Alapon

আরও একটি ইসরাঈল কি প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে?

এক.

গত এক মাসে সিরিয়ায় মোট চল্লিশজন এফএসএ কমান্ডার আততায়ীর গুলিতে নিহত হয়েছেন।

এর পেছনে সবচেয়ে জোরদারভাবে জড়িত আছে ইজরায়েল,কেননা এত নিখুত গুপ্তহত্যা তারা ছাড়া অন্য কারো পক্ষেই করা সম্ভব না।কুর্দীদের হাত থেকে তুর্কী বাহিনী আফরিন ছিনিয়ে নেয়ার পর মাত্র এক মাসে এই অবস্থা হওয়া একটা জরুরী বার্তা দেয়,ইজরায়েল কুর্দিস্তান কায়েমের ব্যাপারে মরিয়া হয়ে উঠেছে। কুর্দী ওয়াইপিজি বিগত কয়েক মাসে এফএসএ-তুর্কী সেনাবাহিনীর হাতে যে হুমকির মুখোমুখি হয়েছে,তা সিরিয়ার জটিল সমীকরনে মার্কিন স্বার্থ বাস্তবায়নের পথে একটা শক্তিশালী বাধা হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে।

আইএসের পতনের পর সিরিয়ায় ইউএসএর একমাত্র বিশ্বস্ত মিত্র হল কুর্দীরা। এই মিত্ররা এতদিন আসাদ ও আইএসের সাথে লড়ে ইউএসএকে বিপুল পরিমান সিরিয়ান ভুখন্ড ফ্রিতে বের করে দেয় নি। ইউএসএর সাথে তাদের হিসেব হল,ইউএসএ তাদের সিরিয়া ও ইরাকে একটা করিডোর বের করে দেবে,সেখানে তারা তথাকথিত স্বাধীন কুর্দিস্তান কায়েম করবে। এই কুর্দিস্তান হবে সিরিয়া,ইরাক,ইরান ও তুরস্কের মাঝখানে মধ্যপ্রাচ্যের দ্বিতীয় ইজরায়েল। সিরিয়ার উত্তরে কুর্দিদের একটা শক্তি হিসেবে টিকিয়ে রাখতে শত্রু এফএসএর কমান্ডারদের বেছে বেছে খুন করা একটা পুরান ইজরায়েলী ট্যাকটিক্স। 
এগুলো পুরনো কথা।
নতুন কথা হল ইউএসএ সিরিয়ায় যে স্পেশাল বর্ডার ফোর্স দাড় করাবে জানার পর এরদোয়ান অপারেশন অলিভ ব্রাঞ্চ শুরু করেন,সেই ফোর্স বানানোর পাঁয়তারা ইউএসএ আবার শুরু করেছে,তবে তা শুধু উত্তর সিরিয়ায় না। কুর্দিদের নিয়ে উত্তর সিরিয়ায় চল্লিশ হাজার যোদ্ধার একটা বাহিনী হবে,যার খরচ যোগাবে সউদীর মোহাম্মাদ বিন সালমান আর আমিরাতি মোহাম্মাদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান।
ইউএসএর সেকেন্ড প্ল্যান, উত্তরপূর্ব-পূর্ব সিরিয়া এবং পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম ইরাকে সিরিয়ার সুন্নী এফএসএর অপেক্ষাকৃত মডারেট ফ্যাকশন এবং ইরাকি সুন্নিদের একটা অংশকে নিয়ে আরেকটা সুন্নী করিডোর তৈরি করে ইরানের শিয়া গেরিলা এবং ইরানী রেভলিউশনারী গার্ড কর্পসের আল কুদস ব্রিগেডের সিরিয়ায় ঢোকার রাস্তা পারমানেন্টলি ব্লক করে দেয়া।
এই ব্যাপারটা আমাদের যে স্পষ্ট বার্তা দেয় তা হল,ইউএসএ ইজ ব্যাক অন দ্যা সিরিয়ান চেসবোর্ড।

দুই.

ইউএসএর এই কামব্যাকটা কেবল ইউএস কামব্যাক না,কমপ্লিট রিট্যালিয়েশান অফ দ্যা ওয়েস্ট।
রাশিয়া যখন সিরিয়ায় ইন্টারভিন করে,তখন সাথে সাথে ওবামা ও ফ্রাসোয়া ওলাদ ট্রুপস না পাঠিয়ে পিছিয়ে আসেন। তারা রাশিয়ার সাথে মুখোমুখি সংঘাত এরাতে চেয়েছিলেন,ফলে সিরিয়া সহ সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে চলে আসতে থাকে।

এই পরিস্থিতি বিগত প্রায় আড়াই বছর চলার পর এই মুহূর্তে ট্রাম্প প্রশাসনের সর্বত্র নিওকনরা অপ্রতিহতভাবে অবস্থান নিয়েছে,ডোনাল্ড 
ট্রাম্প সিআইএর নিওলিবারেল এস্টাবলিশমেন্টের বিরুদ্ধে টিকে থাকতে জায়োনিস্ট লবিকে হাত করতে একের পর এক জায়োনিস্ট ইন্টারভেনশনিস্টকে ট্রাম্প তার মন্ত্রীসভা ও উপদেষ্টা পরিষদের নিয়োগ দিয়েছেন,তার উদ্দেশ্য ছিল জেরুসালেম ইজরায়েলকে হ্যান্ডওভার করে মোসাদের সমর্থনে ক্ষমতায় টিকে থাকা। কিন্তু এই জায়গায় ইজরায়েল ট্রাম্পকে আউটউইট করেছে। জন বোল্টন ও মাইক পম্পিওকে নিয়ে গড়া মার্কিন স্টেট এন্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট এই মুহূর্তে ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি প্রো ইজরায়েল।সাথে আছেন ভারতীয় শিখ বংশোদ্ভুত নিকি হ্যালি।
শোনা যায়,এক্স সিআইএ মাইক পম্পিওকে স্টেট সেক্রেটারি করতে জায়োনিস্ট অর্গানাইজেশান অফ আমেরিকা এবং জিউয়িশ কমিটি অফ আমেরিকা সরাসরি লবিং করেছে। ব্যাপারটা এখন এমন দাড়িয়েছে,ট্রাম্প জেরুসালেম দিয়ে ইজরায়েলকে ফিড করতে চেয়েছে,আর ইজরায়েল জেরুসালেম তো নিচ্ছেই,সিরিয়াতেও নিজের স্বার্থ তাকে দিয়ে বের করে নিচ্ছে।

ইজরায়েল জানে,সিরিয়ায় আসাদের টিকে থাকার কৃতিত্ব পুরোপুরি রাশিয়া ও ইরানের।
ইরানের আইআরজিসি এবং হিজবুল্লাহ,আফগানিস্তানের ফাতেমীন আর পাকিস্তানের জায়নাবীন শিয়া গেরিলারা সিরিয়ায় ঢোকে পশ্চিম ইরাক দিয়ে,তাই এই জায়গাতে একটা জিওস্ট্র্যাটেজিক ব্লকেড দাড় করানো ইরানকে সিরিয়াতে স্ট্র্যাটেজিক লিমিটেশানে ফেলে দেবে।
রোববার সকালে হামার কাছে ইরানের টি-৪ বেসে ইজরায়েল যে হামলা চালায় তা ছিল প্রচণ্ড শক্তিশালী। রিখটার স্কেলে ২.৬ মাত্রার ভুমিকম্প সৃষ্টি করা এই হামলার মাধ্যমে ইজরায়েল শুধু ইরান না,রাশিয়াকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে,তারা সিরিয়ায় ইরানকে সহ্য করবে না। ইজরায়েলী প্রতিরক্ষামন্ত্রী লিবারম্যান এতাও জানিয়েছেম,প্রয়োজনে ইজরায়েল সিরিয়াতে রাশিয়ার মোতায়েন করা এস-৩০০ মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম ধ্বংস করে দেবে।

তিন.

ইজরায়েল শুধু সিরিয়ার প্রক্সি ওয়ারে ইরানকে আঘাত করেই সীমাবদ্ধ থাকতে চাচ্ছে না।
ইজরায়েল আগামী ১২ই মে তে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দিয়ে ইরান ডিল বাতিল করাবে। এটা ট্রাম্পের অন্যতম প্রধান নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল।

সিরিয়ার যুদ্ধক্ষেত্রে পশ্চিমারা যখন কেবলমাত্র রাশিয়ার বিরুদ্ধে একটা ইউনিফাইড একশনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে ঠিক তখনই ইরান ডিল বাতিল করা নিয়ে ফ্রান্স,ব্রিটেন ও জার্মানির লিবারেল নেতৃত্বের সাথে ইউএসএর একটা মতবিরোধ তৈরি হয়েছে। কিন্তু ইজরায়েলী লবির সামনে এই মতবিরোধ ধোপে টিকবে না। ধরে নেয়াই যায়,১২ই মে ইরান ডিল বাতিল হচ্ছে। এর ফলাফল হবে,ইরানের ওপর আবার অবরোধ কার্যকর হবে,ইরানের যুদ্ধ করার অর্থনৈতিক সক্ষমতা কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।
রাশিয়া ইরানকে এখানে কিভাবে কাভার আপ করবে,তা অস্পষ্ট,কিন্তু পুতিনের এটা জানার কথা যে তার এয়ারফোর্স সিরিয়ার ময়দানে আসাদকে টিকিয়ে রাখতে পারবে না। সিরিয়ায় তথা মধ্যপ্রাচ্যে টিকে থাকতে হলে পুতিনের ইরানকে লাগবেই।

চার.

ইরান ডিল বাতিল করার দুদিন পর ট্রাম্প জেরুসালেমে মার্কিন এম্বাসি স্থাপন করতে ইজরায়েলে যাবেন।
এটা হতে যাচ্ছে ১৯৬৭ সালের আরব ইজরায়েলী যুদ্ধের পর মুসলিম উম্মাহর গালে ইজরায়েলের সবচেয়ে বড় থাপ্পড়।
ট্রাম্পের ডিল অফ দ্যা সেঞ্চুরি মেনে নিতে ফিলিস্তিনিদের বারবার চাপ দিচ্ছে সউদীর নব্য আবু জাহেল মোহাম্মাদ বিন সালমান।এই সেদিনও আমেরিকান ইহুদী নেতাদের সামনে সে বলে এসেছে,ফিলিস্তিনিদের হয় ডিল অফ দ্যা সেঞ্চুরি মেনে জেরুসালেম ছাড়তে হবে,নয় ধ্বংস হয়ে যেতে হবে।
ইরান চরম চাপের মুখে আছে,তুরস্ক এই জায়গায় কোন কার্যকর ভুরাজনৈতিক খেলোয়াড় না।আল কুদসের দখল হাতে রাখতে সিরিয়া-মিশর আর সউদিতে শক্তিশালী মুসলিম সরকার প্রয়োজন।
এটা পরিষ্কার,মুসলমানদের প্রথম কেবলা মে মাসের মাঝামাঝিতে আনুষ্ঠানিকভাবে ইজরায়েলের হাতে যাচ্ছে।


পঠিত : ১৩০৩ বার

মন্তব্য: ০