Alapon

অপচয়কারীকে শয়তানের ভাই বলা হয় কেন?

অপচয় এখন আমাদের সমাজের আভিজাত্যের প্রতীক হয়ে গেছে। অপচয় ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত গর্হিত ও ক্ষতিকর কাজ। ইসলাম ভারসাম্যপূর্ণ ও মধ্যমপন্থী ধর্ম। তাই এতে অপব্যয় ও কৃপণতার মতো অপচয়ও নিষিদ্ধ। অপচয় হচ্ছে বৈধ কাজে প্রয়োজনাতিরিক্ত ব্যয় করা, যাকে আরবিতে ‘ইসরাফ’ বলে। অপব্যয় হচ্ছে অবৈধ কাজে ব্যয় করা, যাকে আরবিতে ‘তাবজির’ বলে। মাত্রাতিরিক্ত ব্যয় যাই হোক তা অপচয়। অপচয় হতে পারে টাকা-পয়সা, খাদ্য-পানীয়, গ্যাস-বিদ্যুৎ, সময়, মেধা, শক্তি-সামর্থ্য ইত্যাদির ক্ষেত্রে। 

পানাহারের অপচয় : প্লেটভর্তি খাবার নিয়ে খাওয়ার শেষে কিছু অংশ না খেয়ে প্লেটে রেখে দেয়াটা একটি ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলোতে এ অপচয় খুব বেশি দেখা যায়। একটি ভাত বা এক টুকরো তরকারি নষ্ট করার আগে আমরা একবারও ভেবে দেখি না যে, কতগুলো হাতের খাটুনির সুবাদে এ খাবার আমাদের কাছে পৌঁছেছে। আর সেই খাবার আমরা অবলীলায় ফেলে দিচ্ছি!

 পানির অপচয় : পানির অপচয়কে অনেকে অপচয়ই মনে করেন না। তাদের ধারণা যে, পানি তো পর্যাপ্ত পরিমাণে আছে। তাই বেশি খরচ করলে সমস্যা কী? এ ধারণাটি সঠিক নয়। কারণ অপচয় মানে বিনা প্রয়োজনে ব্যয় করা। রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, ‘তুমি যদি সাগরপাড়ে বসেও পানি অতিরিক্ত ব্যবহার করো, তাও অপচয় হবে। যে অজুতে এক বদনা পানি লাগার কথা, সে অজুতে এক বালতিরও বেশি লেগে যায়। পানির টেপ ছেড়ে দিয়ে আমরা অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। দাঁত মাজা, হাত কচলানো ইত্যাদি কাজ চালু রাখতে দেখা যায়। এতে প্রচুর পানি খরচ হয়। গোসলের সময় মাথায় মগভর্তি পানি ঢালি। কিন্তু অর্ধেক পানি মাথা হয়ে শরীরে পড়ে, আর বাকি অংশ সরাসরি মাটিতে পড়ে যায়। কাপড়-চোপড়, মাছ-তরকারি, থালা-বাটি ইত্যাদি ধোয়ার সময় দেখা যায় পানির কল চলতে থাকে, আর আমরা ধীরস্থিরে ধুয়ে যাই। এতে একটি জিনিস ধুতে যতটুকু পানি লাগার কথা তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি পানি অযথা নষ্ট হয়ে যায়। পানি রাখার সময় খেয়াল করে ঢেকে রাখা হয় না। পরে অবলীলায় সে পানি ফেলে দেয়া হয়। পানির মোটর ছেড়ে দিয়ে খেয়াল করা হয় না, ফলে ট্যাংকি ভর্তি হয়ে প্রচুর পানি অপচয় হয়। এভাবে পানি ব্যবহারে আরও কত ধরনের অপব্যবহার আমরা করে যাচ্ছি তার কোনো হিসাব নেই।

 বিদ্যুতের অপচয় : বিদ্যুতের অপচয় আমাদের কাছে একটি সাধারণ বিষয় হয়ে গেছে। বলতে গেলে এটি একটি মহামারী আকার ধারণ করেছে। অফিস-আদালত ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এ অপচয় বেশি হয়। অফিসিয়াল সিস্টেম রক্ষা করতে গিয়ে সব লাইট-ফ্যান একসঙ্গে চালু করে দেয়া হয়। দোকানপাটের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য বা জিনিসপত্রের জৌলুস ও চমক বাড়ানোর জন্য যে হারে বিদ্যুতের অপব্যবহার করা হয়, তা কোনোভাবেই মার্জনীয় নয়। আলোকসজ্জার নামে বিভিন্ন মার্কেট, রেস্টেুরেন্ট ও বহুতল ভবনে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ অপচয় করা হয়, তা রীতিমতো বিস্ময়কর।

গ্যাসের অপচয় : গ্যাসের ক্ষেত্রে অপচয়ের সুযোগ থাকার কারণে আমরা অপচয় করি বেশি। ব্যবহারভিত্তিক বিল না হয়ে মাসিক নির্ধারিত বিল হওয়ার কারণে অধিকাংশ গ্রাহক মনে করেন, ২৪ ঘণ্টাই তার গ্যাস চালানোর অধিকার আছে। এ ধারণা ভুল। মূলত একটি পরিবারে সাধারণত যতটুকু গ্যাস লাগে ততটুকু ব্যবহারের জন্যই সে কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে অনুমতিপ্রাপ্ত। সুতরাং এর বাইরে গ্যাস ব্যবহার করলে তা অপচয় হিসেবে পরিগণিত হবে। আমরা অনেকে কাপড় শুকানোর জন্য, শীতকালে বাসা গরম রাখার জন্য, আবার নতুন করে আগুন জ্বালানোর কষ্ট থেকে রেহাই পেতে এক বেলার কাজ শেষ হওয়ার পর আরেক বেলা পর্যন্ত চুলা জ্বালিয়ে রাখি। এ ধরনের অপচয় ও অপব্যবহারের ফিরিস্তির কোনো শেষ নেই। 

সাজসজ্জার অপচয় : সাজসজ্জা করতে গিয়ে আমরা অনেক পোশাক কিনে থাকি। বর্তমানে পোশাক শরীরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির চেয়ে বেশি কাজে লাগছে শোভা বর্ধনের কাজে। তাই শরীরের প্রয়োজনে লাগুক আর নাই লাগুক শোভা বাড়ানোর যেহেতু প্রয়োজন আছে তাই মার্কেটে নতুন পোশাকের আমদানি হলেই কিনতে হয়। পোশাক কেনার ক্ষেত্রে কোন পোশাকটি আরামদায়ক তা বিবেচনায় না নিয়ে কোনটি পশ্চিমা স্টাইলে তৈরি, তা বিবেচনা করা হয়। শুধু দামের আধিক্যের বিবেচনায়ও পোশাক কেনা হয়। সঙ্গীদের সঙ্গে বড়াই করার জন্য অনেক দামি দামি পোশাক খরিদ করা হয়। শাড়িটা কেমন? এ প্রশ্নের চেয়ে শাড়ির দাম কত? এ প্রশ্নই বেশি করতে শোনা যায়। এ ধরনের অপচয় কি কোনোভাবে সমর্থনযোগ্য?

ইসলামের দৃষ্টিতে অপচয় একটি গর্হিত কাজ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহপাক বলেন, ‘এবং যখন তারা ব্যয় করে তখন তারা অপচয় করে না, কাপর্ণ্যও করে না; বরং তারা আছে এতদুভয়ের মাঝে মধ্যম পন্থায়।’ (সূরা ফোরকান : ৬৭)।

অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, ‘এবং তোমরা আহার করো ও পান করো। কিন্তু অপচয় করো না। তিনি অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না।’ (সূরা আরাফ : ৩১)।

হাদিসে রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, আল্লাহ তোমাদের জন্য তিনটি বস্তু অপছন্দ করেন- ১. অনর্থক এবং বাজে কথা বলা, ২. নিষ্প্রয়োজনে মাল নষ্ট করা এবং ৩. অত্যধিক প্রশ্ন করা।’ (বোখারি)।

পঠিত : ৯৫৫ বার

মন্তব্য: ০