Alapon

ধর্ষণের অনুঘটক: পোষাক নাকি মানসিকতা?

নাস্তিক্যবাদী শক্তির ধারণা, তারা এ দেশের মানুষদের মন-মস্তিষ্ক-মানসিকতা কলুষিত করতে সক্ষম হয়েছে। এখন বাকী আছে শুধু ইসলামের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য যুদ্ধ ঘোষণা। 
সম্প্রতি ‘পোষাক নয়; ধর্ষণের জন্য মানসিকতাই দায়ী’ এই শ্লোগানে শুরু হয়েছে তাদের নতুন এজেন্ডা। ধর্ষণের বর্তমান পরিসংখ্যানে তারা মোটেই খুশী নয়; বরং নগ্নতা বেহায়াপনা ও উলঙ্গপনাকে জাতীয়ভাবে একটি দার্শনিক ও নৈতিক!! ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এবার তারা উলঙ্গ হয়েই যেন মাঠে নেমেছে। 
ওদের কাছে আমাদের কয়েকটি প্রশ্ন: 
১. মানুষ কি বিকৃত মানসিকতা নিয়ে জন্ম নেয়? 
বিকৃত মন-মানসিকতার কারণগুলো উদঘাটন করার জন্য এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর জানা জরুরী। নইলে শুধু মরা গাছের মাথায় পানি ঢেলে কোন লাভ হবে না। 
যদি জবাব হয়, হ্যাঁ, তবে আমাদের প্রশ্ন: জন্মগত বিকৃত রুচি পরিশুদ্ধকরণের উপায় কি ব্যক্তি স্বাধীনতার নামে এমন পোষাক পরা, যা কিছু না পরারই নামান্তর? পোষাক স্বাধীনতা মানে কি দেহ প্রকাশ? নাকি দেহ আবৃতকারী শালীন পোষাক নির্বাচনের স্বাধীনতা? নাস্তিকরা হয়ত বলবে,দেহটি আমার। যত্রতত্র প্রকাশ করা আমার অধিকার। উত্তরে আমরা বলবো, এ কথাটি বলার জন্যইতো তোমাদের এত ভনিতা। এটি সরাসরি না বলে এত ঘুরিয়ে পেছিয়ে বিষয়টিকে জটিল করতে চাচ্ছ কেন? পশুর মত দেহ প্রকাশ যদি তোমাদের অধিকার হয়, তাহলে তোমাদের উচিত মানব সমাজ ছেড়ে পশুদের সাথে বসবাস করা। তাছাড়া, ওটা যদি তোমাদের অধিকার হয়, তবে হিজাব পরাটাও মুসলিম নারীর অধিকার। তাদের হিজাব নিয়ে ব্যঙ্গ করা তথা তাদের অধিকারে হস্তক্ষেপ করার অধিকার তোমাদের কে দিয়েছে?

সত্যি করে বলোতো , তোমরা তোমাদের দেহের মালিক কি করে হও? তোমরা কি নিজেদেরকে নিজেরা সৃষ্টি করেছ? যে সব মৌলিক উপাদান গ্রহণ করে দেহ বেঁচে থাকে, সেুগলোর একটিও কি তোমাদের সৃষ্টি না কি তোমাদের বাবা বা নেতা-নেত্রীদের সৃষ্টি? বরং এ সবই মহান আল্লাহর সৃষ্টি। তাই এগুলোর মালিকও হচ্ছেন মূলত আল্লাহ। আর তিনিই নারীদেরকে জাহিলিয়্যাতের নগ্নতা নিয়ে চলাফেলা করতে নিষেধ করেছেন। 
وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى
“তোমরা মূর্খতা যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না” (সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৩৩)।
যারা পর পুরুষের সামনে এমন পোষাক পরে, যা বিবস্ত্র থাকারই নামান্তর, যেমন, প্রচন্ড টাইট, অত্যন্ত পাতলা কিংবা আংশিক পোষাক ইত্যাদি, তাদের ব্যাপারে রাসূল (স.) জাহান্নামী হওয়ার কঠোর সতর্ক বাণী উচ্চারণ করে বলেছেন: 
نساء كاسيات عاريات 
“ঐ সব নারী (জাহান্নামী) যারা পোশাক-পরিচ্ছদ পরিধান করা সত্ত্বেও উলঙ্গ” (মুসলিম)। 
যদি তোমরা বলো, আমরা আল্লাহ ও রাসূল (স.) কে মানি না, কারণ আমরা খাটি নাস্তিক। তাহলে বলবো, তোমাদের পথ আর আমাদের পথ এক নয়। আমরা মুসলমান। তোমরা নাস্তিক। তাই আমাদের ধর্ম, ধর্মীয় আচারাদি নিয়ে তোমাদের কথা বলার কোন অধিকার নেই। তোমরা আমাদের দৃষ্টিতে ইয়াহুদী, খৃষ্টান ও অন্যান্য বিধর্মীদের মতই একটি অমুসলিম গোষ্ঠী। তাই আমাদের ধর্ম নিয়ে কোন প্রকার বিরূপ মন্তব্য করার আগে তোমাদের জিহ্বাগুলো সংযত রাখার চেষ্টা কর। অন্যথায়, নাস্তিক্যবাদ গ্রহণ করে তোমরা একদিকে মুরতাদ হওয়ার অপরাধে অভিযুক্ত হবে, অন্যদিকে অন্য ধর্মে আঘাত করার কারণে ধর্ম অবমাননাকারী হিসেবে চিহিৃত হবে। দুটোই চরম দন্ডনীয় অপরাধ। তাই নয় কি? 
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, নাস্তিকরা আবার মাঝে মধ্যে নিজেদের সমর্থনে কুরআন-হাদীস ও মুসলিম মনিষীদের উক্তিও উল্লেখ করার চেষ্টা করে। তবে তা অনেকটা ঐ দুই ধর্মনিরপেক্ষবাদীর ঝগড়ার মত। একজন বললো, আরে জানো আমাদের কুমিল্লার কথা কুরআনেও আছে। অন্যজন বললো, তাই নাকি? কোথায়? সে বললো, সূরা মুযাম্মিলে: “কুমিল্লাইলা ইল্লা কলিলা”। তখন অন্যজন বললো, আরে মিয়া, আমাদের ঢাকার কথাতো কুরআনে দুই বার আছে? সূরা আল-ফাজরের মধ্যে পড় নি? “কাল্লা ইজা দুক্কাতিল আরদু দাক্কান দাক্কা”।

আর যদি তোমাদের উত্তর হয়: না, মানুষ বিকৃত রুচি নিয়ে জন্ম নেয় না। তাহল বলবো, এটিই সত্য কথা। প্রত্যেক মানব শিশুই জন্ম নেয় নিষ্পাপ হয়ে। তার স্বভাবের মধ্যে প্রোথিত থাকে ফিতরাত তথা ইসলাম, ঈমান ও সত্যকে গ্রহণের স্বহজাত শক্তি। জন্মগতভাবে প্রত্যেক মানব শিশুই পরিশুদ্ধ, নিষ্পাপ ও নিষ্কলংক। 
তাহলে সে কেন বিধর্মী হয়? হয় পাপাচারে নিমজ্জিত? অর্থাৎ ধর্মীয় ও নৈতিকভাবে বিকৃত মানসিকতাসম্পন্ন।
এর উত্তর দিয়েছেন মহানবী (স.) দেড় হাজার বছর আগে। দুটো হাদীস এখানে উল্লেখযোগ্য: 
ক. ধর্ম বা বিশ্বাসগত বিকৃতি প্রসঙ্গ:
كُلُّ مَوْلُودٍ يُولَدُ عَلَى الْفِطْرَةِ فَأَبَوَاهُ يُهَوِّدَانِهِ أَوْ يُنَصِّرَانِهِ أَوْ يُمَجِّسَانِهِ 
“প্রত্যেক মানব সন্তান ফিতরাতের উপর ভূমিষ্ঠ হয়। অতঃপর তার মা-বাবা তাকে ইয়াহুদী বানায়; কিংবা খ্রিষ্টান বানায় কিংবা অগ্নীপুজারী বানায়” (বুখারী)। 
অর্থাৎ পরিবেশ-প্রতিবেশ দ্বারা মানুষ আক্রান্ত হয়। কুফরবান্ধব পরিবেশে বড় হলে সে কাফির হয় আর ঈমানবান্ধব পরিবেশে প্রতিপালিত হলে সে তার মৌলিক অবস্থার উপরই রয়ে যায়। 
খ. নৈতিক বিকৃতি প্রসঙ্গ: 
"كتب على ابن آدم نصيبه من الزنا، مدرك ذلك لا محالة: العينان زناهما النظر، والأذنان زناهما الاستماع ، واللسان زناه الكلام، واليد زناها البطش، والرجل زناها الخطى، والقلب يهوي ويتمنى ، ويصدق ذلك الفرج أو يكذبه" متفق عليه. واللفظ لمسلم. 
রাসূল (স.) বলেন, “আদম সন্তানের জন্য ব্যভিচারের একটা অংশ নির্দিষ্ট করা আছে। এটা সে নিঃসন্দেহে পাবেই। (অর্থাৎআদম সন্তানের ব্যভিচার নানাভাবে হয়)। দুই চোখের যেনা (আজনাবী/পরস্ত্রীর) প্রতি নজর করা; দুই কানের যেনা হলো (যৌন উত্তেজক) কথবার্তা শ্রবণ করা; মুখের যেনা হলো (ঐ সব বিষয়ে) আলোচনা করা; হাতের যেনা (আজনাবী নারী) স্পর্শ করা; পায়ের যেনা ঐ উদ্দেশে যাতায়াত করা। অন্তর ঐ কাজের প্রতি কুপ্রবৃত্তিকে জাগ্রত করে এবং তার আকাঙ্খা সৃষ্টি করে। আর যৌনাঙ্গ এমন অবস্থা সত্যায়িত বা মিথ্যা প্রতিপন্ন করে” (বুখারী, মুসলিম)।

তাহলে বোঝা গেল, ধর্ষণ বা ব্যভিচার করার মানসিকতা একদিনে তৈরি হয় না। বরং তা অনেকগুলো কার্যকারণের বিষাক্ত ফল। সেগুলোকেই মূলত: হস্ত-পদ, চক্ষু ইত্যাদির যিনা বলা হয়েছে। অনেকগুলো ধাপ পেড়িয়ে মানব মন ব্যভিচারের জন্য উম্মাদ হয়ে উঠে। সিনেমা, নাটক, নেটের অশালীন নারীদহেকে তো আর সে হাতের নাগালে পায় না, যারা তার মধ্যে পাশবিক ক্ষুধা জাগিয়ে দিয়ে তাকে পরিণত করে হিংস্র হায়েনায়। ফলে তার হিংস্র থাবার শিকার অসংখ্য নিরীহ নারীরাও। কারণ, তার ঐ উম্মাদনা শিশুকে যুবতী থেকে কিংবা ভদ্র বোরখা পরিহিতা নারীকে বেপর্দা নারী থেকে আলাদা করে দেখে না। তার মধ্যে তখন যৌন বিস্ফোরণ ঘটে; যৌন জীবানু এইডসের মত তার নৈতিকতা প্রতিরক্ষাকারী সমস্ত প্রতিরোধ ক্ষমতা নিঃশেষিত করে দেয়। যদিও তুলনামূলক পর্যবেক্ষণে প্রমাণিত হয়েছে, যারা সঠিক ভাবে হিজাব ধারণ করে তারা খুব কমই ধর্ষিতা বা ইভটিজিংয়ের শিকার হয়। অর্থাৎ পোষাকের শালীনতা নারী প্রতিরক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। এ দিকে ইঙ্গিত করেই আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন: 
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُل لِّأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاءِ الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِن جَلَابِيبِهِنَّ ۚ ذَٰلِكَ أَدْنَىٰ أَن يُعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ ۗ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا (59)
“হে নবী! আপনি অাপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন নিজেদের উপর চাদর টেনে (নিজেদেরকে আবৃত করে) নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু” (সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫৯)। (অর্থাৎ তারা যে শালীন, চরিত্রবান, আল্লাহ ওয়ালা তা সহজে চেনা যাবে এবং সে কারণে তাদেরকে যৌন হয়রানী করা হবে না।)।

ঐ সব কার্যকারণ কী? যা মানুষের সুন্দর, পবিত্র ও ঈমানী শক্তিসম্পন্ন/ফিতরতী মানসিকতাকে কলুষিত করে মানুষকে হিংস্র হায়েনায় রূপান্তিরিত করে? সেগুলো হচ্ছে:

ক. মিডিয়ার বেহায়াপনা:
সিনেমা, নাটক, ইন্টারনেট, পত্র-পত্রিকা, ম্যাগাজিনে নগ্নতার মাত্রা যে হারে বাড়ছে, ধর্ষণের মাত্রাও সেই হারে বাড়ছে। সিনেমা, নাটকে নারীদের অঙ্গ প্রদর্শনীমূলক আটসাট, খাটো, মিহি-পাতলা পোষাক, নায়ক-নায়িকার যৌনাশ্রয়ী অন্তরঙ্গ দৃশ্য, অশ্লীল সংলাপ, পথে-ঘাটে দেয়ালে-খুটিতে এঁটে দেয়া আপত্তিকর উত্তেজক পোস্টার – শিশু, যুবক তথা পুরুষের মন-মানসে এগুলোর প্রতিক্রিয়া যে কত মারাত্মক, কোন বিবেকবান মানুষ কি তা অস্বীকার করতে পারে? 
সত্যি কথা হলো, নগ্নতার সাথে পাল্লা দিয় বাড়ছে নারী নির্যাতন- এ কথা নাস্তিক ও প্রকৃত মানবতাবিরোধী অপরাধীরা ছাড়া সবাই স্বীকার করবে। এটাই প্রমাণ করে এগুলো কত ভয়ানক অনুঘটক। এ জন্যই যখন দেখি সিনেমা ও মিডিয়া কর্মীরা নগ্ন পোষাকের পক্ষে ওকালাতি করে শুধু মানসিকতাকেই দোষারোপ করে, তখন বড্ড হাসি পায়। যুবকদের পবিত্র মন-মানস ধ্বংস করে এখন ওরা এসেছে মায়া কান্না দেখাতে। হায়রে মায়া কান্না! যারা সমাজকে তিলে তিলে ধ্বংস করছে, তারা এখন মহাউদ্ধারকারীর ভূমিকায়।। এদের ব্যাপারেই কুরআনে বলা হয়েছে: 
وإذا قيل لهم لاتفسدوا في الأرض قالوا إنما نحن مصلحون 
“আর যখন তাদেরকে বলা হয় যে, দুনিয়ার বুকে ফাসাদ সৃষ্টি করো না, তখন তারা বলে, আমরা তো সংশোধনের পথ অবলম্বন করছি” (সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১১)।
মূলত এই সব নগ্নতাশ্রয়ী লজ্জা-শালীনতাহীন উগ্র যৌনএইডসগ্রস্থ নায়ক-নায়িকা, অভিনেতা-অভিনেত্রীবৃন্দ এবং যে সব টিভি চ্যানেল ও স্পনসারকারী প্রতিষ্ঠান তাদের দোসর- ধর্ষকদের শাস্তি দেয়ার আগে ওদেরকে শাস্তি দেয়া দরকার। 
খ. নৈতিক শিক্ষার অভাব: 
যে শিক্ষা ব্যবস্থা কুরআন -সুন্নাহর উপর প্রতিষ্ঠিত নয়; যেথায় তাওহীদ, পারলৌকিক জবাবদিহিতা, জান্নাত-জাহান্নামের ধারণা, বিশ্বনবীর সুমহান আদর্শ উপেক্ষিত ও নিষিদ্ধ, সেই শিক্ষার মধ্যে কোন নৈতিকতা থাকতে পারে না। তা সম্পূর্ণরূপে ধর্মনিরপেক্ষ সিকিউলার শিক্ষা। ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষের মৌলিক পরিচয় তার পাশবিকতায় নয়; বরং নৈতিকতাই হচ্ছে মানুষের পরিচয়। 
‘মানুষ নিছক বস্তুবাদী প্রাণী। পশুত্বই তার মূল পরিচয়। পাশবিকতার বিকাশ অনুপাতে তার জীবনের সফলতা-ব্যর্থতা নির্ণিত হয়’। ফ্রয়েডীয় এই বস্তুবাদী দর্শনাশ্রয়ী ভোগবাদী জাতি গঠনের শিক্ষাব্যবস্থা থেকে ভালো মানুষ সৃষ্টি হয় না; ঠিক নপুংশকের যেমন সন্তান হয় না। তা থেকে উৎপাদিত হয়ে ধর্ষক, ঘুষখোর, সুদখোর ও হারামখোর। যেমন মেকিয়াভেলীর সুবিধা ও স্বার্থবাদী রাষ্ট্রদর্শন থেকে তৈরি হয় খুনী ও স্বৈরাচারী শাসক গোষ্ঠী। পরিমলরা সেই নৈতিকতাহীন শিক্ষার প্রোডাক্ট। ধর্ষণের ইতিহাসে এ জন্য মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের নাম দূরবীক্ষণ দিয়েও খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। 
গ. অপরাধের শাস্তি ও দন্ড কার্যকর না হওয়া:
ধর্ষণোত্তর হত্যা কান্ড এখন যেন নিত্তনৈমত্তিক। প্রতিবছর ধর্ষণজনিত অপমৃত্যুর ঘটনা হাজার হাজার। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এগুলোর কোন বিচার নেই। বরং বিচার প্রার্থনার কারণে এইতো সেদিন বিউটি নামক তরুনীকে পুনরায় একই ধর্ষক কর্তৃক ধর্ষিতা হয়ে জীবন দিতে হয়েছে (http://www.banglatribune.com/country/news/308417)। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ধর্ষকরা রাজনৈতিক আশ্রয়ে-প্রশয়ে দাপটের সাথে অপকর্ম চালিয়ে যায়। ভিকটিমদের আর্তনাদ আকাশে-বাতাসে হারিয়ে যায়। তাদের বুকফাঁটা কান্না কেউ শোনে না। নারীবাদিরা ব্যস্ত নারীর পোষাক স্বাধীনতা নিয়ে। ব্যস্ত পুরুষের সমান্তরাল করে নারীকে সুকৌশলে ভোগবাদী পুরুষের অনন্ত লালসার হাতে তুলে দিতে। একই দেশের স্বজাতির হাতে ধর্ষিতাদের চিৎকার শাহবাগীদের কানে পৌঁছায় না।

ঘ. পারিবারিক মূল্যবোধের অবক্ষয়:
বস্তুবাদ ভোগবাদময় জীবনধারা ও প্রযুক্তির কাছে মানুষ এখন পরাজিত। ঘরে-বাহিরে সর্বত্র একই অবস্থা। সন্তানদেরকে সঠিক মূল্যবোধ ও ধর্মীয় শিক্ষায় প্রতিপালনের চেয়ে এখন অধিকাংশ ঘরে চলছে বিজাতীয় সংস্কৃতির চর্চা। আরবী না জানলে কী হবে? বাচ্চারা এখন হিন্দী খুব ভালো বোঝে ও জানে। ইসলামের চেয়ে এখন তাদের কাছে পাশ্চাত্যমুখী জীবনধারা অনেক প্রিয়। যা মূলত মুনাফিকীর একটি চরিত্র। যে ব্যাপারে স্বয়ং আল্লাহ বলছেন: 
وَيَقُولُونَ لِلَّذِينَ كَفَرُواْ هَٰؤُلَآءِ أَهْدَىٰ مِنَ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ سَبِيلًا النساء: 51
“....আর কাফিরদেরকে বলে, এরা মুসলমানদের তুলনায় অধিকতর সরল সঠিক পথে রয়েছে” (সূরা আন-নিসা, আয়ত: ৫১)। 
পারিবারিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের ফসল: বোয়দাব ও ধর্ষক প্রজন্ম। 
ঙ. হিজাব ব্যবস্থার অবমূল্যায়ণ: 
পৃথিবীর বুকে মানব অস্তিত্ব রক্ষণা-বেক্ষণের জন্য আল্লাহ নারী-পুরুষের মধ্যে পারস্পরিক আকর্ষণ সৃষ্টি করেছেন এবং তা চরিতার্থ করার জন্য বিবাহ ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছেন। বিবাহ বহির্ভূত পন্থায় এই আকর্ষণ যেন তাদেরকে বিপদগামী করতে না পারে তথা ইভটিজিং, ধর্ষণের মত অশ্লীলতা বেহায়াপনায় তাদেরকে ঠেলে দিয়ে ধ্বংস করতে না পারে, তাই আল্লাহ হিজাবের বিধান দিয়েছেন। যা মূলত: নারী-পুরুষের সতীত্ব ও চরিত্র সংরক্ষণের অদৃশ্য নিরাপত্তা বেষ্টনীমাত্র। পৃথিবীতে যে কোন মূল্যবান বস্তু সংরক্ষণার্থে লুকিয়ে রাখা হয়। যেমন, টাক-পয়সা, স্বর্ণালংকার ইত্যাদি। 
আল্লাহর দেয়া হিজাব ব্যবস্থাকে আজ নাস্তিক ও মুরতাদগণ কটাক্ষ করছে। ভাবখানা এমন যে তারা যেন স্বয়ং স্রষ্টার চেয়ে বেশি বোঝে। মূলত এ রকম দাবী করা বা এ জাতীয় ধারণা পোষণ করা বা আল্লাহর বিধানকে অযৌক্তিক বলা একমাত্র ইবলিসের জন্য শোভা পায়। যে কারণে সে বিতাড়িত শয়তানে পরিণত হয়েছিল। (হিজাব নিয়ে নিম্নের আলোচনাটি শোনার অনুরোধ রইল https://www.youtube.com/watch?v=O8bgeYzHcd0 )। 
তাছাড়া, হিজাব পরিধান করা, আল্লাহর নির্দেশ। ধর্ষিতা হোক বা নাই হোক। আর হিযাবের অনেকগুলো উপাদানের মধ্যে পোষাকই হচ্ছে অন্যতম। বাকীগুলো সহায়ক। তাই পোষক নয়, শুধু মানসিকতাই দায়ী ধর্ষণের জন্য; কিংবা নারী তার ইচ্ছামত পোষাক পরবে হোক তা হিজাব পরিপন্থী, এ জাতীয় কথা সরাসরি কুরআন বিরোধী কথা। একমাত্র কাফিরের পক্ষেই এ কথা সম্ভব। আল্লাহর আদেশ-আইন বিরোধী কথা ঈমান বিধ্বংসী অপরাধ।

চ. বিজ্ঞাপনে যৌন সুড়সুড়ি: 
নারীর পোষাক, অঙ্গ-প্রতঙ্গ, কন্ঠঃস্বর, গতি-স্থিতী সবকিছুর প্রতি রয়েছে পুরুষের আকর্ষণ ও গভীর কৌতূহল। বিশেষ করে যাদের মধ্যে আল্লাহ ভীতি নেই, ধর্মীয় শিক্ষা নেই, নীতি নৈতিকতার অনুশীলন নেই তারা এর দ্বারা দ্রুত আক্রান্ত হয়। মানুষের এই দুর্বলতা নিয়েই ব্যবসা করে মূলত: অধিকাংশ পণ্য নির্মাতা, তথা দেশি –বিদেশী ব্যবসায়ী কোম্পানীগুলো। যাদের মূখ্য অবলম্বন হলো, যুব সমাজের মধ্যে ঘুমিয়ে থাকা যৌন বাসনায় সুরসুরি দিয়ে নিজেদের অনৈতিক ব্যবসায় মুনাফার জোয়ার সৃষ্টি করা। বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপনগুলোই এর স্পষ্ট প্রমাণ। “দেখিয়ে দাও অদেখা তোমায়” মার্কা বিজ্ঞাপন ছাড়া কি এখন কোন এড আছে? এরপরও যুবকের মানসিকতা বিশুদ্ধ থাকবে, তা কল্পনা করা যায়?

ছ. যুবশক্তির রাজনৈতিক ব্যবহার: 
এ ছাড়া অবৈধভাবে ক্ষমতালিপ্সু কিছু রাজনৈতিক নেতা-নেত্রী যুবকদেরকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করার লক্ষ্যে তাদের হাতে মদ-নারী-অস্ত্র তুলে দেয়। ফলে তাদের নৈতিকতা নেমে আসে সর্বনিম্ন স্তরে। যা পরিণামে ধর্ষণ, হত্যা ও দুর্নীতির আকারে মহামারির মত ছড়িয়ে পড়ে।
জ. ব্যক্তি স্বাধীনতার নামে

অশ্লীলতার চর্চা: 
বিশ্বজুড়ে এখন ব্যক্তিস্বাধীনতার নামে চলছে ভয়াবহ অশ্লীলতার চর্চা। ব্যক্তি স্বাধীনতা, আমার অধিকার, আমার মন যা চায়- এসব কথার অর্থ কি যা খুশী তা ই করা? এমনটিই যদি হয়, তাহলে আর আইন-আদালাত কী দরকার? সবাই তার ইচ্ছামত যা খুশী তাই করুক। মূলত পোষাকের বিষয়টিকে একশত ভাগ ব্যক্তিগতও বলা যায় না। কারণ, এর সাথে সমাজের অন্যান্য মানুষের ঈমান আমলের সম্পর্ক আছে। যেমন, ধরুন একজন মহিলা শরীর অনাবৃতকারী পোষাক পরলো। অারেকজন পথিক তার দিকে তাকিয়ে তার শরীর দেখলো। তাতে কি দর্শকের গুনাহ হবে না? এই গুনাহের জন্য কি ঐ মহিলার কোনই দায় নেই? ইউরোপ-আমেরিকায় ব্যক্তি স্বাধীনতার নামে এখন সমকামিতার মত অশ্লীলতাও বৈধ করা হয়েছে!!!!হায়রে, মানুষ। আর কত নীচে নামতে ইচ্ছা করছে? ধর্ষকও বলতে পারে, এটি আমার ব্যক্তি স্বাধীনতা? মেয়েটির যেমন মন চেয়েছে মিনি স্কার্ট পরতে, তেমনি আমার মন চেয়েছে, তাকে ধর্ষণ করতে!!! তোমাদের এই ব্যক্তি স্বাধীনতা কি আমাদের দেশের একটি রাজনৈতিক দলের চারটি শব্দের শ্লোগানের মত? যা সবকিছুকেই জায়িয বানিয়ে দেয়।

এই কারণগুলো একাকার হয়ে এমন এক পরিবেশ তৈরি করেছে, যেখানে নারীর শালীন পোষাক হয়েছে উপেক্ষিত, চালচলন হয়েছে উগ্র-উত্তেজক অবাঞ্জিত, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশার ব্যবস্থা হয়েছে অবারিত, ক্ষুধার্ত হায়েনার দল হয়েছে যৌনাবেগের উত্তাল উদ্যমে উদ্ধত। তাই সেখানে চক্ষুগুলো এখন অনিয়ন্ত্রিত, রসনাগুলো অসংযত, হস্তগুলো হারামের প্রতি প্রসারিত, পাগুলো নিষিদ্ধ পথে চলতে লালায়িত। এ সবের চূড়ান্ত পরিণামে মানসিকতা কলুষিত, বিকৃত ও যিনার মহামারিতে আক্রান্ত। ধর্ষণরূপে তা বাস্তবে হয়েছে আবির্ভূত।
২. রাস্তাঘাটের ময়লা-আবর্জনা ও কষ্টদায়ক জিনিসি থেকে নিজের পদযুগল হেফাজাত করার দুটো ব্যবস্থা হতে পারে। ক. দুনিয়ার সমস্ত রাস্ত-ঘাট ঝাড়ু দিয়ে পরিস্কার রাখা। খ. নিজের পায়ে জুতা পরিধান করা। বলুনতো কোনটি উত্তম? কোনটি সম্ভব? অবশ্যই দ্বিতীয়টি। প্রথমটি উত্তম হওয়াতো দূরের কথা; বরং তা সম্ভবপরও নয়। (জুতা আবিষ্কারের সেই কাহিনী আশা করি সবার মনে অাছে)। 
দুনিয়ার সব মানুষের মন ঠিক করার অসম্ভব চিন্তা না করে নিজের গায়ে শালীন কাপড় জড়িয়ে নিয়ে নিজেকে নিজে রক্ষা করার চেষ্টা করাই কি শ্রেয় নয়?
৩. ধন-সম্পদ, টাকা-পয়সা রক্ষণা-বেক্ষণের জন্য কেন সিন্ধুক, প্রহরী, সিসি ক্যামেরা, ব্যাংক-প্রতিষ্ঠান এত বিশাল আয়োজন? এ কথা কেন বলেন না যে, এ সবের কোন প্রয়োজন নেই। এসো আমরা মানুষের মনগুলো ঠিক করে ফেলি? 
৪. যারা আপনাদেরকে শিখিয়েছে, পোষাক নয়; মানসিকতাই দায়ী, তাদের দেশে নারীর কী অবস্থা খবর নিয়েছেন? সেখানেতো প্রতিটি মূহুর্তে নারী নিগ্রহের শিকার হচ্ছে, তা কি জানেন? তারাতো আধুনিকতা, উত্তরাধুনিকতার নামে মানুষের মন অনেক ঠিক করে ফেলেছে!!! তাহলে এ অবস্থা কেন? 
৫. যে সব নাস্তিক, নায়ক-নায়িকা এ সব উদ্ভট কথা বলছে, তাদের বাস্তব জীবনে কি সুখ আছে? তারাতো দেখা যায়, তাদের যৌন কেলেঙ্কারীর অন্ধকারময় ইতিহাস কে না জানে? তাদের দাম্পত্য জীবন বাস্তবে দুনিয়ার জাহান্নাম বলে ভুল হবে না। দু একজনের কথা বাদ দিলেই এটাই বাস্তবতা, তাই নয় কি? যথার্থই বলেছেন আল্লাহু সুবাহানাহু ওয়া তা‘আলা: 
إِنَّ الَّذِينَ يُحِبُّونَ أَن تَشِيعَ الْفَاحِشَةُ فِي الَّذِينَ آمَنُوا لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ
“নিশ্চয়ই যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে দিতে চায় ,তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়ায় ও পরকালে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি” (সূরা আন-নূর, আয়াত: ১৯)।

এক কথায় বলা যায়: 
এই দেশে আগেও তরুণ-তরুনী, নারী-পুরুষ ছিল। ছিল শিক্ষাঙ্গন, হাট-বাজার, শহর-নগর, রাস্তা-ঘাট। কিন্তু আজকের মত এত ধর্ষণ ছিল না। মানুষের মন-মগজ ছিল না আজকের মত দূষিত ও কলুষিত। কারণ, তখন: 
ক. মেয়েরা আজকের মত এত উত্তেজক পোষাক পরত না; 
খ. আজকের মত ইন্টারনেটের অপব্যবহার ছিল না।
গ. টিভির অনুষ্ঠান, সিনেমা-নাটকে আজকের মত এত মাখামাখি ও বেহায়াপনা ছিল না;
ঘ. আজকের মত এ দেশে এত নাস্তিক ছিল না;
ঙ. ইয়াবা ও অন্যান্য মাদকদ্রব্য এত সহজলভ্য ছিল না;
চ. ছিল না উদীয়মান প্রতিশ্রুতিশীল যুব সমাজের এতটা রাজনৈতিকায়ণ; 
ছ. ছিল না ভারত ও ইউরোপ -আমেরিকার ভোগবাদের এত অনুকরণ; 
জ. ছিল না বিজাতীয় সংস্কৃতির এত অাধিপত্য। 
অতএব, যারা বলে “ধর্ষণের জন্য শুধু মানসিকতাই দায়ী” তারাই মূলত বিকৃত মানসিকতায় আক্রান্ত।

সমাধান কোন পথে? 
কারণগুলো যেহেতু শনাক্ত হয়ে গেল, তাই সমাধানের পথ হয়ে গেল সহজ। এই সমাধানের নাম হলো ইসলাম। ইসলামের হিজাব ব্যবস্থা, শিক্ষা, মিডিয়া, পরিবার, রাজনীতি সর্বত্র ইসলামী মূল্যবোধ, নীতিমালা ও ভাবধারা লালনই দিতে পারে কাংখিত সমাধান। সর্বোপরি ব্যভিচার, ধর্ষণ নামক মহামারির প্রতিকারে ইসলামের দন্ডবিধি বাস্তবায়ন (একশত বেত্রাঘাত/পাথর নিক্ষেপে হত্যা) ই ধর্ষণ নামক ধ্বংসাত্মক সামাজিক ব্যাধি থেকে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রকে রক্ষার আসমানী ঔষধ। অন্যগুলো আসলে ঔষধ নয়; বরং সেগুলোই হচ্ছে মূল বিষ। আল্লাহ তুমি আমাদেরকে হিফাজাত কর। আমীন।

লিখেছেনঃ
প্রফেসর ড. বি. এম.মফিজুর রহমান আল-আযহারী।

পঠিত : ৮৭৬ বার

মন্তব্য: ০