Alapon

হজরত উমার (রা) এর সিদ্ধান্ত গ্রহণের পদ্ধতি

আমীর মুয়াবিয়া ইবনে আবী সুফিয়ান (রা) সিরিয়া ও পশ্চীম জর্ডান বাহিনীর প্রধান সেনাপতি ছিলেন। তিনি ছিলেন উচ্চাভিলাষী এবং সেই সাথে দক্ষ এবং বীরও বটে । তাকে প্রায়ই রোমক বাহিনীর মুখোমুখি হতে হত।এজন্য তিনি নৌ-বাহিনী গড়ে তোলার গুরুত্ত্ব তিনি হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করতেন।

তার মতে, একটি সুশৃংখল নৌ-বাহিনী ছাড়া রোমকদের যথার্থ মোকাবেলা করা ছিল কঠিন ব্যাপার। তাই তিনি আমীরুল মু’মিনীন হজরত উমার (রা) এর নিকট একটি নৌ-বাহিনী গঠনের আবেদন করেন। আবেদনে তিনি নৌ-বাহিনী গঠনের গুরুত্ত্ব ও উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তৃত বর্ণনা দেন। খলিফা উমার (রা) মিশরের গভর্ণর আমর ইবনুল আ’স এর নিকট সমুদ্র-ভ্রমন সম্পর্কে সঠিক তথ্য চেয়ে একটি চিঠি লেখেন ।

জবাবে ইবনুল আ’স লিখেন,
‘আমীরুল মু’মিনীন! সমুদ্র আল্লাহ তায়ালার এক বিরাট সৃষ্টি। তার উপর আল্লাহর এক ক্ষুদ্র সৃষ্টি মানুষ আরোহন করে। সমুদ্রে বসে পানি আর আকাশ ছাড়া কিছুই দেখা যায় না। আকাশ যদি মেঘাচ্ছন্ন হয়, পিলে চমকে ওঠে! আর সমুদ্র যদি উর্মিমুখর হয়, তাহলে মূর্ছা যাওয়ার অবস্থা হয়। এই অবস্থায় আল্লাহর প্রতি সন্দেহ কমে যায় আর একীন বেড়ে যায়। মানুষের সমুদ্র যাত্রার অবস্থা এরকমঃ একটা ভাসমান কাঠের টুকরার উপর একটা পোকা উড়ে পড়লো। কাঠের টুকরাটি যদি উলটে যায় তাহলে পোকাটি ডুবে যাবে, আর যদি সঠিকভাবে কিনারে পৌঁছে তাহলে পোকাটি আনন্দের সাথে উড়ে যাবে” ।

ইবনুল আ’সের (রা) এই উত্তর আসার পর হজরত উমার (রা) হজরত মুয়াবিয়াকে (রা) লিখেন,
“আমি সেই সত্তার শপথ করে বলছি-যিনি হজরত মুহাম্মাদ (সা) কে সত্য নবী রূপে প্রেরণ করেছেন- আমি সমুদ্র অভিযানে একজন মুসলমানকেও প্রেরণ করবো না”।

হজরত উমারের (রা) সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্টাইল দেখুন। আমির বিন মুয়াবিয়া (রা) একজন সাহাবী ছিলেন কিন্তু সমুদ্রের ব্যাপারে ওনার কথাকে চূড়ান্ত মনে না করে মিশরের গভর্ণর আমর ইবনুল আ’স (রা) অর্থাৎ আরেকজন সাহাবীর কাছে আবার জানতে চাইলেন -এটা আমার কাছে হজরত উমারের (রা) বিচক্ষণতা আর বিশ্বাস-অবিশ্বাস, আস্থা-অনাস্থার মাত্রা নির্দেশক মনে হয়েছে ।

আমীর মুয়াবিয়া ইবনে আবী সুফিয়ান (রা) সিরিয়া ও পশ্চীম জর্ডান বাহিনীর প্রধান সেনাপতি ছিলেন। এটা থেকে বুঝা যায় যে হজরত উমার (রা) তাকে ঠিক অবিশ্বাস করতেন না । অবিশ্বাস করলে সেনাপতি হিসেবে নিযুক্ত করতেন না। আবার সেই সেই বিশ্বস্থ সেনাপতির উপর সমুদ্র বর্ণনায় আস্থা স্থাপন করতে পারলেন না।

কাকে কখন কোথায় কোন বিষয়ের উপর আস্থা স্থাপন করতে হবে -তার একটা নজরানা এটা। বিষয়টা আমার কাছে দারুণ লেগেছে, “বিশ্বস্ত মাত্রই যে বিশ্বস্ত নয়” -তার একটা ইঙ্গিত এটা ।

আরেকটা বিষয় সামনে আনতে চাই। আমরা যে কথায় কথায় নসিহত করার স্টাইলে বুঝিয়ে দিতে চাই যে আমাদের নেতারা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যকডেটেড -সেটা আসলে কতটুকু যৌক্তিক? নৌ-সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে হজরত উমার (রা) এর চাইতে হজরত মুয়াবিয়া (রা) কে আধুনিক বলা যেতে পারে। সেই সাথে হজরত উমারকে (রা) তুলনামূলকভাবে প্রাচীনপন্থী বলা যায় ।

কিন্তু তারপরেও নেতৃত্বের ক্ষেত্রে উমার অবিসংবাদিত আর হজরত মুয়াবিয়া (রা) বিতর্কিত। এটা বোধ হয় ইতিহাসের মাইর। মুসলমানদের কাছে বস্তুবাদ আর বাস্তববাদের পার্থক্য থাকা উচিৎ। আমাদের কাছে বস্তুবাদ হবে ম্যাটেরিয়ালিজম বলতে সরাসরি যা বুঝায় -সেইটা, আর বাস্তববাদ হবে "ওয়া ইজা আঝামতা ফাতাওয়াক্কাল আলাল্লাহ" -এটা ।

মুসলমানদের বাস্তববাদী হওয়া উচিৎ, বস্তুবাদী নয় ।

পঠিত : ১৩৫৪ বার

মন্তব্য: ০