Alapon

জাষ্টিস জিনিষটা খুব ভয়ংকর! বাপকেও ছাড়ে না।

কোটা নিয়ে দেশ জুড়ে যে আন্দোলন হয়ে গেলো, প্রায় জায়গায় একটা ব্যানার দেখে বেশ হাসি পেলো। 
অনেক ছেলে মেয়েরা এই লাইনটা লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে উঁচু করে ছিলো। লাইনটা ছিলো 'চেয়েছিলাম কোটা সংস্কার, হয়ে গেলাম রাজাকার'!

আমার হাসি পেয়েছে, কারন ব্যপারটা অনেকটা এমন। আপনার পাশের পাড়ায় আগুন লেগেছে,  আপনি টিভি দেখতে ব্যস্ত, আগুনে মানুষ পুড়ে যাচ্ছে, ঘর বাড়ি পুড়ে যাচ্ছে,  আপনি শুনতে পাচ্ছিলেন, কিন্তু আপনি ঐ যে টিভি দেখতে ব্যস্ত ছিলেন। উলটো মানুষের চিৎকার চেঁচামেচিতে বিরক্ত হয়েছিলেন খুব। রেগে গিয়ে বলেছিলেন, আগুন লাগলেই এমন আকাশ মাথায় তুলতে হয় নাকি? পাশের পাড়ায় আগুন লেগেছে, আপনার কী? আপনির জন্য টিভি দেখাটা দরকারী ছিলো। এখন যখন আগুন ছড়াতে ছড়াতে আপনার ঘরে এসে পৌঁছেছে, এখন আপনি চিৎকার শুরু করেছেন বাঁচাও! বাঁচাও!

আমি তাই হাসছি। হাসছি আপনাদের অবস্থা দেখে! অন্যদেরকে যখন রাজাকার উপাধি দিয়ে ফাঁসি দেয়া হয়েছে, জামাত-শিবির সব রাজাকার গনহারে তকমা লাগিয়ে স-মা-নে একদম স-মা-নে টর্চার করে যাকে যেখানে পেয়েছে সেখানে ধরে মেরেছে গুম করেছে যা যা ইচ্ছা যেভাবে যেভাবে ইচ্ছা করেছে সরকার এবং তাদের নতুন রক্ষীবাহিনী, আপনারা কাঁধ শ্রাগ করেছেন বলেছেন, জামাত-শিবির এর পুলাপাইন, ওদেরকে মারলে আমার কী?

আমি এবং আমার মত অনেকেই যারা জামাত-শিবির দেখতে পারি বা না পারি জামার শিবির সম্পর্কে নিজের ব্যক্তিগত অভিমতকে একপাশে রেখে ফেয়ার ট্রায়ালের কথা বলেছি গুম-হত্যা-নির্যাতনকে অন্যায় বলেছি 
আমাদেরকে তখন রাজাকার ডাকতে আপনাদেরই অনেকেই টোটালি দ্বিধা করেননি।

আমি, যে আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, জামাত-শিবির যদি কখনো বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসে, তা হবে বাংলাদেশীদের জাতিগত পাপের খোদায়ী পানিশমেন্ট, কারন সেক্যুলার অত্যাচারীর বিরুদ্ধে আপনি যখন কথা বলেন 
তখন অন্ততঃ আপনাকে ধর্মের নাম দিয়ে "মুরতাদ" "কাফির" বানিয়ে কেউ দমাতে পারবে না, আপনাকে টর্চার করতে পারবে আপনাকে, আপনার পরিবারকে খুন করে ফেলতে পারবে, যা এই সরকার করেছে এবং করে যাচ্ছে, কিন্তু জামাত শিবির যা করবে তা হলো নিজেদেরকেই ধর্ম বানিয়ে ফেলবে, তখন জামাত শিবিরের বিরুদ্ধে কথা বলা হবেধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলার মত, রাষ্ট্র তখন যখন ধর্ম, আমি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে চিৎকার করতে পারি কিন্তু ধর্মের বিরুদ্ধে?!? রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে খুন হলেও একটা আত্মতৃপ্তি নিয়ে মরা যায়। কিন্তু ধর্মের বিরুদ্ধে খুন হলে সে খুন হয়ে যাওয়ার দায় নিতেও প্রচুর কনফিউশান কাজ করে। তাই আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি জামাত শিবির আর পলিটিক্যাল পাওয়ার- এই দুইয়ের কম্বিনেশান সবচে' ভয়ংকর।

কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আমি তা যতই চরমভাবে না চাই, তাই বলে আমি জামাত-শিবিরের সাথে কোনো অন্যায় হলেই তা মুখ বুঁজে সয়ে যাবো- সে পদার্থ আমি না। এমনকি এখন যে লীগ সরকারকে আমি চরমভাবে ঘৃনা করি, 
এরাও যদি কালকে ক্ষমতাহীন হয়, আমার প্রথম দাবী হবে - ফেয়ার ট্রায়াল।

কিন্তু আপনি কি করেছেন? জামাতের নেতারা রাজাকার- একটা গণঅভিযোগে আপনি মব-জাষ্টিস'র নামে মব-কিলিং-কে সাপোর্ট করেছেন। প্রত্যেকটা বিচার এতই ফেইক ছিলো এত ফালতু ছিলো এমনেষ্টি থেকে শুরু করে প্রত্যেকটা ইন্ট্যারন্যাশনাল হিউমেন রাইটস অর্গানাইজেশান অবজেকশান জানিয়েছিলো এই ফেইক ট্রায়ালগুলোটতে। এমনকি স্কাইপ স্ক্যান্ডালে নিজের কানে আপনারা শুনেছেন এক বিচারক আরেক বিচারককে কার্টুনের মত বলছে আমি দাঁড়ায় যাবো আপনি আমাকে বসায়ে দিবেন তাহলে কেউ বুঝবে না আমরা আগেই এই রায় লিখে রাখছি!!

এসব লিখতে গেলে এখন মহাকাব্য হয়ে যাবে এনিওয়েকিন্তু সবকিছুকে আপনি কাঁধ ঝাঁকিয়ে শ্রাগ করে না দেখার ভান করেছেন। কেনো? কারন জামাত শিবির মানেই রাজাকার! একটা মব-শ্লোগান।আমার মত পাবলিক যখন বলেছে শিবিরের এই ছাব্বিশ সাতাশ বছরের ছেলেটা রাজাকার হয় ক্যামনে?!? তার তো যুদ্ধের সময় জন্মই হয়নি!! আপনি ক্ষেপে গিয়ে বলেছেন, ওর বাপ জামাত, রাজাকারের বাচ্চাও রাজাকার! জামাত শিবির সব রাজাকার! সবগুলাকে মেরে বাংলাদেশকে পবিত্র করা হোক! আপনার মব-হিংস্রতায় আমি আর আমার মত পাবলিকরা ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলাম। হাঁ করে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেছি কী নিদারুন হিংস্রতায় আপনি এই সরকারের সমস্ত গুম-হত্যা-ফাঁসি- সব সব সব ধরনের অত্যাচারকে পাবলিক সাপোর্ট দিয়ে গিয়েছেন!

এখন? এখন কেনো তাহলে ঐ একই সরকার পার্লামান্টে দাঁড়িয়ে "রাজাকারের বাচ্চা" ডাকায় কান্না শুরু করেছেন?!

কাম অন ডিয়ার, অন্যের সাথে হওয়া অন্যায় কে সাপোর্ট করে গিয়েছেন স্রেফ তাদেরকে দেখতে পারেন না বলে 
তাদের মতের সাথে আপনার মতের মিলে না বলে এখন আপনার উপর হওয়া অন্যায়-এ কেনো এমন ডেকে ডেকে বলছেন, "দেখো! দেখো! আমাকে রাজাকার ডেকেছে!"

হা হা হা! ইয়্যু নো হোয়াট? পোয়েটিক জাষ্টিস বলে একটা কথা আছে। এই কথাটায় আবার আমি প্রচন্ড রকম বিশ্বাস করি। খুব দারুন লাগে শুনতে। পোয়েটিক জাষ্টিস। ফ্রেজটাই কেমন যেন কবিতার মত সুন্দর। আপনার সাথে এই সুন্দর জিনিষটাই হচ্ছে। পোয়েটিক জাষ্টিস। দারুন একটা জিনিষ।

জামাত হোক শিবির হোক লীগ হোক হেফাজত হোক নপুংশক জাতীয় পার্টি হোক যা ইচ্ছা তা হোক 
যা-ই হোক না কেনো তাকে আপনি যতই অপছন্দ বা ঘৃনা করেন না কেনো যতক্ষন পর্যন্ত তার সাথে হওয়া অন্যায়টাকে অন্যায় না বলছেন সে অন্যায় একদিন আপনার সাথেও হবে -এটাই পোয়েটিক জাষ্টিস। 
এ থেকে আপনার আমার কারো মুক্তি নেই।

জীবনে এতবেশী পোয়েটিক জাষ্টিস দেখে ফেলেছি অলরেডী, 
এখন তাই এই প্ল্যাকার্ড দেখে হাসি পেয়ে গেলো। 
ইশ, কী কষ্টে লিখেছে 
চেয়েছিলাম কোটা সংস্কার, হয়ে গেলাম রাজাকার!

হাহাহাহা, ভাইটি, বোনটি, দুইদিন পরে যখন তুমি গায়ের কাপড় চাইবে ক্ষুধায় খাবার চাইবে অসুখে অষুধ চাইবে 
তখনো মতিয়া চৌধুরী পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে তোমাকে রাজাকারের বাচ্চাই গালি দিয়ে যাবে। কেনো জানো ভাইটি, বোনটি? কারন পলিটিক্যাল গেইম খেলার সময় লীগ সরকার যখন এই একটা ওয়ার্ড ইউজ করে রাজাকার গালি দিয়ে অপজিশনকে খতম করেছে সাতাশ বছরের ছেলেকেও রাজাকার বানিয়ে দিয়ে ঘর থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে লাশ ফেরত দিয়েছে নদীতে তখন তুমিই ওদেরকে সাপোর্ট করেছিলে যে! তখন তুমিই তো শাহবাগে গিয়ে নেচেছিলে 
গান গেয়েছিলে মব-উল্লাসে ফেটে পড়েছিলে।

তো এখন কেনো কান্দো?! পোয়েটিক জাষ্টিসের ঠ্যালা সামলাও বাছা! পোয়েটিক জাষ্টিস মাত্র শুরু হয়েছে স্রেফ কোটা?! হা হা, গায়ের কাপড়ে আর পেটের খাবারে টান পড়ার সময় আসতেছে সামনে... জাষ্ট ওয়েট এন্ড সী, পোয়েটিক জাষ্টিস জিনিষটা খুব ভয়ংকর! বাপকেও ছাড়ে না।


পঠিত : ৭১৭ বার

মন্তব্য: ০