Alapon

আবারো চলছে বিভেদ তৈরির ষড়যন্ত্র


স্বাধীনতা একটি জাতির সবচেয়ে বড় অর্জন। আর বাঙালির কাছেতো এ স্বাধীনতা পরম পাওয়া। কারণ, স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়ে পশ্চিম পাকিস্তানিরা পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের এত বেশি নির্যাতন করেছিল যে বাংলার মানুষ তাদের হাত থেকে মুক্তি পেতে মরীয়া হয়ে ছিল। সেজন্যই পশ্চিম পাকিস্তানের কবল থেকে স্বাধীন হতে নিজের জীবন বিলিয়ে দিতেও দিধা করেনি বাংলার মানুষ।

স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়ে পশ্চিম পাকিস্তান সরকার বাংলার মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো কেড়ে নিয়েছিল। তারা কেড়ে নিয়েছিল অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ আমাদের সকল অধিকার। বাঙালিদের দেয়া হতো না শিক্ষার যথাযথ অধিকার, কেউ শিক্ষিত হলেও পেত না চাকরি, চাকরি পেলেও ছিল বেতন বৈষম্য। প্রতিবাদ করবেন সেই সুযোগও নেই। প্রতিবাদ করতে গেলেই বুক ঝাঁজরা করে দেবে গুলি।

আচ্ছা বলতে পারেন আমাদের ওপর কেন এমন নির্যাতন করেছিল পশ্চিম পাকিস্তানীরা। কেউ কি ভেবে দেখেছেন, একই দেশ একই ধর্ম হওয়া সত্বেও কেন একে অপরের শত্রু ছিল?

জবাব একটাই ‌‘ঐক্য না থাকা’। পুর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের মানুষ ছিল সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ভৌগলিক ও ভাষাগত ভাবে ভিন্ন মতের। ভারত ভাগের সময় শুধুমাত্র একই ধর্মের দিকটি বিবেচনা করে একটি দেশ গঠন করা হলেও দেশের মানুষগুলো যে নানা দিক থেকে আলাদা ধ্যান ধারণার সেটা সম্ভাবত কেউই ভাবেননি। ফলে এক দেশ হয়েছে ঠিক কিন্তু মানুষগুলো এক হতে পারেনি। যার ফলে কখনো হয়নি একে অপরের ভাব বিনিময়, হয়নি মতের মিল। মিলের পরিবর্তে দিনে দিনে দ্বন্দ্ব ঘনিভুত হতে হতে তা যুদ্ধ পর্যন্ত গড়ালো আর কেড়ে নিল শত শত প্রাণ।

যাইহোক যুদ্ধের পর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। আমরা মুক্তি পেয়েছি পাকিস্তানীদের নির্যাতন থেকে। গড়তে শুরু করেছি সোনার বাংলা। কিন্তু আফসোসের বিষয় হলো স্বাধীন বাংলার মানুষগুলো ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও ভৌগলিকভাবে একমত হলেও একটি শ্রেণি এদেশের মানুষের মাঝে আবারো বিভেদ তৈরি করতে মরীয়া হয়ে আছে। এখন নতুন করে স্বাধীনতার স্বপক্ষের বিপক্ষের শক্তি নামে দেশে দুটি শক্তি তৈরি করে আবারো আরেকটি যুদ্ধ বাঁধাতে ইন্দন দিচ্ছে দেশবিরোধী একটি চক্র। স্বাধীনতার প্রায় অর্ধশত বছরে এসে তারুণ্য যখন এদেশের হাল ধরতে যাচ্ছে ঠিক তখন তুলে আনা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সময়ের স্বপক্ষের-বিপক্ষের শক্তি নামের তকমা। অথচ বর্তমানে দেশজুড়ে নেতৃত্ব দেয়া তরুণদের অধিকাংশের জন্মই মুক্তিযুদ্ধের পর। যারা জন্ম থেকে বেড়ে উঠেছে এইদেশে, মনপ্রাণ দিয়ে ভালোবেসেছে এ দেশকে। অথচ সেইসব তরুণদের নিয়ে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। যা প্রমাণ করে এদেশে উন্নতি ঠেকাতে এবং আবারো একটি যুদ্ধ বাঝাতে কাজ করছে একটি দেশবিরোধী চক্র।

তাই আজকের তারুণ্যকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমরা কি নিজেদের মাঝে আরেকটি যুদ্ধে জড়াবো নাকি সবার সমন্বয়ে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠন করবো। আসুন আমরা ভেদাভেদ ভুলে ‘স্বাধীনতা ঐক্যের বিভক্তির নয়’ এই স্লোগানকে বুকে ধারণ করে সবার সমন্বয়ে একঝাঁক সৎ, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক নাগরিক তৈরির মাধ্যমে গড়ে তুলি আগামীর সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ।

 'সেরা ব্লগার প্রতিযোগিতা-২০১৮'



পঠিত : ১০১৫ বার

মন্তব্য: ০