Alapon

আমি মুসলিম পাশাপাশি বাঙালীও, আমার মঙ্গল শোভাযাত্রা পালনে সমস্যা কোথায়?

“মুসলিম হিসেবে আমরা যদি বছরে দুইটা ঈদ উদযাপন করতে পারি, তাহলে বাঙালী হিসেবে একটা দিন নববর্ষ পালন করতে সমস্যা কোথায়?”

প্রগতিশীল এক আপুর এমন যুক্তি শুনার পর অস্কারজয়ী ম্যুভি ‘লাইফ অব পাই” এর একটা দৃশ্যের কথা মনে পড়ে গিয়েছিল আমার। ম্যুভির নায়ক ‘পাই প্যাটেল’ ছোটবেলায় একসাথে তিনটি ধর্ম পালন করত। সে প্রথমে মন্দিরে গিয়ে পূজা করে, তারপর মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করে, অতঃপর গির্জায় গিয়ে যীশুর মূর্তির সামনে প্রার্থনা করে! তার ধারনা এভাবে সে সকল ধর্মের গড/দেবতাকে সন্তুষ্ট করতে সক্ষম হবে!

প্যাটেলের এমন উদ্ভট কার্যকলাপ দেখে তার বাবা মন্তব্য করেন- “মানুষ কখনো একসাথে দুইটা ধর্মে বিশ্বাস করতে পারে না। একসাথে একাধিক ধর্ম পালন করার মানে হল- তুমি আসলে কোনটাই বিশ্বাস করছ না। এভাবে তুমি সবগুলো ধর্মের সাথেই প্রতারনা করছ।”

পহেলা বৈশাখ কিংবা মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করাটা যত বড় অপরাধ, এটাকে ইসলামসম্মত কিংবা মুসলিমদের জন্য বৈধ দাবী করাটা তারচেয়েও হাজারগুন বড় অপরাধ। আমাদের মনে রাখা উচিৎ, পরষ্পরবিরোধী দুইটা বিশ্বাস নিয়ে কেউ চলতে পারে না। যখন দুইটা বিশ্বাসের মধ্যে একটা সংঘর্ষ বেধে যাবে তখন আমাদেরকে যে কোন একদিকে যেতে হবে। যখন মঙ্গল শোভাযাত্রা বা হোলির মত শিরক আপনার সামনে উপস্থিত হবে, তখন আপনাকে ‘ইসলাম’ অথবা ‘বাঙালীত্ব’ এই দুইটা পরিচয়ের যে কোন একটা বিসর্জন দিতে হবে। মুসলিম পরিচয়ের চেয়ে বাঙালীত্ব যদি আপনার কাছে অধিক গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়, তাহলে মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নিন।

তবে সেক্ষেত্রে নিজেকে মুসলিম দাবী করার আর কোন অধিকার আপনার থাকবে না। আর যদি নিজেকে প্রকৃতই মুসলিম মনে করেন, তাহলে মঙ্গল শোভাযাত্রা কিংবা হোলিতে অংশগ্রহণের চিন্তা মাথা থেকে জাস্ট ঝেড়ে ফেলা উচিৎ। এটা মুসলিমদের সংস্কৃতি নয়, মুসলিমদের উৎসব নয়, কখনো ছিলও না, কখনো হবেও না। এটা হিন্দু ধর্মাবলম্বী বাঙালীদের স্বতন্ত্র আচার-অনুষ্ঠান যা মুসলিমদের উপর জোরপূর্বক চাপিয়ে দেয়ার প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। পৃথিবীর সকল মুসলিমও যদি এতে অংশগ্রহণ করে তবু ইসলাম এটাকে বৈধতা দেবে না। মঙ্গল শোভাযাত্রা এক কথায় মুসলিদের জন্য হারাম, এটা নিয়ে বিতর্কের কোন সুযোগ নেই, সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। কুরআন-হাদীস-ইজমা-কিয়াস মোতাবেক এটা মুসলিমদের জন্য পরিস্কার নিষিদ্ধ

আমাদের তথাকথিত প্রগতিশীল ও মডারেট মুসলিমরা যেন আজ ঠিক তাই করছে! একদিকে নিজেদেরকে তারা মুসলিম দাবী করছে, আবার আরেকদিকে মঙ্গল শোভাযাত্রা, হোলি, চৈত্র সংক্রান্তি ইত্যাদি ভিন্ন ধর্ম সংশ্লিষ্ট আচার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের পক্ষে নানান যুক্তি দাড় করাচ্ছে। অথচ ইসলাম এগুলো পরিস্কার ভাষায় নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।

সচেতনতার অভাবে অথবা ধর্মীয় বিধিনিষেধ না জানার কারনে কিংবা অন্যদের সাথে তাল মেলাতে গিয়ে কেউ যদি পহেলা বৈশাখ উদযাপন করে তাহলে সেটা এক জিনিস। কিন্তু কোন মুসলিম নামধারী ব্যক্তি যদি সবকিছু জেনে বুঝে, ধর্মীয় বিধিনিষেধ সম্পর্কে অবহিত হয়েও হোলি কিংবা মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণের পক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করে, তাহলে তাকে কি বলবেন?

এটা তো ইসলামের বিরুদ্ধে সরাসরি বিদ্রোহ ঘোষণা করার শামিল। পহেলা বৈশাখের প্রায় সবগুলো আচার-অনুষ্ঠানই হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্ম সংশ্লিষ্ট এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য। আর ইসলাম এসব কার্যকলাপকে মুসলিমদের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষনা করেছে এটাও প্রত্যেকটা মুসলিমের জানা উচিৎ। কেউ যদি না জানে তাহলে মুসলিম হিসেবে এটা তার চরম ব্যর্থতা। আর কেউ যদি সবকিছু জেনেও পহেলা বৈশাখে মুসলিমদের অংশগ্রহণ করার পক্ষে সমর্থন ব্যক্ত করে, তাহলে মুসলিম নামধারী হলেও ইসলামের দৃষ্টিতে সে কাফির হিসেবেই গণ্য হবে।

কারন সে ইসলামের বিধানকে সরাসরি অস্বীকার ও অবমাননা করছে, মিথ্যা প্রতিপন্ন করছে। ইসলাম যে জিনিসকে স্পষ্ট ভাষায় নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে, সেটাকে বৈধ বা হালাল দাবী করার মানেই হল- আপনি ইসলামকে অস্বীকার করছেন। নিজেকে মুসলিম পরিচয় দিবেন, আবার মঙ্গল শোভাযাত্রা/হোলির মত ইসলাম বহির্ভূত কার্যকলাপের পক্ষে সাফাই গাইবেন- এটা কেমন ভন্ডামী?

আর ইসলাম যেটা হারাম ঘোষনা করেছে সেটা সর্বাবস্থায় হারাম। হাজার বছরের ঐতিহ্য হলেও হারাম, কোটি বছরের সংস্কৃতি হলেও হারাম। হাজার বছর আগে আমাদের পূর্বপুরুষরা ভুল করেছে বলে আমাদেরকেও সেই একই ভুল করতে হবে- এটাই বা কেমন আবদার?

আমাদের প্রায় সবার পূর্বপুরুষই একসময় হিন্দু ছিল। তারা কুসংস্কারাচ্ছন্ন ছিল। আরব ও পারস্যের অগ্রসর মুসলিমরা উপমহাদেশ দখল করার পর তাদের সংস্পর্শে এসে আমাদের পূর্বপুরুষরা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছিল। তারা মূর্তি পূজা ও পশুপাখির উপাসনা ছেড়ে দিয়ে স্বেচ্ছায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিল।

আর সেটারই সুফল হিসেবে আমরা মুসলিম পরিবারে জন্ম লাভ করার সৌভাগ্য লাভ করেছি। কিন্তু যারা এই সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত হয়েছে- অর্থাৎ যারা অমুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করছে তারা চায় আমরা যেন আবার আমাদের পূর্বপুরুষদের ভুলের পুনরাবৃত্তি করি। তারা আমাদেরকে ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির মিষ্টি মিষ্টি কথা শুনিয়ে হাজার বছর পেছনে নিয়ে যেতে চায়। আমাদেরকে পশুপাখি ও মূর্তির পূজারী বানাতে চায়, অশ্লীলতা ও নোংরামীতে নিমজ্জিত করতে চায়। কিন্তু সচেতন মুসলিমরা কখনোই বিভ্রান্ত হবে না।ইন-শা আল্লাহ।

পঠিত : ১৩৭৫ বার

মন্তব্য: ০