Alapon

"পঁচে গেলো ছাত্রলীগ, অবাঞ্চিত ঘোষণার দাবী"

কোটা সংস্কারের দাবী নিয়ে যখন সারাদেশ উত্তাল, তখন বরাবরের মতোই সাধারণ ছাত্রদের বিরোদ্ধে অবস্থান নেয় ছাত্রলীগ। যদিও তারা নিজেদের কে সব সময় ছাত্রদের পক্ষের শক্তি বলে আসছিলো। কিন্তু প্রতিবারই কাজে ক্ষেত্রে গিয়ে ছাত্রলীগ সাধারণ ছাত্রদের যৌক্তিক দাবীর বিপক্ষে দাঁড়ায়। এবার সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে গিয়ে ছাত্রলীগ একদম ব্যাকপুটে চলে যায়। সরকারের কাছে হিরো সাজতে গিয়ে মেধাবী ছাত্রদের আন্দোলনে হামলা করে, আর তাতে সারাদেশবাসীর কাছে তো বটেই, নিজের দলের নেতা কর্মীদের কাছেই ভিলেনে পরিগণিত হয় ছাত্রলীগ।

ছাত্রলীগের মাথা মোটা নেতৃত্ব প্রথমে ভেবেছিলো সাধারণ ছাত্রদের আন্দোলনকে পিটিয়ে দমিয়ে দিবে। আর তাই সাধারণ ছাত্ররা যখন কোটা বিরোধী শ্লোগান দিয়ে শাহবাগে জড়ো হয়। তখন পুলিশের কে সাথে নিয়ে সাধারণ ছাত্রদের উপর পৈশাচিক হামলা চালায়। এতে হিতে বিপরীত হয়। সারাদেশে আন্দোলনে ফোঁসে উঠে।  ছাত্রলীগের ২য় সারির এবং তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা গণহারে পদত্যাগের পোষ্ট দেয়। কেন্দ্রীয় নেতাদের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলে তারা। কেন্দ্রীয় নেতারা শুধু মাত্র ফাটাকেষ্ট খ্যাত ওবায়েদুল কাদের এবং নানকের ফর্মুলায় কাজ করছে বলে নেতাদের বিষেদাগার করে। 

কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পড়ে আরো বেশি দু'টানায়। কি করবে দিশা ঠিক করতে না পেরে এলোমেলো পোষ্ট দিতে থাকে। তাতে করে নেতা-কর্মীরা আরো বেশি ক্ষিপ্ত হয়। দলীয় কমান্ড না মেনে সাধারণ ছাত্রদের কাতারে শামিল হয়ে যুক্তির দাবীর পক্ষে শ্লোগান দেয়। ছাত্রলীগের চেইন অব কমান্ড মুখথুবরে পড়ে। 

এই দিকে সরকার সিদ্ধান্ত দেয় আগামী মে মাসের ৭ তারিখ পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত রাখতে। এর মধ্যে সরকার কোটা নিয়ে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাবে। কিন্তু এটা সরকারের একটা ফাঁদ এবং ছাত্রলীগের কারসাজি তা ছাত্ররা বুঝতে পেরে আবার আন্দোলনে নামে। ছাত্রলীগ এবার দিশেহারা প্রায়। এবার তারা ইতিহাসের নেক্কারজনক কাজ করে বসে। ঢাবির হলে হলে গিয়ে সাধারণ ছাত্রীদের উপর রাতের অন্ধকারে হামলা করে। 
সুফিয়া কামাল হলের ছাত্রলীগ সভানেত্রী এশা কে লেলিয়ে দেয় আন্দোলনকারী ছাত্রীদের উপর। সে হলের ৪র্থ বর্ষের ছাত্রী মুরশিদার পায়ের রগ কেটে দেয়। আবারো শুরু হয় প্রতিবাদ - প্রতিরোধ।  লীগ নেত্রী এশা কে সাধারণ ছাত্রীরা জুতার মালা গলায় দিয়ে উত্তম-মধ্যম দিয়ে ছাড়ে।

মধ্যরাতেই তড়িঘড়ি করে দলের মান বাঁচাতে এশা কে দল থেকে বহিষ্কার করে। কিন্তু তাতে শেষ রক্ষা হয় নি। জাতি বুঝে নেয় ইতিহাসে কারা রগ কাটার রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলো আর আজও তার ধারা অব্যাহত।  শুরু হয় ছাত্রলীগ কে 'না' বলা শ্লোগান। ছাত্রলীগ তাদের কর্মী এবং জাতির কাছে পরিণত হয় এক অভিশাপের নাম।
দলীয় সভাপতি সোহাগ, সাধারণ সম্পাদক জাকির এখন পাগল প্রায়। এই দপ্তর, ঐ দপ্তর ঘুরছে নিজেদের পিঠ বাঁচানোর জন্য। কিছু একটা করে কর্মীদের আস্থা ফিরানোর জন্য। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে গেছে। 

সারাদেশ ফোঁসে উঠেছে কোটা প্রথা সংস্কারে। দেশের খ্যাতনামা বুদ্ধিজীবী এবং বিশ্লেষকরা মত দিচ্ছেন কোটা সংস্কারে।
সাবেক তত্বাবদায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সাবেক মন্ত্রীপরিষদ সচিব আকবর আলি খান বলেন- কোটা সংস্কারের দাবী যৌক্তিক, সরকারের উচিত তা মেনে নেয়া।
সাবেক মেজর জেনারেল  সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহীম বীরপ্রতিক বলেন- কোটা সংস্কার হওয়া সময়ের দাবী, তরুণদের দাবীর সাথে আমি আছি।
মোটিভেশনাল স্পীকার সুলাইমান সুকন এবং আয়মান সাদিকও তাদের ফেইসবুক ওয়ালে পোষ্ট দিয়ে কোটা সংস্কারের পক্ষে মত দেন।

কিন্তু ছাত্রলীগ অবস্থান নিয়েছে এর বিরোদ্ধে। আহত করছে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের। আর এতে করেই সব মহলে এখন ছাত্রলীগের সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সব জায়গায় এখন ছাত্রলীগকে অবাঞ্চিত করার রব উঠেছে। অতীতে ছাত্রলীগের কর্মকান্ডে সবাই ক্ষিপ্ত হলেও ছাত্রলীগ কে বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতি হতে মুছে দেয়ার, সকল ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ করার দাবী খোদ ছাত্রলীগ থেকে এই প্রথম। বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতিতে এর আগে কোন দলকে এভাবে সর্বস্তর থেকে 'না' বলার ডাক আসে নি। এটা ছাত্রলীগের জন্য শুধু লজ্জায় নয়। তাদের কে ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করাও বটে।

সবার এখন একই কথা।  ছাত্রলীগের দিন শেষ। 

পঠিত : ৯১৮ বার

মন্তব্য: ০