Alapon

এ হৃদয়ে কোনো বসন্ত নেই

মা,
লোকে বলে ছেচল্লিশ বছর হলো তোমার দাসত্ব মুক্তির।
আরো বলে ছেচল্লিশতম মুক্ত বসন্ত বাংলায় এসেছে।
পুরুষের পড়নে পাঞ্জাবী,নারীর পড়নে বাসন্তী দেখে আমি
ও বুঝতে পেরেছি বাংলা দিনপঞ্জিকায় ফাগুন এসেছে।
টেলিভিশন কিম্বা বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায় বসন্তবরণের
উৎসব, বাসন্তী আনন্দে নাচছে সব।

দেশসেরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক আর স্নাতকোত্তর দুটোই শেষ করে তিনবার বিসিএস এর ভাইভা বোর্ড থেকে ফিরে এসে আমি এখন কোনো বসন্ত অনুভব করতে পারিনা।
প্রথমবার ওরা পনর লাখ চেয়েছিলো,শেষে এসে তা ঠেকলো দশে।অত টাকা দেওয়া কিম্বা তা মেনে নেওয়ার
সামর্থ আমার যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা বাবার নেই।
বাবা তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়নে স্নাতক করছিলেন।যুদ্ধের ডাক এলে ভারতীয় প্রশিক্ষণ শিবির ঘুরে রণক্ষেত্রের এক দুর্দমনীয় মুক্তিযোদ্ধা।
মাইনে বাবার হাত উড়ে যায়,স্বাধীনতার পরে আর কলম ধরতে পারেন নি।
মুক্তিযোদ্ধা সনদ নেননি,বলেছিলেন কোনো নিজস্ব স্বীকৃতির জন্য নয়,গিয়েছিলাম"বাংলাদেশের" জন্যে।
দেশ পেয়েছি আর কোনো স্বীকৃতি চাইনা।
বসন্ত কিম্বা ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে পাড়ার
মোড়ের অস্থায়ী ফুলের দোকানে সত্তরোর্ধ্ব মুক্তিযোদ্ধার দৈনিক আড়াইশো টাকা বেতনে চাকরি কিম্বা মুক্তদেশে মুক্তিযোদ্ধা বৃদ্ধের রিকশায় প্যাডেল ঘোরানো দেখে
বাবা প্রচন্ড কেঁদেছিলেন।
আমার বাবা এখন প্রায়ই কাঁদেন, আমার চাকরি হয়নি বলে নয় কিন্তু-
"দেশটা ভালো নেই বলে।
কোনো কোনো মুক্তিযোদ্ধার খাবার চাল জোটেনা অথচ অগণিত  সনদযোদ্ধাদের উত্তরপুরুষদের যুদ্ধকোটার সুবিধা প্রাপ্তিতে"।
কখনো তাচ্ছিল্যে কিম্বা ক্ষোভে অথবা বেদনায় নির্বাক হয়ে যান তিনি।
এলাকায় রাজনীতিতে প্রভাবশালী এক নেতা আমার বোনকে তুলে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলো,বাবা প্রতিবাদ করতে গিয়ে গলা ধাক্কা খেয়েছেন।
তবু শেষ পর্যন্ত বলেছিলেন দেশ মানে তুমি তার রক্তের সাথে বেঈমানি করবেনা।
অথচ এই পহেলা ফাগুনে পাটক্ষেতে আমার বোনের ক্ষতবিক্ষত লাশ পাওয়া গ্যাছে।
বাসন্তী উৎসব আমাদের এখানে নেই,
এখানে বসন্ত আসেনি।
আট বছর প্রেম করার পর নীলার বাবার চোখে অযোগ্য হবার কারণে গতকাল দোসরা ফাগুনে বা বসন্তের দ্বিতীয় সন্ধ্যায় নিয়ম ভেঙে বাসন্তী শাড়িতে নীলার যাবার কথা ছিলো শ্বশুরবাড়ি।
কিন্তু ঠিক দোসরা ফাগুনেই যে সুন্দরী মেয়েটি  বিয়ের আসরে না বসে সিলিঙে ঝুলে গ্যালো?বাসন্তী শাড়িতেই?সেই নীলা।
বাসন্তী আত্মহনন। 
আমি কিচ্ছুটি করতে পারিনি।
এখানে মা আমাদের পঞ্জিকায় ফাগুন এসেছে ঠিক,
কিন্তু বসন্ত আসেনি।
এ হৃদয়ে কোনো বসন্ত নেই,তাই উৎসব বেমানান। 

"সেরা ব্লগার প্রতিযোগিতা ২০১৮"

পঠিত : ৬৭১ বার

মন্তব্য: ০