Alapon

ধর্ষণের জন্য দায়ী আসলে কারা?

ধর্ষণের লজ্জায় গায়ে আগুন দিলো ১২ বছরের মেয়ে। শুধু লজ্জা পাই না আমরা। আমরা সেই আগুনেই আর একটু পরে আতশবাজি পোড়াবো।

এখন কেউ ধর্ষিতা হলেই হুজুরেরা ড্রেস এর বিষয়ে বলার আগেই হুজুর বিরোধীরা ড্রেসের কথা নিয়ে আসেন। ৯ বছরের শিশু ধর্ষণে ড্রেসের সম্পর্ক কোথায় তারা ভাবতে থাকেন।

কিন্তু আমি কোন হুজুরকে এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র ড্রেসকে দোষী করতে দেখি নি। তারা অনেক কারণ বলেন, এর মধ্যে একটি হচ্ছে ড্রেস, অন্যতম নয়! আমরা কখনও হুজুরদের কথা মনযোগ দিয়ে শোনার চেষ্টাটাও করি নাই। আমরা অপেক্ষায় থাকি কখন হুজুর ড্রেসের কথা বলবেন, অমনি আমরা হই হই করে উঠবো। হুজুর এর আগে পরে কি বলছেন সেইটা ধরার বিষয় না; ড্রেস নিয়ে বলছেন সেইটাই বিষয়।

গত ৭-৮ বছরে দেশে ধর্ষণের বিচার কতটা হয়েছে? কতটা সাজা কার্যকর হয়েছে? বাসের ভিতরে ধর্ষণ করে মেরে ফেলে দিয়ে পরদিন গাড়ি চালানো ড্রাইভার নিজে স্বীকারত্বি দেওয়ার পরেও কি আমরা বিচার করতে পেরেছি? তনুকে নিয়ে তো কম নাড়াচাড়া হয় নি। সোনার দোকানদারের সোনাও আমরা বাজেয়াপ্ত করবার চেষ্টা করেছি; শুধু বিচার করিনি।

গোল্ডফিসের ব্রেইন ওয়ালা জাতি শুধু মনে রাখে হুজুরেরা ড্রেসের কথা বলেছে; আর কিছু না।

প্রতিবছর আমরা নির্বাচন করি 'সেরা আবেদনময়ী নারী' কে ছিলেন। এই আবেদনটা কিসের আবেদন? সাবানার অভিনিত ভাত দে মুভির খিধার আবেদন? নাকি যৌন আবেদন? গান গুলির মিউজিক ভিডিও দেখেছেন কখনও? যৌনতা আনতে আনতে আমরা এখন আর যৌনতা দেখতে পাই না সেখানে; গানের কথাগুলিতেও আমরা যৌনতা শুনতে পাই না আর।

আজ থেকে ১০-১৫ বছর আগে যে দৃশ্য টিভি পর্দায় আসলে পরিবারের সবাই পর্দা থেকে মুখ সরাতো, এখন সেই দৃশ্যের নাচ মামাতো ভাইয়ের বিয়েতে মেয়ে নাচে, আর বাবা আর ভাই মিলে তা ফেসবুকে লাইভ করে। যৌনতাকে আমরা ঠেলে দেই সামনে, যেটার শুরটাই হয় কাপড় কে কতটুকু সরাতে পারে তা দিয়ে।

একটা মেয়ে যদি সিনেমার কাহিনির প্রয়োজনে ৬মাসের কারাতে-কুংফু ট্রেনিং নিয়ে সিনেমায় অভিনয় করে, তাকে আমরা 'সাহসী অভিনেত্রী' বলি না; যে কাপড়টা খুলতে পারে, তাকেই বলা হয় সাহসী অভিনেত্রী। সাহসী দৃশ্যে অভিনয় করা হয়েছে বলেই ধরা হয়।

ছেলেদের বডিস্প্রের বিজ্ঞাপনও বাদ যায় না; শেভিং ক্রিমেও লাগে মেয়ে মডেল। এবং সেখানের এক্সপ্রেশনের মধ্যে ৯৯.৯৯৯৯% ই থাকে যৌন আবেদনের।

যৌন আবেদন দিয়ে আমরা আমাদের চারিপাশ ভরিয়ে রেখেছি; আর যৌনতার পরিপুরণের জন্য আমরা বিয়েকে করে রেখেছি এতই কঠিন, যা ভাঙ্গা বেশীরভাগেরই কষ্টের সীমার বাইরে চলে যায়। ১২/১৩ বছরের ছেলে যখন যৌনতার সকল কিছু বুঝে, আমরা তাকে ২২ বছর পর্যন্ত বসে থাকতে বলছি। ২২ বছর বয়সে এসে বিয়ে করবা? মেয়েকে খাওয়াবা কি? এই প্রশ্ন সবার আগে। এই প্রশ্নে পড়ে ২৮-৩০ বছরের আগে আর বিয়েটা হয়ে ওঠে না কারওই।

লোভ দিতে দিতে তাকে আমরা পাকিয়ে ঝুনা করে ফেলছি; আর সুযোগ দিচ্ছিনা বৈধ কিছুর। ফলাফল; আমরা পাচ্ছি কিছু ধর্ষক। আর সেই ধর্ষকদের পক্ষ নিচ্ছে যাদের হাতে বিচার হওয়ার কথা তারাই। কোন ব্যবস্থা নাই।

ধর্ষণ হয়ে যাবার পর মনে হয়, দোষ শুধু হুজুরদের, তারা ড্রেসের কথা বলেছে; তাই ধর্ষণ হয়েছে; অন্য কোন কারণ নেই।

১২ বছরের মেয়েটা গায়ে আগুন দিয়েছে, সেই আগুনে আসেন আতশবাজি পুড়িয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানাই। আর তো মাত্র কয়েক মিনিট বাকি।

পঠিত : ৫৫৩ বার

মন্তব্য: ০