Alapon

রোজার নয়টি শারীরিক উপকারিতা

রোজা রাখার মূল উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তোষ অর্জন। আত্মার পরিশুদ্ধি অর্জন, আল্লাহর সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি, তাকওয়া অর্জন ইত্যাদি রোযার মূল টার্গেট। রোজার ধর্মীয় দিক ছাড়াও রয়েছে শারীরিক বেশ কিছু উপকারিতা। আত্মিক ও দৈহিক উপকারিতার জন্য মাঝে মধ্যে রোজা রাখার চেষ্টা করা সবারই উচিত। তাছাড়া আর কয়েকদিন পরই রোজার মাস শুরু হতে যাচ্ছে। আজ আমরা জানবো রোজার কয়েকটি শারীরিক উপকারিতা। 

ওজন কমাতে সাহায্য করে : 
ওজন কমানোর অন্যতম নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি হলো রোজা রাখা। বিভিন্ন পরীক্ষায় দেখা গেছে যে, নির্দিষ্ট কয়েক ঘণ্টা উপোস করলে অনেক বেশি ক্যালোরি ক্ষয় হয়। এনার্জির জন্য শরীর ফ্যাট সেলগুলোকে ভেঙে দেয়। নিয়মিত ডায়টিং করার চেয়ে ক্যালোরি ক্ষয়ের জন্য মাঝে মধ্যে রোজা রাখা অনেক বেশি কার্যকরী।

হজম ক্ষমতা বাড়ে : 
রোজায় আমাদের পাচনতন্ত্র বিশ্রাম পায়। ফলে হজম ক্ষমতা বাড়ে। এর ফলে শরীরে মেটাবলিজমের হার বৃদ্ধি পায়। কারোর হজম ক্ষমতা দুর্বল হলে  মেটাবলিজমের হারও কমবে। ফলে শরীরে ক্যালোরি ক্ষয় কম হবে। রোজা হজম ক্ষমতাকে নিয়মিত করতে সাহায্য করে।

ক্ষুধা বৃদ্ধি করে : 
রোজা রাখলে ক্ষুধার অনুভূতি শক্তিও বাড়ে। এর ফলে শরীরে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় হরমোন সঠিকভাবে ক্ষরণ হয়।

মস্তিষ্কের কাজ ভালো করে : 
রোজা বা উপোসের ফলে মস্তিষ্কের ক্রিয়া আরও উন্নত হয়।  রোজার সময় নিউরোট্রফিক নামে বিশেষ  প্রোটিন অধিক উৎপন্ন হয়। এই প্রোটিন মস্তিষ্ককে আরো সজাগ করে তোলে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে : 
রোজায় শরীর থেকে বেশি মাত্রায় টক্সিন বেরিয়ে যায়। ফলে ক্ষতিকর ফ্রি র‌্যাডিক্যাল কম উৎপন্ন হয়। ফ্রি র‌্যাডিক্যাল কমে যাওয়ায় শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। এমনকি শরীরে ক্যানসার বাসা বাঁধার আশঙ্কাও কমে। রোজা রাখলে শরীরের ক্ষতিকারক ট্রাইগ্লিসারাইড এবং খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে আসে। ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে। রোজা রাখলে স্ট্রেস হরমোনের নিঃসরণের পরিমাণ কমে এবং মেটাবলিক রেট হ্রাস পায়। ফলে রোজা রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে এবং হৃৎপিণ্ডের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। রোজার কারনে রক্তের সুগারের মাত্রা কমে। এটা ইনসুলিনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।

ত্বক পরিস্কার করে: 
রোজায় শরীর থেকে ক্ষতিকর টক্সিন বেশি পরিমাণে বেরিয়ে যাওয়ায় ত্বক পরিষ্কার হয়। লিভার, কিডনির কাজ আরো ভালো হওয়ায় ত্বকে দাগ, ব্রন নির্মূল হয়।

রোজা যৌবন ধরে রাখে: 
নিয়মিত ডায়েটিং করলে একজন মানুষের দেহে যে প্রভাবগুলো পড়ে, মাঝে মধ্যে রোজা রাখলেও সেই একই প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। রোজা রাখার ফলে দেহে এমন কিছু প্রোটিন উৎসারিত হয় যেটা মস্তিষ্কের কোষগুলোকে অক্সিডেশনজনিত ক্ষতি থেকে রক্ষা করে এবং স্নায়ুকোষের উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। ফলে বয়সজনিত রোগ যেমন, অ্যালঝেইমার, হান্টিংটন বা পার্কিনসন্সের ঝুঁকি অনেকখানি কমে যায়। কয়েক ঘণ্টা পরপর নিয়মিত খাদ্য গ্রহণ রক্তে শর্করার মান সবসময় উঁচু রাখে। শক্তি উৎপাদনের জন্য এই শর্করাকে বিপাক হতে হয়। এই বিপাকের একটি উপজাত হলো জারণ। এই জারণের ফলে দেহে সৃষ্টি হয় অস্থিতিশীল অক্সিজেন অণু, যার সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক পরিণতি হলো বুড়িয়ে যাওয়াকে ত্বরান্বিত করা। কিন্তু রোজা বা উপবাস এ প্রক্রিয়াকেই পাল্টে দেয়। অনাহারের ফলে দেহে যে সাময়িক শক্তি সংকট হয় তা মস্তিষ্কের কোষগুলোকে প্রোটিন উৎপাদনে উৎসাহ দেয়, এমনকি নতুন ব্রেন সেলও জন্মায়।

ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায় ও ইনসুলিনের ক্ষমতা বাড়ায় : 
রোজা রাখলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে। নিয়মিত খাওয়া-দাওয়া মানে দেহকোষগুলোতে ইনসুলিনের স্থিতিশীল সরবরাহ। এই তৃপ্ত এবং অলস কোষগুলো তখন হয়ে যায় ইনসুলিন-রেজিস্ট্যান্ট। আর ডায়াবেটিসের লক্ষণ এটাই। কিন্তু মাঝে মাঝে খাওয়া-দাওয়া বাদ দিলে এ কোষগুলো আরও সংবেদনশীল হয়ে ওঠে এবং বিপাক করতে পারে দক্ষভাবে। এতে ইনসুলিনের সরবরাহ বাড়ে। কোষগুলো গ্লকোজ গ্রহণ করতে পারে আরো অধিক হারে। ফলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমার সঙ্গে সঙ্গে উচ্চরক্তচাপ এবং হার্ট-এটাকের আশংকাও কমে। 

রক্তে কোলেস্টেরল কমায় : 
রোজা রাখলে শরীরের ক্ষতিকারক ট্রাইগ্লিসারাইড এবং খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে আসে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের কয়েকজন কার্ডিওলজিস্ট একদল স্বেচ্ছাসেবীর ওপর একটি গবেষণা চালান। ৩০ দিন রোজা রাখার পর দেখা গেল দেহের ওজন বা সুস্থতাবোধের ওপর কোনো প্রভাব না পড়লেও তাদের রক্তের লিপিড প্রোফাইলের ওপর চমৎকার প্রভাব পড়েছে। অর্থাৎ তাদের রক্তে এলডিএল বা ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল কমেছে। শুধু মুসলমানরাই নন, অর্থডক্স খ্রীষ্টানদের ধর্মীয় উপবাসকালীন সময়ে একই প্রভাব দেখা গেছে তাদের দেহে।

পঠিত : ৬৯৯ বার

মন্তব্য: ০