Alapon

যেমন কুকুর তেমন মুগুর!!!


মোবাইল ফোনে কল আসে সুরভীর (ছদ্মনাম)। হ্যালো বলাতেই ওপাশে এক যুবকের কণ্ঠ। সুরভী তাকে চিনতে না পারায় লাইন কেটে দেয়। এর কিছু সময় পর আবারও ফোন আসে একই নম্বর থেকে। ফোন ধরে না সুরভী। বার বার যখন ফোন আসছিল এক পর্যায়ে সুরভী অজ্ঞাত ওই ফোন কলারের সঙ্গে কথা বলে। যুবকটি নিজের পরিচয় দিয়ে বলে তার নাম শরিফুল। ঢাকায় থাকে। ব্যবসা করে। এ থেকে তাদের কথা শুরু। এরপর প্রায় প্রতিদিনই তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফোনে কথা বলত। কথা বলতে বলতেই একে অপরকে ভালোবেসে ফেলে। শরিফুল তাকে বিয়ে করবে বলে জানায়। সুরভীও রাজি। পরিবার রাজি না হলেও প্রয়োজনে পালিয়ে তার কাছে চলে যাওয়ার কথাও জানায় সুরভী।

কিছুদিন পর কলেজছাত্রী সুরভীর বিয়ে ঠিক করে তার পরিবার। কিন্তু বিয়েতে রাজি নয় সুরভী। বিয়ে ঠিক করার কথা জানায় শরিফুলকে। শরিফুল তাকে চলে আসতে বলে। কিন্তু সুরভী একা তাদের গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইল থেকে ঢাকায় যেতে পারবে না। যে কারণে তাকেই টাঙ্গাইল এসে নিয়ে যেতে বলে সুরভী। শরিফুল টাঙ্গাইল বাস স্ট্যান্ডের কাছে অপেক্ষা করে। সুরভী কাপড়ের একটা ব্যাগ নিয়ে বাসা থেকে পালিয়ে যায়। যাওয়ার আগে তার বিয়ের জন্য ঠিক করে রাখা স্বর্ণালঙ্কার ও বিয়ের খরচের ৩০ হাজার টাকাও নিয়ে নেয়। শরিফুলের সঙ্গে দেখা হয়। তারা দুজনে বাসে করে গাবতলী আসে। গাবতলীর একটি আবাসিক হোটেল ‘মধুমতি’তে তারা ওঠে স্বামী স্ত্রী পরিচয়ে। রাতেই শরিফুল তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করতে চায়। কিন্তু রাজি হয় না সুরভী। বলে, বিয়ের পর সব হবে। শরিফুল তাকে বলে, দুই দিন পর বাড্ডা গিয়ে তারা বিয়ে করবে। বাসা ভাড়া নেবে। সুরভী তখন খুব খুশি। তারা রাতে হোটেল থেকে বাইরে খেতে যাবে। এর আগে সুরভী ওয়াশ রুমে যায়।

এ সুযোগে শরিফুল সুরভীর ব্যাগ থেকে বাড়ি থেকে আনা নগদ ৩০ হাজার টাকা আর স্বর্ণালঙ্কার সরিয়ে ফেলে। তারা দুজন রাতে হোটেলে যায় ভাত খেতে। এক সময় শরিফুল সুরভীকে বলে, তুমি একটু অপেক্ষা কর। হোটেল থেকে আমি আসছি। আমার একটা কাগজ ফেলে এসেছি। সুরভী খাবার হোটেলে বসে থাকে। কিন্তু কিছু সময় পর সুরভী হোটেলে ফিরে যায়। সেখানে গিয়ে জানতে পারে, শরিফুল হোটেল থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেছে। একটা সিএনজিতে করে চলে গেল দেখলাম। এ কথা হোটেলের ম্যানেজার জানায় সুরভীকে। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে সুরভীর। নিজের ব্যাগ থেকে টাকা বের করতে হাত দিয়ে দেখে টাকা নেই, স্বর্ণালঙ্কারও নেই। শরিফুলের ফোনও বন্ধ। সে বুঝতে পারে, প্রতারণার শিকার হয়েছে সে। অসুস্থ হয়ে পড়ে সুরভী। হোটেল থেকে বেরিয়ে রাস্তায় হাঁটছিল এলোপাতাড়ি। সে ফোন করে তার এক বোনের কাছে। তার বোন তাকে গাজীপুর তাদের বাসায় যেতে বলে। কিন্তু সুরভী হাঁটওতে পারছিল না। গায়ে তার জ্বর চলে এসেছে।

এমন সময় অপর এক যুবক তাকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে। শাকিল নামে ওই যুবক তাকে ধরে একটি হোটেলের সামনে নিয়ে যায়। যুবকটি বলে, আমি আপনাকে গাজীপুর পৌঁছে দেব। আগে আপনি রেস্ট নেন। এ কথা বলে একটি আবাসিক হোটেলে নিয়ে যায় সুরভীকে। রুমে রেখে যুবকটি ওষুধ আনার কথা বলে চলে যায়। এরপর তাকে একটি ওষুধ দিলে সুরভী সেটি খেয়ে নেয়। এরপরই তার ঘুম চলে আসে। ঘুম ভাঙার পর সে নিজেকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পায়। রুম থেকে বেরিয়ে বাইরে চলে আসে ভয়ে। সেখানেও সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। হোটেলের লোকজন তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। পুলিশ পরে শরিফুল আর শাকিল নামে ওই দুই যুবককে গ্রেফতার করে। শরিফুলের আসল পরিচয় পুলিশ জানতে পারে, তার নাম সজীব। সে পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। মিথ্যা পরিচয়ে প্রেমের অভিনয় করেছিল সুরভীর সঙ্গে আর শাকিল গাবতলী এলাকার বখাটে যুবক। ঘটনাটি কয়েক মাস আগের। পুলিশ জানায়, প্রেমের ফাঁদে পরে সুরভীর জীবন হুমকির মধ্যে পড়ে যায়। চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে মোবাইল ফোনে প্রেমের ফাঁদে ফেলে এক এসএসসি পরীক্ষার্থীকে গণধর্ষণ ও ভিডিও ধারণ করেছে তিন যুবক। নির্যাতিতা ছাত্রী জানায়, স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার সময় আরিফ মোবাইলে ফোন করে দেখা করতে বলে। পরে দিনভর বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরির পর তাকে উপজেলার খয়েরহুদা গ্রামের একটি ভুট্টা খেতে নিয়ে ধর্ষণ করে। এরপর আরিফের দুই বন্ধু জুয়েল ও সিরাজুল জোরপূর্বক তাকে ধর্ষণ করে। এ সময় ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে আরিফ।

পরে তার কাছে থাকা স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে পালিয়ে যায় তারা। বরিশালের বাবুগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসে সুরমা (ছদ্মনাম)। এসএসসি পাস করেছে। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে ঢাকায় কাজের পাশাপাশি এইচএসসি পড়ার ইচ্ছে ছিল তার। উত্তরার ১২ নম্বর সেক্টরের ১ নম্বর সড়কের মিলনের টিনশেডের বাড়িতে বোন-দুলাভাইয়ের সঙ্গে থাকত সে। এক পরিচিতের মাধ্যমে উত্তরার রাজলক্ষ্মী কমপ্লেক্সের একটি সুপার শপে ৭ হাজার টাকা বেতনে বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে চাকরি নেয়। সেখানেই আরিফের সঙ্গে পরিচয় হয় মেয়েটির। আরিফও বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করে। একসঙ্গে কাজ করতে গিয়ে মেয়েটির সঙ্গে আরিফ সখ্য গড়ে তোলে। পরে তাদের মধ্যে রাতে মোবাইল ফোনেও কথা হতো। অল্পদিনেই মেয়েটিকে পটিয়ে ফেলে আরিফ। প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে আরিফ মেয়েটির সঙ্গে ‘রুম ডেটিং’ করার জন্য ফন্দি আঁটে। বিষয়টি সে পূর্বপরিচিত বাবুকে জানায়। বাবু মেয়েটিকে নিয়ে তার নির্মাণাধীব ভবনে যেতে বলে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী আরিফ রাজলক্ষ্মী মার্কেটের পাশে নির্মাণাধীন একটি ভবনের দোতলায় নিয়ে যায়। সেখানে আরিফ প্রথমে মেয়েটিকে ধর্ষণ করে। পরে আসলাম ও হায়দার মেয়েটিকে ধর্ষণ করে। পরে অবশ্য র‌্যাব আরিফ বাবু ও আসলামকে গ্রেফতার করে। সুরভী, সুরমা বা স্কুলছাত্রী শুধু নয়, তাদের মতো প্রতিনিয়ত অসংখ্য মেয়ে প্রেমের ফাঁদে পড়ে সম্ভ্রম হারাচ্ছে। কখনো কখনো জীবনও দিতে হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছে, প্রত্যেককেই নিজে থেকে সচেতন হতে হবে। না জেনে না চিনে কারও সঙ্গে কোনো ধরনের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া ঠিক নয়।

পঠিত : ৫৮০ বার

মন্তব্য: ০