Alapon

জনাব জাফর ইকবাল সমীপে...

জাফর ইকবাল স্যার,আপনি দেখেন আপনার ছাত্রছাত্রীরা বের হবার পরপরই কোথাও না কোথাও ঢুকে যাচ্ছে,বসে থাকছে না।আপনি সিএসই পড়ান,সিএসই মানেই বাংলাদেশ না।বাংলাদেশে সিএসই ছাড়াও অনেক সাবজেক্ট আছে।
বুয়েট থেকে সদ্য পাস করে বেরোনো আমার সব বন্ধুরাই এখন পর্যন্ত কম করে হলেও দুটো চাকরির অফার পেয়েছে।বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অফারগুলো ছিল মাসে পচিশ হাজার টাকা বেতনে দিনরাত এক করে হাড়ভাঙ্গা খাটুনির চাকরি,যা যে কোন মুহূর্তে চলে যেতে পারে,নো জব সিকিউরিটি,নো গ্যারান্টি অফ ব্রাইট ফিউচার।বেতন কবে বাড়বে না বাড়বে তারও ঠিক নাই।

দিস ইজ দ্যা পিকচার অফ বুয়েট।এরা টিউশনি করেই মাসে পঞ্চাশ হাজার টাকা কামাতে পারে।
অতএব,এরা বাংলাদেশের রিপ্রেজেন্টেটিভ পপুলেশান না।বাংলাদেশের রিপ্রেজেন্টেটিভ পপুলেশন হল সেই ছেলেমেয়েরা যাদের বাবা মায়ের ভাল কোন "লিংক আপ" নাই,ইন্টারনাল রিক্রুটমেন্টে লবিং করার ক্ষমতা নাই,কোন বড় প্রতিষ্ঠানের সিইওর সাথে বা জিএমের সাথে যাদের পরিচয় নাই এবং যাদের পড়ালেখা শেষে একটা মাস দুরের কথা,একতা দিনও ঘরে বসে থাকার লাক্সারি নাই।
বাংলাদেশের রিপ্রেজেন্টেটিভ পপুলেশান হল সেই ছেলেরা,যারা পছন্দের মেয়েটিকে কেবলমাত্র একটা ভাল চাকরি না থাকার কারনে পরের ঘরে চলে যেতে দেখে রাতের বেলা ঘরের লাইট নিভিয়ে কাদে,বাংলাদেশের রিপ্রেজেন্টেটিভ পপুলেশান হল সেই মেয়েটা,যাকে পরিবারের চাপের কাছে নতি স্বীকার করে দশ বছরের বড় অচেনা একজনের ঘরে যেতে হয়,কারন পছন্দের মানুষটার নিজেরই চালচুলো নেই,পেট চলে না,তাকে কি খাওয়াবে??

জনাব জাফর ইকবাল,আপনি কি এবার বুঝতে পেরেছেন,কেন সরকারি চাকরির জন্য দেশের ছাত্রছাত্রীরা এভাবে রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছে??
মনে হয় না আপনি বুঝবেন।আপনার ছেলেমেয়েরা দুধে ভাতে মানুষ,তাদের চাকরির জন্য কোনদিন রাস্তায় পুলিসের লাইভ বুলেটের সামনে দাড়াতে হবে না,রাতুলের মত ৩৬টা রাবার বুলেট শরীরে নিয়ে আইসিইউতে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়বে না,আপনার ছেলেমেয়েদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের গণ্রুমে থাকতে হবে না।আপনি তাই কোনদিনও বুঝবেন না কখন একটা ছেলে সরকারি চাকরি না পেয়ে তারই ডিপার্টমেন্টের ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করে।

কারন আপনি এখন আর বাংলাদেশের ছাত্রজনতার রিপ্রেজেন্টেটিভ পপুলেশান নাই।আপনি এসি গাড়িতে চড়া,সাথে চল্লিশজন কন্সটেবলের প্রটেকশন নিয়ে ঘোরা একজন এলিট মানুষ।আপনি বৃষ্টিতে ভিজলে তা সাতদিন ধরে দেশের সবকটা মিডিয়া সম্প্রচার করে,আমরা যখন দিনে পুলিশ ও রাতে শুয়োরবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হই,মিডিয়া আমাদের অভিমান করে বয়কট করে।সেই বয়কট আমরা ভাঙাতে পারি না।
এত বছর ধরে চুপ থাকার পর আমরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছি,কেননা আমাদের আর কোন উপায় ছিল না।আপনি বা আপনার প্রজন্ম আমাদের প্রজন্মের জন্য এমন এক বাংলাদেশ তৈরি করেছেন যেখানে রাস্তা বন্ধ করে না দিলে কেউ কারো কথা শোনে না।

এবারের ছাত্রজাগরণকে কেবলই বায়ান্ন,ঊনসত্তর,একাত্তর আর নব্বইয়ের সাথে তুলনা করা যায়,স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে এত বড় ছাত্রজাগরণ আর কোনদিন হয় নি।
এখন আপনার কাছে মনে হয়েছে এটা জাতীয় ইস্যু না।জনাব জাফর ইকবাল,আপনি কি বোঝেন জাতি কি??আমাদের ইস্যু যদি জাতীয় ইস্যু না হয় তো এই জাতিটা কে?? স্যরি জনাব,আপনি সম্ভবত জাতি জিনিসটা কি তা বোঝেন না।
আপনি বছরের বারো মাসে তেরোবার বলেন আপনি রাজনীতি বোঝেন না,আপনি আজকে বললেন আপনি বিসিএস বোঝেন না,আপনার কথা শুনে মনে হয় আপনি জাতি কি আর জাতীয় ইস্যু কি,তাও বোঝেন না।
আপনি তাহলে বোঝেন টা কি??

জনাব জাফর ইকবাল,দুঃখিত,আপনি এই দেশের তরুণদের প্রতিনিধিত্ব করেন না।
দুদিন আগে যখন সুবিধাজনক মনে হয়েছে,তখন আন্দোলনের পক্ষে কথা বলেছেন,এখন আন্দোলন শেষ,এখন আপনি বলছেনঃ
"বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েদের সাত খুন মাপ, তারা যখন খুশি পুরো শহর, প্রয়োজন হলে পুরো দেশের মানুষকে জিম্মি করে ফেলতে পারে, তাদের কারও কাছে জবাবদিহি করতে হবে না। তাদের এই কর্মকাণ্ডে যে শিশুটি স্কুলে যেতে পারেনি, যে রোগীটি হাসপাতালে যেতে পারেনি, গার্মেন্টেসের যে মেয়েটি কাজে যেতে পারেনি, যে রিকশাওয়ালা তার পরিবারের খাবার উপার্জন করতে পারেনি, তাদের কারও জন্য দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের এই ছাত্রছাত্রীদের কোনও মায়া নেই। তাদের দাবিটি মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার বা সৈরশাসকের পতনের মতো জাতীয় কোনও দাবি নয়, নিজেদের একটা চাকরি পাওয়ার সুযোগটা বাড়িয়ে দেওয়ার দাবি।"

কই,আমরা তো একটা এম্বুলেন্সকেও আটকাই নি!!এম্বুলেন্স আটকায় ভিআইপিদের প্রোটোকল দিতে গিয়ে বানানো কৃত্রিম জ্যাম,কই তা নিয়ে লিখেছেন কখনো??
রাস্তার সাধারন মানুষের কষ্ট আপনার নজর কাড়লো,শত শত ছাত্রছাত্রীর ওপর নির্যাতন আপনার নজরেই পড়লো না,এখানেই আপনাকে আমরা চিনে ফেলেছি জনাব জাফর ইকবাল।

সায়েন্স ফিকশন আর কিশোর উপন্যাস লেখা আপনি, ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল কখন মীর জাফর ইকবালে পরিণত হলেন???

পঠিত : ৭০৪ বার

মন্তব্য: ০