Alapon

লাইলাতুল মেরাজের আগের দিন ভয়াবহ পাপ 'শিরক' করবেন?

পহেলা বৈশাখকে এদেশের মানুষ জাতীয় উৎসব হিসেবে মনে করে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে পহেলা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রা কি মুসলমানদের উৎসব? একে বাঙ্গালী জাতির সার্বজনীন উৎসবও বলা হয়। এখন কথা হচ্ছে ৯০% মুসলিমের এ দেশে আসলে বাঙ্গালী কারা? পহেলা বৈশাখের উৎসবে বা মঙ্গল শোভাযাত্রায় যাচ্ছে কারা? নিশ্চয় মুসলিম তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে আবাল, বৃদ্ধ, শিশু সবাই। কিন্তু এই উৎসব পালন যে কত ভয়াবহ গোনাহের কাজ তা কি আমরা জানি? এই উৎসব যে ঈমান বিধ্বংসী শিরক এই খবর কি আমরা রাখি? চিন্তাশীল মুসলিম মাত্রই কোন উৎসব পালনের পূর্বে এর শরীয়হ ভিত্তি কতটুকু আছে জেনে নেয়। তাহলে চলুন আজ আমরা জাতীয় ভাবে পালনীয় ভয়াবহ শিরকটির বিষয়ে জানবো। কিভাবে শিরক হলো তার আদোপান্ত খতিয়ে দেখবো। 

কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে পহেলা বৈশাখ উদযাপন অনুষ্ঠানাদি পর্যালোচনা করলে সুস্পষ্ট ও সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয় যে, এগুলো ইসলামের মৌলবিশ্বাস ও জীবনধারার সাথে সম্পূর্ণরূপে সাংঘর্ষিক। নিচে এ সংঘর্ষের নানা দিক তুলে ধরা হলো:

কাফির-মুশরিকদের সাথে আদর্শ ও বিশ্বাসগত সামঞ্জস্য:

হিন্দুদের পুজা ও দেব-দেবীদের বাহন সাদৃশ্য:



বাংলা নববর্ষ উদযাপনের নামে যা হয়ে থাকে ওগুলো শতভাগ হিন্দুধর্ম চর্চা ছাড়া আর কিছুই নয়। বৈশাখের ১তারিখ হিন্দুদের একটি মৌলিক ধর্মীয় উৎসবের দিন। এর আগে দিন তাদের চৈত্রসংক্রান্তি। আর পহেলা বৈশাখ হলো ঘট পুজার দিন। তারা ঐ দিন গণেশ পুজা করে। গনেশের বিভিন্ন মূর্তি তৈরি করে মঙ্গল শেভাযাত্রা করে।

গত ১৪ এপ্রিল ২০১৩ দৈনিক সমকালে প্রাবান্ধিক মুকুল দাসের একটি লেখা ছাপা হয়। লেখাটির শিরোনাম ছিল “বর্ণ-বিবর্ণ স্মৃতিরেখা”। তিনি এ লেখাতে তার শৈশবের পহেলা বৈশাখ উদযাপন নিয়ে লিখেছেন: “ছেলেবেলার পহেলা বৈশাখের স্মৃতি এখনও ধূসর হয়ে ওঠেনি। মনে পড়ে পহেলা বৈশাখের ভোরেই নতুন জামা-কাপড় গায়ে উঠত। চৈত্রসংক্রান্তিতে হাটখোলায় বিরাট মেলা বসত। মেলা থেকে কেনা হতো সিদ্ধিদাতা গণেশের পট। সকাল ১০টা বাজার সঙ্গে সঙ্গেই গণেশ পূজার আয়োজন করা হতো।

…কাঁচা হলুদ দিয়ে লিখা হতো ‘শ্রী শ্রী সিদ্ধিদাতা গনেশায় নমঃ’। ফল-মিষ্টির উপচার সাজিয়ে পুরহিত মশাই মন্ত্রোচ্চারণ করতেন। ঢাকি ঢাক বাজাত। পূজা শেষে প্রসাদ খেতাম।” তার এ স্মৃতিচারণ মূলক লেখা থেকে সুষ্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে বহুকাল থেকে এখনো পর্যন্ত হিন্দুদের কাছে ১লা বৈশাখ ধর্মীয় উৎসবের দিন।

তাছাড়া, পহেলা বৈশাখ উদযাপনের জন্য যে সকল কর্মসূচি থাকে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মঙ্গল প্রদীপ জ্বালনো, মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা, ঢাক বাজানো, উলু ধ্বনি দেওয়া, বট গাছের তলায় জমায়েত। আবার এ শোভাযাত্রার গুরুত্বপূর্ণ আকর্ষণ থাকে বিভিন্ন পশু-পাখির মূর্তি ও মুখোশ। উল্লিখিত প্রতিটি কাজ হিন্দুদের ধর্ম বিশ্বাস ও ধর্ম চর্চার অবিচ্ছেদ্য অংশ।



তাদের কল্যাণ প্রার্থনার পদ্ধতিতে আমরা মুসলমানরাও কী কল্যাণ প্রার্থনা করব?

তাদের ধর্ম মতে দেব-দেবীদের বিভিন্ন বাহন রয়েছে। যেমন: লক্ষীর বাহন পেঁচা, সরস্বতীর বাহন রাজহাঁস, গণেশের বাহন ইঁদুর, দুর্গার বাহন সিংহ, মনসার বাহন সাপ, কার্ত্তিকের বাহন ময়ূর, মহাদেবের বাহন ষাড়, যমরাজের বাহন কুকুর, ইন্দ্রের বাহন হাতি, ব্রক্ষ্মার বাহন পাতিহাঁস, বিশ্বকর্মার বাহন ঢেকি, শীতলার গাধা ইত্যাদি। আর যেহেতু যানবাহন ছাড়া দেব-দেবীদের আগমন-প্রস্থান সম্ভব নয়, অতএব, তাদের পুজাতে, তাদের শোভাযাত্রাতে দেব-দেবীদের যান-বাহনের পুজাও করতে হয়।

সূর্য ও প্রকৃতি পুজারীদের সাথে সাদৃশ্য:



নববর্ষ উদযাপনের অন্যতম কর্মসূচি হচ্ছে, বছরের প্রথম প্রহরে প্রথম সূর্যকে স্বাগত জানানো। এ ধরনের কর্মকান্ড মূলত সূর্যপুজারী ও প্রকৃতিপুজারী বিভিন্ন সম্প্রদায়ের অনুকরণ মাত্র। সূর্য ও প্রকৃতি পুজা বহু প্রাচীন। যেমন খ্রিষ্টপূর্ব ১৪ শতকে মিশরীয় “অ্যাটোনিসম” মতবাদে সূর্যের উপাসনা ছিল। এমনিভাবে ইন্দো-ইউরোপীয় এবং মেসো-আমেরিকান সংস্কৃতিতে সূর্য পুজারীদেরকে পাওয়া যাবে। ১৯ শতাব্দীর উত্তর-আমেরিকায় কিছু সম্প্রদায় গ্রীষ্মের প্রাক্কালে পালন করত সৌর-নৃত্য এবং এই উৎসব উপলক্ষ্যে পৌত্তলিক প্রকৃতি পূজারীরা তাদের ধর্মীয়-বিশ্বাসের পুনর্ঘোষণা দিত। সেই সুদূর প্রাচীনকালে সাবা সম্প্রদায় সূর্যের পুজা করত। হুদহুদ পাখি এসে তা নবী সুলায়মান (আ.) কে অবহিত করেছিল।

এ প্রসঙ্গে কুরআন বলছে,
وَجَدتُّهَا وَقَوْمَهَا يَسْجُدُونَ لِلشَّمْسِ مِن دُونِ اللَّهِ وَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ أَعْمَالَهُمْ
“আমি তাকে ও তার জাতিকে দেখেছি, তারা আল্লাহকে ছেড়ে সূর্যকে সিজদা করছে এবং শয়তান তাদের কার্যাবলীকে তাদের জন্য শোভনীয় করেছে” (সূরা আল নামল, ২৭:২৪)
বৈশাখী সূর্যকে স্বাগত জানানো, কুরআনে বর্ণিত সূর্যকে সিজদা করা, আর উত্তর আমেরিকার আদিবাসীদের সৌর-নৃত্য এগুলোর মধ্যে চেতনা ও বিশ্বাসগত কোন পার্থক্য নেই; বরং এ সবই স্রষ্টার দিক থেকে মানুষকে অমনোযোগী করে সৃষ্টির আরাধনার প্রতি তার আকর্ষণ জাগিয়ে তোলার শয়তানী উদ্যোগ।

কবি রবিন্দ্রনাথ স্বীয় ধর্ম বিশ্বাস থেকে তার বৈশাখ কবিতায় রুদ্র বৈশাখের কাছে মিনতি করে অনেক কিছু চেয়েছেন। সেটা তার ধর্ম বিশ্বাস।
কিন্তু একজন মুসলমান কিভাবে নিজ ধর্ম বিশ্বাসকে এড়িয়ে তার সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে কিছু চায়?

জন্তুপুজা:



বাংলা নববর্ষ উদযাপনের আরেকটি অনুসঙ্গ হলো: মুখোশ নৃত্য, গম্ভীরা গান ও জীবজন্তুর প্রতিকৃতি নিয়ে মিছিল। গম্ভীরা উৎসবের যে মুখোশ নৃত্য, তার উৎস হচ্ছে কোচ নৃগোষ্ঠীর প্রাচীন কৃত্যানুষ্ঠান এবং পরবর্তীতে ভারতীয় তান্ত্রিক বৌদ্ধগণ এই নৃত্য আত্তীকরণ করে নিজস্ব সংস্করণ তৈরী করে। জন্তু-পুজার উৎস পাওয়া যাবে প্রাচীন গ্রীক ও রোমান সভ্যতার কিছু ধর্মীয় মতবাদে, যেখানে দেবতাদেরকে জন্তুর প্রতিকৃতিতে উপস্থাপন করা হয়েছে।

এমনিভাবে নববর্ষের কিছু অনুষ্ঠানে প্রাচীন পৌত্তলিক ধর্মীয় মতবাদের ছোঁয়া লেগেছে, যা যথারীতি ইসলামবিদ্বেষীদের নিকট অত্যন্ত পছন্দনীয়, এগুলো তাদের আধ্যাত্মিক আবেগ-অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর জন্য সত্য ধর্মের বিকল্প এক বিকৃত পথ মাত্র।
তাছাড়া, ইতিহাস ঘেটে আরো পাওয়া যায় যে, নিম্ন শ্রেণীর হিন্দুরা গাজন এবং হরি উৎসবের সময় এরকম কিছু আচার পালন করে থাকত। গাজনের মেলায় ডোম, মেথর ও চন্ডাল শ্রেণীর হিন্দু লোকেরা নানাবিধ বহুরূপী সঙ সেজে তাদের উৎসব করত। জন্তু জানোয়ারের মুখোশ নিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রার সাথে এর কিছুটা মিল আছে।

কল্যাণ-অকল্যাণ সাধনের বিশ্বাসে মুশরিকদের সাথে সাদৃশ্য:

নতুন বছর নতুন কল্যাণ বয়ে আনে। মুছে দেয় পুরোনো কষ্ট ও ব্যর্থতার গ্লানী। এই বিশ্বাসই হচ্ছে মঙ্গল শোভাযাত্রার মর্ম। এ ধরনের কোন তত্ত¡ ইসলামে আদৌ সমর্থিত নয়। বস্তুত: নতুন বছরের সাথে কল্যাণের শুভাগমনের ধারণা আদিযুগের প্রকৃতি-পুজারীদের কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধ্যান-ধারণার অবশিষ্টাংশ। এ জাতীয় কুসংস্কারের কোন স্থান ইসলামে নেই। বরং মুসলিমের জীবনে প্রতিটি মুহূর্তই পরম মূল্যবান হীরকখন্ড, যদি তা আল্লাহর আনুগত্যে ব্যয় হয়।

ইমাম আবু হানিফা রহ.-এর দাদা তাঁর পিতাকে পারস্যের নওরোযের দিন (নববর্ষের দিন) আলী রা.-এর কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং কিছু হাদিয়াও পেশ করেছিলেন। (হাদিয়াটি ছিল নওরোয উপলক্ষ্যে)। ফলে আলী রা. বললেন, ‘‘নওরোযুনা কুল্ল ইয়াওম’’ মুমিনের প্রতিটি দিনই তো নববর্ষ। অর্থাৎ মুমিন প্রতিদিনই তার আমলের হিসাব নিকাশ করবে এবং নব উদ্যমে আখেরাতের পাথেয় সংগ্রহ করবে।
ইসলামের চতুর্থ খলীফা হযরত আলীর (র.) এ ফতোয়া দ্বারা সুস্পষ্ট ভাবে প্রতিয়মান হচ্ছে যে, নববর্ষ উপলক্ষ্যে পরষ্পরে উপহার বা প্রেজেন্টশন আদান প্রদান এবং শুভেচ্ছা বিনিময় নাজায়িয।

তাই একজন মুসলমানের কাছে বছরের প্রথম দিনের কোন বিশেষ কোন গুরুত্ব ও তাৎপর্য নেই। এর সাথে জীবনের কল্যাণ-অকল্যাণের গতিপ্রবাহের কোন দূরতম সম্পর্কও নেই। এ জন্যই ইসলামে হিজরী নববর্ষ পালনের কোন প্রকার নির্দেশ দেয়া হয়নি।

কেউ যদি এ ধারণা পোষণ করে যে, নববর্ষের প্রারম্ভের সাথে কল্যাণের কোন সম্পর্ক রয়েছে, তবে সে শিরকে লিপ্ত হল । যদি সে মনে করে যে, আল্লাহ এই উপলক্ষ্য দ্বারা মানবজীবনে কল্যাণ বর্ষণ করেন, তবে সে ছোট শিরকে লিপ্ত হল। আর কেউ যদি মনে করে যে নববর্ষের আগমনের এই ক্ষণটি নিজে থেকেই কোন কল্যাণের অধিকারী, তবে সে বড় শিরকে লিপ্ত হল।

আর শিরক এমন অপরাধ যে, শিরকের ওপর কোন ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতকে চিরতরে হারাম করে দেন।
তিনি ঘোষণা দিয়েছেন:
إِنَّهُ مَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ
“নিশ্চয়ই যে কেউই আল্লাহর সাথে শিরক করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতকে হারাম করে দিবেন, আর তার বাসস্থান হবে অগ্নি।” (আল-মায়িদাহ:৭২)।



পহেলা বৈশাখের সাথে মঙ্গলময়তার কোন সম্পর্ক নেই। বরং ইসলামের বিশ্বাসে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা মহাবিশ্বের স্রষ্টা, মহান ব্যবস্থাপক, নিরঙ্কুশ স্বত্তাধীকারী। জীবন-মৃত্যু, রিযিক ও সৃষ্টিজগতের কল্যাণ অকল্যাণ তাঁরই ইচ্ছাধীন। এ সবের নিরঙ্কুশ ক্ষমতা একমাত্র তাঁরই। এতে তাঁর কোন শরীক নেই।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন,
{ وَإِنْ يَمْسَسْكَ اللَّهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهُ إِلَّا هُوَ وَإِنْ يَمْسَسْكَ بِخَيْرٍ فَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ (১৭) وَهُوَ الْقَاهِرُ فَوْقَ عِبَادِهِ وَهُوَ الْحَكِيمُ الْخَبِيرُ (১৮) } [الأنعام: ১৭، ১৮]
“তিনি যদি তোমার কোন ক্ষতি করেন তবে তিনি ব্যতীত তা অপসরণকারী আর কেউ নেই। পক্ষান্তরে যদি তিনি তোমার মঙ্গল করেন তবে তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান” (সূরা আন‘আম, আয়াত: ১৭)।

অন্যত্র আল্লাহ রাসূল স. কে লক্ষ্য করে বলছেন,
{قُلْ لَا أَمْلِكُ لِنَفْسِي نَفْعًا وَلَا ضَرًّا إِلَّا مَا شَاءَ اللَّهُ} [الأعراف: ১৮৮]
“আপনি বলুন, আমি আমার নিজের কল্যাণ কিংবা অকল্যাণ সাধনের মালিক নই কেবল তা ছাড়া যা আল্লাহ চান” (সূরা আল-আরাফ, আয়াত: ১৮৮)। অনুরূপ অন্য আয়াতে বলেন,
{ قُلْ إِنِّي لَا أَمْلِكُ لَكُمْ ضَرًّا وَلَا رَشَدًا (২১) } [الجن: ২১، ২২]
“আপনি তাদের বলুন, আমি তোমাদের কোন ক্ষতি সাধন করার ও সুপথে আনার মালিক নই” (সূরা আল-জিন: ২১)।

এ সব আয়াতের বক্তব্য অনুসারে লাভ-ক্ষতির একমাত্র মালিক আল্লাহ। এমন কি মহানবী (স.)ও কারো কোন কল্যাণ-অকল্যাণ করার ক্ষমতা রাখেন না। সুতরাং কোন প্রদীপ বা শোভাযাত্রা মানুষের কল্যাণ-অকল্যাণ করার ক্ষমতা রাখতে পারে, এটা কি কোন মুসলমান কল্পনাও করতে পারে? বিশ্বাসতো দূরের কথা।

সহীহ হাদীসে রয়েছে, একবার ‘ওমার (রা.) হাজরে আসওয়াদ চুমু দিয়ে বলেছিলেন,
إنِّي لأَعْلَمُ أَنَّك حَجَرٌ , لا تَضُرُّ وَلا تَنْفَعُ , وَلَوْلا أَنِّي رَأَيْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يُقَبِّلُكَ مَا قَبَّلْتُكَ .
“আমি জানি তুমি একটি পাথর। তুমি ক্ষতিও করতে পার না; উপকারও করতে পার না। যদি আমি না দেখতাম যে, রাসূল (স.) তোমাকে চুমু দিচ্ছেন, তাহলে আমি তোমাকে কখনও চুমু দিতাম না”। (বুখারী, হাদীস: ১৫৯৭, মুসলিম, হাদীস: ৩১২৮)।

এই যদি হয় কাবা প্রাঙ্গনে অবস্থিত জান্নাতি পাথরের অবস্থা; তাহলে কোন প্রদীপ ও শোভাযাত্রা কী করে মানুষের কল্যাণ করবে? মানুষ হয়ে ওরা কী ভাবে এ জাতীয় কুসংস্কারে বিশ্বাসী হয়?

অপর এক হাদীসে আছে, রাসূল (স.) ইবনু আব্বাস (রা.) কে বলেছিলেন,
وَاعْلَمْ أَنَّ الْأُمَّةَ لَوْ اجْتَمَعَتْ عَلَى أَنْ يَنْفَعُوكَ بِشَيْءٍ لَمْ يَنْفَعُوكَ إِلَّا بِشَيْءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللَّهُ لَكَ وَلَوْ اجْتَمَعُوا عَلَى أَنْ يَضُرُّوكَ بِشَيْءٍ لَمْ يَضُرُّوكَ إِلَّا بِشَيْءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللَّهُ عَلَيْكَ
“…আর জেনে রেখ, সমগ্র উম্মত যদি একত্রিত হয়ে তোমার কোন অকল্যাণ করতে চায় পারবে না; কেবল ততটুকু ছাড়া যা আল্লাহ তোমার ভাগ্যে লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। আর তারা যদি একত্রিত হয়ে তোমার কোন ক্ষতি করতে চায় পারবে না; কেবল ততটুকু ছাড়া যা আল্লাহ তোমার ভাগ্যে লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন।” (তিরমিযী)।

শুভাশুভ নির্ণয় ও তাতে বিশ্বাস স্থাপনের ব্যাপারে রাসূল [সা.] বলেন الطِّيَرَةُ شِرْكٌ‘কুলক্ষণে বিশ্বাস করা শিরক’। [আবু দাউদ হা/৩৯১২; ইবনু মাজাহ হা/৩৫৩৮; তিরমিযী, মিশকাত হা/৪৫৮৪]

রাসূল [সা.] আরো বলেন, لَيْسَ مِنَّا مَنْ تَطَيَّرَ، أَوْ تُطِيَّرَ لَهُ أَوْ تَكَهَّنَ، أَوْ تُكِهِّنَ لَهُ أَوْ سَحَرَ، أَوْ سُحِرَ لَهُ ‘যে কুলক্ষণে বিশ্বাস করে এবং যাকে সে বিশ্বাস করায়, যে ভাগ্য গণনা করে এবং যাকে সে ভাগ্য গণনা করে দেয়, যে জাদু করে এবং যাকে সে জাদু করে দেয়- তারা আমাদের (উম্মাতে মুহাম্মাদীর) অন্তর্ভুক্ত নয়। [সিলসিলা ছহীহাহ হা/২১৯৫]

কোন সময়কে অশুভ বা শুভ মনে করা হিন্দু সংস্কৃতিধারী মুসলিম নামধারী মুনাফিকের কাজ। বরং বিশেষ যে সময়ের কথা হাদীছে এসেছে তা নিম্নরূপ :
রাসূল [সা.] বলেন,إِنَّ فِى اللَّيْلِ لَسَاعَةً لاَ يُوَافِقُهَا رَجُلٌ مُسْلِمٌ يَسْأَلُ اللهَ خَيْرًا مِنْ أَمْرِ الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ إِلاَّ أَعْطَاهُ إِيَّاهُ وَذَلِكَ كُلَّ لَيْلَةٍ.‘রাতের মধ্যে এমন একটি সময় আছে, যদি কোন মানুষ সে সময় লাভ করতে পারে, তবে আল্লাহর নিকট ইহকাল ও পরকালের কোন কল্যাণ চাইলে আল্লাহ তাকে দান করেন। আর এ সময়টি প্রতি রাতেই রয়েছে। [মুসলিম, মিশকাত হা/১২২৪]

শবে মেরাজের আগের দিন শিরক চর্চা!!



মুসলিম জীবনে আরেকটি বিশেষ মুহূর্ত রয়েছে- শবে মেরাজ। রামাযান মাসের পূর্বে  রোজাদারদের জন্য প্রস্তুতির সময় শবে মেরাজ। শবে মেরাজের  রাত্রিতে ধর্মপ্রাণ মুসলিম ইবাদত বন্দিগী করে। এ বছর শবে মেরাজের আগের দিন পহেলা বৈশাখ। ইবাদত বন্দিগী করার আগের দিন শিরকের মতো ক্ষমার অযোগ্য পাপ কোন মুসলিম করতে পারে না। বস্তুত: মানব জীবনের পুরো সময়টাই মহামূল্যবান। যা একবার গত হলে আর কখনো ফিরে আসে না। আর এই বিশেষ সময় টিকে এভাবে উদযাপন করা শিরকী সংস্কৃতি বৈ কিছুই নয়।

সুতরাং প্রমাণিত হলো, পহেলা বৈশাখে মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বালন ও মঙ্গল শোভাযাত্রা সম্পূর্ণরূপে ইসলামবিরোধী কাজ। প্রদীপ ও শোভাযাত্রার সাথে মঙ্গল শব্দটি জুড়ে দেওয়ায় গোটা বিষয়টি তাওহীদুর রবুবিয়্যাতের পরিপন্থী হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা অপসংস্কৃতির স্তর ভেদ করে শিরকী সংস্কৃতি ধারন করেছে। কারণ, একমাত্র কাফির-মুশরিকরাই গাইরুল্লাহকে কল্যাণ-অকল্যাণের নিয়ামক হিসেবে বিশ্বাস করে থাকে। মূলত জাতিকে শিরকের অন্ধকারে ঢুকিয়ে দেবার জন্য এই সব অপপ্রয়াস।

পঠিত : ১৪৯৮ বার

মন্তব্য: ০