Alapon

ডিভোর্স কোনো সমাধান নয়

ডিভোর্স বা তালাক এখন দেশব্যাপী মহামারী আকার ধারণ করেছে। চুন থেকে পান খসতেই অনেকে দাম্পত্য জীবনের ইতি টানতে দ্বিধাবোধ করেন না। এরপর নতুন জীবনে পথ চলতে শুরু করলেও এর প্রভাব সারা জীবন ভোগ করতে হয় তাদের। একটা ডিভোর্সে দু’জন মানুষ আলাদা হলেও এর কঠিন প্রভাব পড়ে সন্তানদের ওপর। ডিভোর্সের সব কষ্ট তারা ভোগ করতে থাকে। আর দু’জনের পরিবার ও সমাজে এর প্রভাব তো আছেই। শুধু ঢাকা সিটি করপোরেশনের তালাকের পরিসংখ্যানে কেউ চোখ বুলালে আঁতকে উঠবেন। করপোরেশনের তথ্য মতে, ২০১০-১৬ সাল পর্যন্ত সর্বমোট তালাকের সংখ্যা ৫২ হাজার। এর মধ্যে ২০১০ সালে ঘটে ৫৫০০, ২০১১ সালে ৫৩২২, ২০১২ সালে ৭৯৯৫, ২০১৩ সালে ৮২১৪, ২০১৪ সালে ৮২১৫, ২০১৫ সালে ৯০০০ ও ২০১৬ সালে হয় ৬০০০টি।

এই তালাকের মধ্যে ৭০.৮০ শতাংশ নারী তালাকের জন্য প্রথমে আবেদন করেছেন। অন্য দিকে মাত্র ২৯.১৫ শতাংশ পুরুষ প্রথমে আবেদন করেছেন তালাকের জন্য। পরিসংখ্যানে আরো বলা হয়েছে, এখনো ৪৯ হাজার তালাকের আবেদন বিচারাধীন রয়েছে। পরিসংখ্যান ঘাঁটলে দেখা যায়, সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে ডিভোর্সের সংখ্যা বেড়েই চলছে। দেখা যায়, ২০০০ সালে ডিভোর্সের ঘটনা ঘটে ২৭৫৩, ২০০১ সালে ২৯১৬, ২০০২ সালে ৩০৭৩, ২০০৩ সালে ৩২০২, ২০০৪ সালে ৩৩৩৮, ২০০৫ সালে ৫৫২৫, ২০০৬ সালে ৬১২০, ২০০৭ সালে ৭২০০, ২০০৮ সালে ৭৭৭৮ এবং ২০০৯ সালে ৭৭০৪ টি।

খুঁজতে গেলে এর নেপথ্যে অনেক কারণ চলে আসে, যেমন- স্বামী বা তার পরিবার কর্তৃক যৌতুক দাবি, স্বামী-স্ত্রী উভয়ের দ্বারা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, মাদকাসক্তি, পরকীয়া, মতের অমিল, সন্দেহ প্রবণতা, সোশ্যাল মিডিয়ায় একাধিক সম্পর্কে জড়ানো এবং ধর্মীয় অনুশাসন মেনে না চলা প্রভৃতি। এসব সমস্যা দূর করতে যেমন সামাজিক মূল্যবোধ ও সচেতনতা বাড়ানো দরকার, তেমনি ব্যক্তিপর্যায়ে নৈতিক মূল্যবোধ বাড়ানো প্রয়োজন।
দাম্পত্য জীবনে সমস্যা থাকা স্বাভাবিক। সেই সমস্যাগুলো স্বাভাবিক পন্থায় সমাধান করা উচিত। সুখী দাম্পত্য জীবনে যেমন দরকার পারস্পরিক বিশ্বাস, ভালোবাসা আর ত্যাগ; তেমনি দরকার বোঝাপড়া করে চলার মানসিকতা। যদি এভাবে সংসারে চলা যায় তাহলে সংসার যেমন ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পাবে, তেমনি নিশ্চিত হবে অনাগত সন্তানের একটি আলোকিত ভবিষ্যৎ। ডিভোর্স কখনো সমস্যার সমাধান দিতে পারে না, বরং একটি ডিভোর্স হাজারটি সমস্যা তৈরি করতে পারে অবলীলায়। তাই ডিভোর্স নয়, সমঝোতা হোক দাম্পত্য জীবনের হাতিয়ার।
 
  (সেরা ব্লগার প্রতিযোগিতা'১৮)
http://m.dailynayadiganta.com/?/detail/news/248164

পঠিত : ১৩৮৭ বার

মন্তব্য: ০