Alapon

যেভাবে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ে ধনাঢ্য পরিবারের মেয়ে হুমায়ারা

বাবা বড় ব্যবসায়ী। ধনাঢ্য পরিবারের মেয়ে হুমায়ারা ওরফে নাবিলা। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হয় নর্থসাউথ ইউনিভারসিটিতে। সেখানে তাজরীন খানম শুভর সঙ্গে পরিচয় হয় তার। শুভর ভাই আকরাম হোসেন নিলয় নব্য জেএমবির গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা। শুভর মাধ্যমে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ে হুমায়ারা ওরফে নাবিলাও। এরপর ধীরে ধীরে হয়ে ওঠে নব্য জেএমবির সিস্টার উইংয়ের প্রধান। নিজস্ব যোগাযোগ চ্যানেলে তার নাম ছিল ‘ব্যাট উইমেন’।

বুধবার রাতে সিদ্ধেশ্বরী এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে ধনাঢ্য পরিবারের এই মেয়ে হুমায়ারা ওরফে নাবিলাকে। গত বছর জাতীয় শোক দিবসে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে মন্ত্রী-এমপিসহ শতাধিক মানুষকে হত্যার যে ছক কষেছিল জঙ্গিরা, সেই পরিকল্পনা এবং অর্থায়নের সঙ্গে জড়িত ছিল হুমায়ারা। অবশ্য হামলার আগেই সিটিটিসির অভিযানে আত্মঘাতী বিস্ফোরণে নিহত হয় হামলার প্রস্তুতি নেওয়া সেই জঙ্গি। হুমায়ারাকে এই মামলায় গ্রেফতারের পর বৃহস্পতিবার দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট- সিটিটিসির উপকমিশনার মহিবুল ইসলাম খান বলেন, ‘নিলয় এবং তার বোনের মাধ্যমে হুমায়ারা জঙ্গিবাদে জড়িয়েছে। একসময় সে নব্য জেএমবির সিস্টার উইংয়ের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে। নব্য জেএমবিকে সংগঠিত করতে বিভিন্ন সময়ে অর্থও দিয়েছে হুমায়ারা।’  

সিটিটিসির কর্মকর্তারা জানান, জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার পর হুমায়ারা নব্য জেএমবির সিক্রেট যোগাযোগ অ্যাপসে অন্তর্ভুক্ত হয়। সেখানে হুমায়ারা নিজের আইডি খুলেছিল ‘ব্যাট উইমেন’ নামে। ফলে ‘ব্যাট উইমেন’ নামেই সংগঠনের অন্য সদস্যরা তাকে চিনত। হুমায়ারার সঙ্গে আরও অন্তত ১০-১২ জন নারী নব্য জেএমবির সিস্টার উইংয়ে কাজ করতো বলে সিটিটিসির কর্মকর্তারা জানতে পেরেছেন। রিমান্ডে নিয়ে হুমায়ারাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের নাম ঠিকানা জানার চেষ্টা চলছে বলেও জানান তারা।

সিটিটিসির একজন কর্মকর্তা জানান, হুমায়ারা ওরফে নাবিলার স্বামী তানভীর ইয়াসিন করিমকে গ্রেফতার করা হয় গত বছরের ১৯ নভেম্বর। তানভীরও ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান। আগে থেকেই দু’জন পরিচিত হওয়ায় তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। দুজনই জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়েন একসঙ্গে। যদিও গ্রেফতারের পর হুমায়ারার স্বামী তানভীর ইয়াসিন করিম জিজ্ঞাসাবাদে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কর্মকর্তাদের কাছে বলেছেন- স্ত্রী হুমায়ারার প্রভাবেই জঙ্গিবাদে জড়ানো ও সাংগঠনিক কাজে অর্থ সংগ্রহ ও সরবরাহ করতেন তিনি। জঙ্গিবাদি কার্যক্রমের বাইরে তিনি ইসলামি বই প্রকাশনার কাজ করতেন। তার একাধিক প্রকাশনা সংস্থা রয়েছে।

হুমায়ারাকে পান্থপথের বিস্ফোরণের যে মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে, সেই মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, হুমায়ারা এবং তার স্বামী দুজনই বিভিন্ন হামলার পরিকল্পনার বাস্তবায়নের জন্য প্রচুর অর্থ দিয়েছেন। সর্বশেষ গত বছরের ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে যে হামলার পরিকল্পনা করা হয় এর অর্থ যোগানেও অংশ ছিল হুমায়ারার। এমনকি হামলার পুরো বিষয়টিও তার জানা ছিল।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, হুমায়ারার স্বামী তানভীরকে গ্রেফতারের সময় হুমায়ারার কোলে এক মাসের শিশু সন্তান ছিল। একারণে সেসময় তাকে গ্রেফতার করা হয়নি। তবে তাকে নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছিল।

সিটিটিসির কর্মকর্তারা জানান, সর্বশেষ হুমায়ারা মলয়েশিয়ার লিংকন ইউনিভার্সিটিতে পড়তো। ওই একই ইউনিভার্সিটিতে পড়তো আকরাম হোসেন নিলয়। নিলয়ের মতো হুমায়ারার সঙ্গে হলি আর্টিজানে হামলাকারী রোহান ও নিবরাসের সঙ্গে পরিচয় ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। এজন্য হুমায়ারাকে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে।

জানা যায়, ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান হুমায়ারা ওরফে নাবিলার বাবা জাকির হোসেন রাজধানীর হাতিরপুলের মোতালেব প্লাজার মালিক। দুই ভাইবোনের মধ্যে হুমায়ারা ওরফে নাবিলা ছোট। শুক্রবার যোগাযোগ করা হলেও তার পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি। স্বামী তানভির ইয়াসিম করিম গ্রেফতার হওয়ার পর গুলশানের বাসা থেকে সিদ্ধেশ্বরীতে বাবার বাসায় চলে আসেন হুমায়ারা। গ্রেফতারের আগ পর্যন্ত বাবা-মায়ের সঙ্গেই থাকতেন তিনি।

পঠিত : ১২৩৯ বার

মন্তব্য: ০