমিনারে পুষ্পস্হাপক প্রদান, সমবেদনা প্রকাশ, কিছুক্ষণ নিরবতা পালন,আনন্দ উল্লাস, মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে মানুষের আবেগ অনুভূতি কাজে লাগিয়ে নিজের পায়দা লুটার জন্য ও নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা /মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি বলে জাতির কাছে তুলে ধরার জন্য মুক্তির সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছি?
এই বিষয়ে সচেতন মানুষ হিসাবে সবাই আমার সাথে একমত হয়ে বলবেন "না "।
যদি উদ্দেশ্য এটা না হয়ে থাকে তাহলে কেন আমরা এত উল্লোসিত,আনন্দিত??
যেখানে সারাদেশ যুদ্ধ-যুদ্ধ অবস্থা, প্রতিবাদে মুখরিত, অধিকার আদায়ে মুখরিত, আরেকটি মুক্তি যুদ্ধের প্রতিক্ষায় আছে সবাই।

কিসের জন্য প্রতিবাদ??
আজও ক্ষমতার দন্দ,প্রতিহিংসার রাজনীতি আমাদের দেশটাকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিনত করছে। ভিন্নমতের উপর দমন নিপিড়ন বরাবরের মতো চলছে।
আজ বাংলাদেশ খুন,গুম,ন্যায়বিচার,ধর্ষণ,দূর্নীতি,প্রশ্ন ফাঁস,ও সন্ত্রাসের রাজ্যে পরিনত হয়েছে।
আজ ন্যায়বিচার,স্বাধীনতা(চলাফেরা, কথাবলা, সংগঠন পরিচালনা,ভিন্নমত চর্চা) ভূলন্ঠিত।
ধর্মীয় চিন্তা চর্চাটা একরকম বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।ন্যায্যঅধিকার না পাওয়া,মেধার অবমূল্যায়ন ও নিরপেক্ষতা ভূলন্ঠিত।সাধারন মানুষের মতামত উপেক্ষিত। আজও বঞ্চনা থেকে মুক্তির জন্য মানুষ হাহাকার করছে।প্রতিক্ষায় আছে নতুন একটি মুক্তি সংগ্রামের। সম্ভাবনা দেখছে নতুন সোনালী  বাংলাদেশের। যে বঞ্চনা থেকেই মূলত আমরা মুক্তিযুদ্ধে নেমেছি। আজও আমরা সেই বঞ্চনা থেকে মুক্তি পাইনি। 

এক্ষেত্রে অনেকে আমার সাথে দ্বিমত পোষন করবেন। অনেকে বলবেন বাংলাদেশ আলাদা একটি ভূখণ্ড পেয়েছে, আলাদাভাবে নিজেকে প্রকাশ করার সুযোগ পেয়েছে, স্বাধীন একটি ভাষা পেয়েছে, সল্পোন্নত রাষ্ট্র থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিনত হয়েছে।
যুক্তির খাতিলে একটি বিষয় বলি:
যখন আমরা মুক্তির জন্য আন্দোলন করছি,তখন পাকিস্তান  সরকার বলেছে এটা বিশৃঙ্খলা ছাড়া কিছুই না।সরকার কর্তৃক জনগনের উপর শোষনকে সঠিক বলে দাবি করছে। 
জনগন বলছে আমাদের উপর জলুম/শোষন করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে বাংলাদেশ সহ সারা পৃথিবীর মানুষ বলে পাকিস্তান কর্তৃক বরবরতা,মানবতাবিরোধী অপরাধ।পাকিস্তান সরকার বলে দেশবিরোধী চক্রান্ত প্রতিহতের চেষ্টা।

মায়ানমার সরকার কর্তৃক রৌহিজ্ঞা নির্যাতন কে সারাবিশ্ব বলছে মানবতাবিরোধী অপরাধ, মায়ানমার সরকার বলে বিশৃঙ্খলাকারী/জঙ্গিবাদের উৎক্ষাত।
অর্থাৎ ব্যাপারটা তাদের কাছে সঠিক। ফিলিস্তিন, সিরিয়াসহ পৃথিবীর নানা দেশে একই যুদ্ধ চলছে।

আমি বলবো এখনো যারা বলে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি তারা হলো সেই বেনজির ভূট্টোর মতো,অংসান সুচির মতো। তারা হলো বেনজির ভূট্টো,অংসান সুচির অনুসারী। তবে এটা ঠিক যে,
পরাশক্তির কাছে নিজেদের বিক্রি করে দেওয়ার মাধ্যমে অবশ্যই কোন বিশেষগোষ্ঠী সুবিধা নিচ্ছে/পাচ্ছে।একটা কথা আছে না "নিজে বাঁচলে বাপের নাম"। আর সে বিশেষ গোষ্ঠিটিই দাবি করবে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি এবং ডাকঢোল পিটিয়ে মানুষকে জানান দিবে আমরা স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি।

আমি বলবো সবই কাগজে কলমে বাস্তবে নয়।
কারন আমাদের দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি,সংস্কৃতি,শিক্ষা ব্যবস্থা, শাসননীতি পরাশক্তির দ্বারা প্রভাবিত। পরাশক্তি রাষ্ট্রগুলো আমাদের দেশকে তাদের লক্ষ অনুযায়ী পরিচালিত করছে।
তাদের সংস্কৃতি,শিক্ষানীতি,শোষণনীতি,রাজনীতি আমাদের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে। আমাদের রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে তাদের অর্থনীতির চাকা ভারী করছে।আর এটার জন্য প্রয়োজন তাদের চিন্তা ও লক্ষের মনোপুত কোন রাষ্ট্র প্রধান। যিনি এখানে নিয়মিত পরাশক্তির চিন্তা,দর্শনগুলো প্রতিষ্ঠায় কাজ করবেন।পরাশক্তির সার্থ হাসিল করাই তার একমাত্র উদ্দেশ্য। এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগনের মতামত, দর্শন,সংস্কৃতি,শিক্ষা উপেক্ষিত।
একদিকে ক্ষমতার লোভ,অন্যদিকে পরাশক্তির চাপে সবসরকারই স্বৈরাচারী হয়ে যায়। ক্ষমতার লোভে দেশকে বিক্রি করতে, দেশের মানুষকে শোষণ করতে, 
দেশের কৃষ্টিকালচার ধবংস করতে একটুও কার্পন্ন করেনা।

আজ বেনজির ভুট্টো,মুসোলেনি,অংসান সুচি,মাও সেতুং এর মতো স্বৈরাচারী নেতাগুলো বাংলাদেশে নেই কিন্তু তাদের অনুসারীরা রয়ে গেছে। আজ আমরা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ পেয়েছি ঠিকই কিন্তু স্বাধীন চিন্তার অসাম্প্রদায়িক নেতা পাইনি। আজ আমরা কাগজে কলমে স্বাধীন তবে বাস্তবে পরাধীন।
আজ বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ডকে পরাশক্তির হাত থেকে বাঁচানোর জন্য একজন সৎ,দক্ষ, দেশপ্রেমিক,সাহসী, অসাম্প্রদায়িক নেতার প্রয়োজন। 



পঠিত : ১৩৪৮ বার

মন্তব্য: ০