Alapon

হলের ব্যালকুনি

আবু বকর হলের ৫০৬ নং রুম। শহরে থাকার সুবাধে সবসময় থাকা হয়ে উঠে নি হলে। তবে মাঝে মাঝে থেকেছি। রাত জেগে আড্ডা দিয়েছি। আর ফিল করেছি অনেক কিছু ।

আজ তানভীরের রুমে গিয়েছিলাম আড্ডা এবং একাডেমিক কাজে। তার ব্যালকুনিটা এতো প্রবল ভাবে টেনেছে আমাকে, মনে হচ্ছিলো এখানে কাটিয়ে দিতে পারি অজশ্র সময়।

মনে হচ্ছিলো, একটা খাতা নিয়ে বসি। আগামী বইমেলার বইটা এখানে লিখে শেষ করি। অবসরে গল্পের বই নিয়ে, কাটিয়ে দি এক একটা প্রহর।প্রিয় মানুষগুলার সাথে কথা বলি এই ব্যালকুনিতে দাঁড়িয়ে। একটা ফুলের গাছ লাগাই, সকালে উঠে ফুলের ঘ্রাণে মনকে আরো সতেজ করি। 

একটু পরপর ঝিকঝিক ট্রেনের শব্দ আর মৃদু বাতাসে, মনে হলো,ক্রিয়েটিভ কোন কাজের জন্য,এই জায়গাটা অসাধারণ। কাজের কোনো ঝট থাকলে, পটাপট তা একে একে খুলে যাবে।

চারদিকে সবুজ প্রান্তর, আর রাতের বেলা ঝিঁ ঝিঁ পোকার শব্দ। এই হলে যারা বসবাস করে, তাদের মতো ভাগ্যবান, আর কেউ হতে পারে না। আমার এখন মনে হয়, কেনো যে আমি শহরের বাসিন্দা হলাম ! আমার মা-বাবা কেনো দূর দেশে থাকলেন না। তাহলে আমিও হয়তো, হলে থাকার এবং এই প্রকৃতির সাথে মিশে যাওয়ার সুযোগটা পেতাম।

হাছিবের রুম ৪০৮। সেখানে কেটেছে প্রাণ উজাড় করা সময়। কতো যে মজা, কতো যে স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে এই রুমটাতে তা এই রুমে যারা থেকেছে, একমাত্র তারাই সেই ইতিহাতের সাক্ষী।

ভাজা মাছ উল্টাইতে না জানা মাসুদ, যে সেই লেভেলের চিড়িয়া, সেটাই জানতাম না। জানতাম না যায়েদের মতো বন্ধুর কথা। আর হাছিবের মতো দাঁড়িমানবের কথা।

তারপরও আমাকে বেশী টেনেছে তানভীরের রুম নং ৫০৬। হাছিবের রুমের ব্যালকুনি ছিলো পাহাড়ের দিকে মুখ করে। আমি মুগ্ধ বাতাসে ট্রেনের ঝিকঝিক শব্দ শুনতে বেসেছি ভালো।

পৃথিবীতে অনেক সময় আসবে। কিন্তুু থেকে যাবে কিছু স্মৃতি। সেই স্মৃতিগুলার মাঝে ঠাঁই করে নিবে, এই হলের থাকা মুহুর্তগুলো।

কখনো চিন্তা করি নি মধ্যরাতে রেললাইনে হাঁটবো। হাইওয়ের পাশে বসে বন্ধুরা মিলে সুখ দুখের গল্পের সাথে চা খাবো।

শীতের রাতে বন্ধুর গায়ে থেকে কম্বল টান মেরে নিয়ে নিবো। সকাল হলে জিকুর দোকানে নাস্তার সাথে দেখা হবে, অনেক প্রিয় মুখের সাথে। আর বলবে, ভাই আপনি হলে !

একদিন আমার সময় ফুরিয়ে যাবে। কিন্তুু থেকে যাবে স্মৃতিমাখা ক্যাম্পাসের সময়। প্রকৃতির তরতাজা অক্সিজেনে বেড়ে উঠার মানুষগুলার প্রতি হিংসা হয়। কেনো যে ৪ বছর তাদের সাথেও থাকার সুযোগটা হলো না !

ভালোবাসি " উসমান হলের " হাছিবের ৪০৮ এবং " আবু বকর হলের  " ৫০৬। 

পঠিত : ১৩৩৮ বার

মন্তব্য: ০