Alapon

মি'রাজুনবী (সাঃ) নিয়ে এত মিথ্যাচার কেন? মি'রাজ কেন্দ্রীক কোন ইবাদাত আছে কি?

ইসরা ও মি'রাজ কুরআন এবং হাদিসে মুতাওয়াতির দিয়ে প্রমাণিত। এর অস্বীকার কারী কাফির ও মুদল্ল।

আর এ ঘটনাটি বিশ্ব নবী (সাঃ) এর অন্যতম শ্রেষ্ঠ মু'জিযা। যা বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষতার এ যুগেও বিজ্ঞানীদের হতবাক ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় করে রাখছে। যার গতি, পথ, অবস্থান, সময়, বাহন, দূরত্ব ইত্যাদি নিয়ে মহাকাশ ও মহাজাগতিক বিজ্ঞানীরাও ব্যাকুল ও অস্থির। এর কোন কূল কিনারা তারা খুঁজে পাচ্ছেন না। এর আলোচনা, পরিধি ও প্রভাব বিশ্বব্যাপী আলোড়িত।

এ বিষয়ে পঞ্চাশের মত সাহাবা থেকে হাদীস বর্ণিত হয়েছে। শুধু ইবনু কাসীর রঃ তাঁর তাফসীরে পঁচিশ জন সাহাবা থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন।

কিন্তু তারপরও কতিপয় অতি উৎসাহী মানুষ এ মহা বিস্ময়কর ঘটনার সাথে রং-চং পাকিয়ে কিছু মিথ্যা কাহিনী বানিয়ে মূল ঘটনার গাম্ভীর্যকে বিনষ্ট করার অপপ্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। যা মোটেও কাম্য নয়। 
আমাদের মনে রাখা উচিৎ- মিথ্যা কখনো সত্যের সৌন্দর্য বাড়ায় না, বরং বিনষ্টই করে।

মি'রাজ প্রসঙ্গে বানোয়াট কাহিনীগুলোর কিয়দাংশ নিম্নরূপ:

১. আরশে আজিমে আরোহণ : 
শুনতে অনেক মধুর লাগে যে, কোন মানুষের জন্য আরশে আজিমে আরোহণ করা নিসন্দেহে অনেক বড় সম্মানের ব্যাপার। কারণ সেখানে স্বয়ং আল্লাহ তা' আলা সমাসীন। কিন্তু দলীল লাগবে তো। রাসূল সাঃ মিরাজের রাতে আরশে উঠেছেন এমন আলোচনা কুরআনে তো দূরের কথা কোন দূর্বল হাদীসেও নেই (আল্লামা যারকানী, শরহুল মাওয়াহিব, পৃ- ৮/২২৩)।

অচথ একদল আলিম নূন্যতম গবেষণা না করে নিজেদের মন মতো কিচ্ছা বানিয়ে রাসূল সাঃ এর জুতা সহ আরশে আজিম আরোহণ করার কাহিনী বর্ণনা করে চলছেন। যদি এমন ঘটনা ঐ রাতে ঘটতো, তা কুরআন ও হাদিসে মিরাজ প্রসঙ্গে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ঘটনা হতো। কিন্তু একটি দলীলও নেই।

২. জিব্রাইল আঃ বলেছেন- আর এক কদম সামনে গেল আমি জ্বলে-পুড়ে ভস্ম হয়ে যাব।
প্রখ্যাত মুহাদ্দিস আব্দুল্লাহ বিন সিদ্দীক আলওমারী বলেন- এরূপ ঘটনা নিকৃষ্ট মিথ্যাচার যে, জিব্রাই্ল (আঃ) সিদরাতুল মুন্তাহায় গিয়ে রাসূল সা, কে বলেছেন- আমি যদি আর এক কদমও অগ্রসর হই, আমি জ্বলে যাব। বরং বাস্তবতা হলো, উক্ত রাতে জিব্রাইল আঃ এক মূহুর্তের জন্যও রাসূল সা, এর সঙ্গ ত্যাগ করেছেন বলে একটি হাদীসও নেই। ( মাদেহুর রাসূলিল আ' যাম, আল বুসিরী, পৃ- ৭২)।

অথচ, বানোয়াট এ কাহিনী দিয়ে বিদআতিরা প্রচার কর চলছে, নূরের তৈরী জিব্রাইল জ্বলে যাবে, কিন্তু রাসূল সা, জ্বললেন না, কারণ তিনি যাতি নূর। ( মাআজাল্লাহ)।
অথচ, কুরআনে এসেছে- ফেরেস্তারা আল্লাহর আরশ কাঁধে নিয়ে আছে। (সূরা হাক্কাহ- ১৭),
একদল ফেরেস্তা আরশের চার পাশে গোল হয়ে তাসবীহ পাঠ করছে (সূরা যুমার- ৯০)।
তারা আরশের এত কাছে থেকেও কেউ জ্বলে- পুড়ে যাচ্ছেন না, শুধু জিব্রাইল আ, একা জ্বলে যাবেন, এটা কি করে হয়! আর তিনি তো ফেরেস্তাদেরও নেতা!

৩. এক মূহুর্তে মিরাজ সংঘটিত হওয়া:

রাতের একটি অংশে ইসরা সংঘটিত হয়েছে, এটা সূরা বানী ইসরাইলের প্রথম আয়াতে এসেছে। কিন্তু এটা এক মূহুর্তেই সংঘটিত হয়েছে, এটা বানোয়াট। বরং হাদীসে এসেছে- রাসূল সাঃ এশার সময় নফল নামাজ পড়ে উম্মে হানী রাঃ এর ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন, তখন ইসরা শুরু হয়েছে (ফাতহুল বারী, ৭/২৩৭)।

আর সুবহে সাদিকের আগে তিনি মক্কায় ফিরে এসেছেন ( মাজমাউয যাওয়াইদ, ১/৭৩)।
আবু বকর সিদ্দীক রাঃ ও রাসূল সাঃ কে বলেছিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আপনি গত রাতে কোথায় ছিলেন? আমি আপনাকে খুঁজেছিলাম কিন্তু পাইনি। (মাজমাউয যাওয়াইদ, ১/৭৩ )।

অথচ, কোন রকম দলীল ব্যতীত শুধু শুনে শুনে কতিপয় আলিম বলে বেড়াচ্ছেন- রাসূল সাঃ ফিরে এসে দেখেন তখনও অজুর পানি গড়াচ্ছে, দরজার কড়া লড়ছে, বিছানা এখনও গরম রয়েছে ইত্যাদি। এ কাহিনীগুলো প্রমাণিত নয় ( আসনাল মাতালিব, পৃ-১১২)।

৪. ঐ রাতে আত্তাহিয়্যাতু নাজিল হয়েছে:

আত্তাহিয়্যাতু নামাজের একটি অংশ, এটা মিরাজের রাতে রাসূল সাঃ আল্লাহকে লক্ষ্য করে এক অংশ বলেছেন, আল্লাহ তাআলা আরেক অংশ, ফেরেস্তারা আরেক অংশ বলেছেন মর্মে মজাদার যে কিচ্ছা শুনা যায়, এটাও মনগড়া কাহিনী মাত্র। এটা কোন হাদীসে নেই( কুরতুবী, ৩/৪২৫ )।

মি'রাজ কেন্দ্রীক ইবাদাত আছে কি?

মি'রাজ সংঘটিত হয়েছিল এবং তা স্বশরীরেই, এটা প্রমাণিত সত্য। কিন্তু তা কোন্ বছরে, কোন্ মাসে, কোন্ তারিখে সংঘটিত হয়েছিল তা অব্যক্ত। এটা কুরআন ও হাদীসে উল্লেখ নেই। তার তারিখ জানানো ইসলাম প্রয়োজন মনে করেনি। সাহাবাগণও তারিখ জানতে চান নি। তাই রাসূল সাঃ ও জানান নি।

কিন্তু ঐতিহাসিকগণ এ নিয়ে গবেষণা করেছেন। সহীহ বুখারীর শরাহ ফাতহুল বারীতে এ বিষয়ে আট টি ভিন্ন ভিন্ন মতামত পাওয়া যায়, (ফাতহুল বার, ৭/২৪৩)।
শুধু ঐতিহাসিক ইবনু হাযম বলেছেন- নবুয়্যাতের দ্বাদশ সনের রজব মাসে মিরাজ হয়েছিল।
অন্য সাত জন ঐতিহাসিক তাঁর সাথে একমত হন নি।

যেখানে, নির্ধারিত বছর, মাস ও তারিখই পাওয়া যায় না, সেখানে ঐ রাতের নির্ধারিত ইবাদাত পাওয়া যাবে কিভাবে?
যারা এ রাত কে কেন্দ্র করে মনগড়া আমল চালু করেছেন, এটা তাদের মনগড় কর্ম, ইবাদাত নয়। কেননা, দলীল ব্যতীত ইবাদাত সাব্যস্ত হয় না।

কৃতজ্ঞতায়ঃ ড.আবুল কালাম আযাদ (বাশার)

পঠিত : ১৩৪৯ বার

মন্তব্য: ০