Alapon

বেকারত্ব বৃদ্ধিতে প্রশ্নবিদ্ধ সরকার

মে ২০১৭-এ বিবিএসের তথ্য মতে, বাংলাদেশে বর্তমান ছয় কোটি ২৬ লাখ শ্রমশক্তির মধ্যে ২৬ লাখ বেকার রয়েছে। অন্য দিকে, আইএলওর তথ্য মতে, বর্তমানে দেশে তিন কোটি লোক বেকার রয়েছে। বেকারত্ব বাড়ছে এমন ২০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১২তম। অন্য একটি বেসরকারি সংস্থার জরিপে দেখা গেছে, প্রতি বছর বাংলাদেশের ২২ লাখ কর্মকম লোক চাকরির বা কাজের বাজারে প্রবেশ করে। কিন্তু কাজ পান মাত্র ৭ লাখ লোক। অর্থাৎ দুই-তৃতীয়াংশ লোক কোনো কাজ পায় না।

জাতিসঙ্ঘের উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা দিন-দিন বাড়ছে। সংস্থাটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৯৫-১৯৯৬ সালে ১৫-২৪ বছর বয়সী বেকার যুবকের সংখ্যা ছিল ২৯ লাখ। ২০০৫-২০০৬ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩২ লাখ।
বিবিএসের ২০১৩-১৪ ও ২০১৫-১৬-এর এক জরিপ অনুযায়ী দুই বছরে ৫৪ লাখ লোক চাকরির বাজারে প্রবেশ করেছে। এর মধ্যে চাকরি পেয়েছে ছয় লাখ এবং বেকার ছিল ৪৮ লাখ।

বিবিএসের এক দশকের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় গত এক দশকে দেশে বেকারত্ব বাড়ছে ১.০৬ শতাংশ। অন্য দিকে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির হার কমছে ২ শতাংশ।
আমাদের দেশের টেকসই উন্নয়নের ল্যমাত্রা অর্জনের প্রধান শ্রমশক্তি ১৮-৩৫ বছর বয়সী জনগোষ্ঠী। কিন্তু জাতিসঙ্ঘের ইউএনডিপির তথ্য মতে, আমাদের দেশে ১৫-২৪ বছর বয়সী এক কোটি ৩২ লাখ লোক বেকার। যা আমাদের দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ও অর্থনীতির ক্ষেত্রে হুমকি স্বরূপ।

অন্য দিকে বাংলাদেশে শিতি বেকারের সংখ্যা দিন-দিন বাড়ছে। ইউজিসির তথ্য মতে, প্রতি বছর সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরসহ উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে বের হচ্ছে তিন লাখ শিক্ষার্থী । তাদের মধ্যে ৯২ হাজার ৭৪৭ জন স্নাতক (পাস), এক লাখ ২৮ হাজার ৪৮১ জন স্নাতক (সম্মান), ২১ হাজার ৩৮০ জন কারিগরি স্নাতক। এ ছাড়া ১৯ হাজার ৮৯৪ জন স্নাতকোত্তর ডিগ্রি, ২ হাজার ৩৮৫ জন স্নাতকোত্তর কারিগরি এবং এক হাজার ৭৬৩ জন এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ব্রিটিশ সাময়িকী ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী উচ্চশিা নিয়ে শ্রমবাজারে আসা চাকরি প্রার্থীদের প্রায় অর্ধেক বেকার থাকেন। এ সংখ্যা ৪৭ শতাংশের কাছাকাছি। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড এমপ্লয়মেন্ট রিসার্চ সেন্টারের কর্মসংস্থান ও শ্রমবাজার ২০১৭ শিরোনামে পরিচালিত সমীা প্রতিবেদনে বলা হয় বাংলাদেশে উচ্চ শিতি জনগোষ্ঠীর মধ্যে বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি। যার শিাগত যোগ্যতা যত বেশি তার বেকার থাকার সম্ভাবনা আরো বেশি।

যারা দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে তাদের মধ্যে বেকারত্বের হার ৭.৫ শতাংশ। অন্য দিকে যারা অনার্স-মাস্টার্স পাস তাদের মধ্যে বেকারত্বের হার ১৬.৪ শতাংশ। সংস্থাটির প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, উচ্চ মাধ্যমিক পাস বেকারের সংখ্যা ২০১০-এর তুলনায় ২০১৩তে কমে গেছে। কিন্তু উচ্চ শিতিদের মধ্যে বেকারত্বের হারটা বেড়ে গেছে। ২০১০ সালে অনার্স-মাস্টার্স পাস বেকারের হার ছিল ৯.৯ শতাংশ কিন্তু ২০১৩ তে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৬.৪ শতাংশ। ২০১৭ তে সেই হার ২০ শতাংশে পৌঁছার কথা।

পুরো পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় দেশে দিন দিন শিতি, অশিতি বেকারের সংখ্যা বেড়েই চলছে। এভাবে বেকারের হার দিন দিন বাড়তে থাকলে আমাদের দেশের অর্থনীতি যেমন ভঙ্গুর হয়ে পড়বে তেমন করে দেশের মধ্যে সামগ্রিক অপরাধ পাল্লা দিয়ে বাড়তেই থাকবে। একুশ শতকের বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বেকারত্ব। এই চ্যালেঞ্জ সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে নিয়ন্ত্রণে নিতে পারলে একটি টেকসই উন্নয়নের পথে পরিচালিত হবে একুশ শতকের বাংলাদেশ। অন্যথায় এই বেকারত্ব দেশের অর্থনীতিকে ভঙ্গুর করার মাধ্যমে এ দেশেকে বিশ্ব দরবারে একটি তলাবিহীন ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে ছাড়বে। যার দায় তখন এদেশের বর্তমান ক্ষমতাশীলরা এড়াতে পারবেন না।

(সেরা ব্লগার প্রতিযোগিতা'১৮)

পঠিত : ৭৬৭ বার

মন্তব্য: ০