Alapon

মুসলিম উম্মাহ এক ভয়াবহ ঘূর্ণিপাকে

নিজের দেশেই এখন আমাদের সমস্যার অন্ত নেই। বুখারী খতমে হিন্দু প্রধান অতিথী। মাহফিলে কুরআনের কথা বলতে আলিমদের কে বাধা। বর্ষবরণের নামে বিজাতীয় সংস্কৃতির আগ্রাসন। শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা, নকলের ছড়াছড়ি। সর্বত্র ভেজাল । এমনকি মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট নিয়েও। তাও আবার সচীব পর্যায়ে। আহলে হাদীস, সালাফী, মাযহাব-তাকলীদ, তাবলীগ, পীর-মুরীদ, কওমী-আলীয়া। এক ভয়াবহ ঘূর্ণিপাক। যেন যাওয়ার কোন জায়গা নেই। দাঁড়াবার কোন ঠাঁই নেই। ভাবার কোন অধিকার নেই। বাকস্বাধীনতার কোন স্বাধীনতা নেই। এরপরও কথা বলতে হয়। ভাবতে হয় বিশ্বের মুসলিম উম্মাহকে নিয়ে। কারণ, অন্যথায় যে আমরা হয়ে যাবো আল্লাহর বিচারের কাঠগড়ায় অপরাধী।

রাসূল (স.) বলছেন: 
“যারা মুসলিম উম্মাহকে ভাবে না, তারা আমার উম্মাত নয়”। 
তবে আজ গোটা মুসলিম উম্মাহ নিয়ে না লিখলেও, কথা বলবো মুসলিম উম্মার প্রাণের জায়গা সৌদি আরবকে নিয়ে। সম্প্রতি সৌদি যুবরাজ তাঁর দেশে সংস্কারের নামে যা করছে, তাতে একজন মুসলিম হিসেবে আমি মারাত্মকভাবে ব্যথিত। আমার বিশ্বাস, গোটা মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে তার এ সব কর্মকান্ড দেখে। তাকে অর্বাচিন বললেও হয়ত কম হবে। 

তাকে যুবরাজ ঘোষণার বিষয়টিও অনেকের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ। এ সব সৌদির অভ্যন্তরীন বিষয়, এ রকম চিন্তা করারও আমাদের সুযোগ নেই। সৌদি আরব অন্যান্য দেশের মত নয়। ঈমান ও ইসলামের প্রশস্ত চেতনার মানদন্ডে বিচার করতে গেলে বলতে হয়, সৌদি সকল মুসলমানের দেশ।
কারণ, 
ক. এখানেই জন্ম নিয়েছেন আমাদের প্রিয় নবী, বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ (স.)। 
খ. এই ভূমিতেই অবতীর্ণ হয়েছিলো আল-কুরআন।
গ. এখানেই প্রতি বছর ইসলামের অন্যতম রুকন হাজ্জ পালিত হয়। 
গ. এখানেই আল্লাহর ঘর “কাবা” অবস্থিত। যাকে আল্লাহ সমস্ত মানুষের জন্য নিরাপত্তা ,আশ্রয়কেন্দ্র  ও কিবলাহ বানিয়েছেন। 
ঘ. এই ভূমিতেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল বদর, উহূদ, খন্দক, খয়বর,তাবুক ইত্যাদি। 
ঙ. এই ভূমির ধুলাবালুর সাথে মিশে আছে প্রিয় নবীজির (স.) পবিত্র পায়ের স্পর্শ। আছে অসংখ্য সাহাবির স্মৃতি। 
চ. যে ভূমিকে অবস্থিত আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় জায়গা, মক্কা। 
ছ. যেখানে অবস্থিত রাসূলের মসজিদ (স.), কবর , অসংখ্যা সাহাবীর কবর। 
জ. সেখানে অবস্থিত আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার অসংখ্যা নিদর্শন: মাকামু ইব্রাহীম, সাফা-মারওয়া, ঝমঝম কুপ, মিনা, মুযদালিফা, আরাফাহ ইত্যাদি। 

এক কথায়, মক্কা-মদীনা, হারামাইন শারীফাইন যেই ভূমিতে অবস্থিত। সেই ভূমি শুধু সৌদি রাজ পরিবারের নয়; সমগ্র পৃথিবীর মুসলিম উম্মাহ  বিশ্বাস, আবেগ, ভালোবাসা, আশা-আকাংখার সাথে রয়েছে এর ঘনিষ্ঠ ও গভীর সম্পর্ক। 
কথা ছিলো, সৌদি রাজপরিবার বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর নেতৃত্ব দিবে। মুশরিক, কাফির , নাস্তিক বিরোধী সংগ্রামে উম্মাহ যখন ক্লান্ত, তখন তাদের কে দিবে স্বান্ত্বনা, সাহস, শক্তি, পরামর্শ ও সঠিক নেতৃত্ব।
কিন্তু বাস্তবতা হলো উল্টো: 
ক. সৌদি যুবরাজ আজ আমাদের প্রিয়নবীর (স.) দেশে খুলেছে সিনেমা হল। তাও আবার মুশরিকদের সহযোগিতায়। তাদের সিনেমা দিয়ে। সেই সিনেমা হলে কালিমা খোঁচিত পতাকা প্রদর্শন করা হচ্ছে। এটা কি কালিমার সাথে বেয়াদবি নয়? উপহাস নয়? সিনেমা হলে কালিমা প্রদর্শন এর চেয়ে বড় ধৃষ্ঠতা আল্লাহর সাথে কী আছে? এই কালিমা সমস্ত মুমিনের হৃদয়স্পন্দন। কালিমা নিয়ে ঠাট্টা করার এই অধিকার কে দিয়েছে যুবরাজকে? যেই নবী সারা জীবন অশ্লীলতা বিরোধী আন্দোলন করে একটি পবিত্র জাতি গঠন করেছিলেন, সেই নবীর দেশেই এখন ওরা অশ্লীলতার দুয়ার খুলে দিয়েছে। 

খ. মুসলমানেরদ চির শত্রু ইসরাইলের সাথে অতিমাত্রিক দহরম মহরম। নিজেদের গদি ধরে রাখার জন্য নিজেদের হাতে মুসলিম উম্মাহর কবর খনন করার কাজ নয় কি এটা? যদি গদির জন্য ইয়াহুদীদের পদলেহন করতে হয়, সেই গদির চেয়ে বাংলাদেশে এসে রিকশা চালানো অনেক শ্রেয় নয় কি? এ গদির যোগ্যতা তোমাদের নেই। যাদেরকে তোমরা বন্ধু বানিয়েছ, তারাই তোমাদেরকে ধ্বংস করে দিবে। মীরজাফররাও কিন্তু ইংরেজদের সাথে আঁতাত তরে বাঁচতে পারেনি। 

গ. মসজিদের মিম্বার থেকে খতীবদেরকে টানাহেচড়া করে গ্রেফতার করা; আলিম-উলামাদের সাথে বেয়াদবী করা, তাদেরকে মুখ বন্ধ করে দেয়া, তাদেরকে সত্য বলতে বাধা দেয়া, সত্য বললে, গুম করা এসব কি সৌদি আরবের মত দেশের শাসকদের জন্য শোভা পায়? 
ঘ. মিশরের নরঘাতক সিসির সাথে বন্ধুত্ব ভয়াবহভাবে প্রশ্নবিদ্ধ।
ঙ. ইসলামের প্রতিষ্ঠিত ফিকহী মাযহাবগুলোর বিরুদ্ধে কিছু পেইড এজেন্ট ঢুকিয়ে দিয়ে গোটা উম্মাহকে খন্ডিত-বিখন্ডিত করার ভয়াবহ খেলা। 

মোটকথা, ইসলামের শিক্ষা বাদ দিয়ে সৌদি যুবরাজ ও তার অনুগতরা পাশ্চাত্যের যে পথ বেছে নিয়েছে তাতে যে শুধু তারাই ক্ষতিগ্রস্থ হবে তা নয়। বরং নীলনকশা অনেক সুদূর প্রসারী। সৌদি হলো মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও বিশ্বাসের প্রতীক। সৌদিকে যদি ধ্বংস করা যায়, তাহলে মুসলিম বিশ্বকে ধ্বংস করা সহজ হবে। অতএব, আমরা আশা করবো, সৌদি যুবরাজ তার এই ধ্বংস খেলা থেকে ফিরে আসবেন। তার মধ্যে চৈতন্য জাগ্রত হবে। তার মনে রাখতে হবে, এটা শুধু তাঁর বাপদাদার মালিকানা নয়; সৌদি গোটা মুসলিম উম্মাহর আশা আকাংখার কেন্দ্রভূমি। অতএব,তাদের কর্মকান্ড যেন নাস্তিকদের কে অারো সীমালংঘনে উৎসাহিত না করে। রাষ্ট্রক্ষমতা একটি আমানাত। এই আমানাতের সাথে তারা খিয়ানাত করবেন না এটাই আমাদের আশা। 

অন্যথায়, ইসলামের পবিত্র স্থানসমূহ তথা বিশ্বনবীর জন্মভূমি,  হিজরতের ভূমি ও ওহীর ভূমির পবিত্রতা রক্ষার জন্য মুসলিম উম্মাহকে   অবশ্যই এগিয়ে আসতে হবে। এভাবে চোখের সামনে ধ্বংস হতে দেয়া যায় না।

পঠিত : ১০০০ বার

মন্তব্য: ০