Alapon

ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে অভিশপ্ত ইহুদী জাতি (শেষ পর্ব)

(পূর্ব প্রকাশের পর)

৭. ইরানীদের আধিপত্য ও কর্তৃত্বের যুগ

পারস্য-সম্রাট সাইরাস (কোরুশ) বাবেল নগরী ও রাজ্য দখল করে খ্রিস্টপূর্ব ৫৩৯ সালে সেখানকার সরকার ও প্রশাসনের পূর্ণ বিলুপ্তি ঘটান । তিনি শাম ও ফিলিস্তিন আক্রমণ করে সে দেশগুলো নিজ সাম্রাজ্যভুক্ত করেন। তিনি বাখতুন নাসরের বন্দীদেরকে এবং যে সব ইহুদী বাবেলে বসবাস করত তাদেরকে আল কুদসে ফিরে যাওয়ার অনুমতি এবং সুলাইমান (আ.)-এর ইবাদতগাহের ধন-সম্পদসমূহ তাদের কাছে ফিরিয়ে দেন। তিনি তাদেরকে তাদের উপাসনালয় সংস্কার ও পুনঃনির্মাণ করার অনুমতি দেন এবং যেরবাবেলকে তাদের প্রশাসক নিযুক্ত করেন।

সাইরাস কর্তৃক নিযুক্ত ইহুদী শাসনকর্তা, হযরত সুলাইমান (আ.)-এর ইবাদতগাহ্ পুনঃনির্মাণ প্রক্রিয়ায় হাত দিলে তৎসংলগ্ন এলাকার জনগণ ভয় পেয়ে সম্রাট সাইরাসের উত্তরাধিকারী কামবুজিয়ার কাছে এ ব্যাপারে অভিযোগ করে । তিনি ইবাদতগাহ্ নির্মাণ কার্য বন্ধ রাখার নির্দেশ জারী করেন । অতঃপর ১ম দারা (দারায়ূশ) তাদেরকে ইবাদতগাহ্ পুনঃনির্মাণের অনুমতি দিলে খ্রি. পূ. ৫১৫ সালে ইবাদতগাহের ইমারত নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয় ।

খ্রি. পূ. ৫৩৯ সাল থেকে খ্রি. পূ. ৩৩১ সাল পর্যন্ত ইহুদীদের ওপর ইরানী জাতির আধিপত্য ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত ছিল । এ দীর্ঘ সময় সম্রাট সাইরাস, কামবুজিয়াহ্, প্রথম দারায়ূশ, খেশার ইয়ার্শা এবং হযরত উযাইর (আ.)-এর সমসাময়িক আরদাশীর ইহুদীদের শাসন করেছেন । এদের পর আরো কতিপয় ইরানী সম্রাট, যেমন দ্বিতীয় দারায়ূশ, দ্বিতীয় ও তৃতীয় আরদাশীর রাজত্ব করেছেন । তৃতীয় আরদাশীর ছিলেন শেষ পারস্য সম্রাট যিনি গ্রীক সম্রাট ইস্কান্দারের (আলেকজান্ডার)২৭ হাতে পরাজিত ও নিহত হয়েছিলেন। বর্তমান তাওরাতে এ সব সম্রাট ও রাজা-বাদশার কাহিনী বর্ণিত হয়েছে।

৮. গ্রীকদের আধিপত্য ও কর্তৃত্বের যুগ

গ্রীকসম্রাট ইস্কান্দার আলেকজান্ডার মিশর, শাম ও ফিলিস্তিনে সামরিক অভিযান পরিচালনা করে ঐ সব অঞ্চল পদানত ও নিজ সাম্রাজ্যভুক্ত করেন । ইরানী সামন্তরা ও আঞ্চলিক শক্তিগুলো তাঁর মুখোমুখি হলে তিনি তাদের পরাজিত করে আল কুদসে প্রবেশ করেন এবং উক্ত অঞ্চল পূর্ণরূপে নিজ শাসনাধীনে আনয়ন করেন । অতঃপর সম্রাট ইস্কান্দার উত্তর ইরাকের আরবীলে এক ভয়ঙ্কর যুদ্ধে পারস্য সম্রাট তৃতীয় আরদাশীরের শাসনকর্তৃত্ব ও সেনাবাহিনী সম্পূর্ণ নির্মূল করেন । এরপর তিনি সম্মুখপানে অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখে পারস্য ও আরো অন্যান্য অঞ্চল দখল করেন । আর এভাবে খ্রি.পূ. ৩৩১ সালে ইহুদীরা গ্রীকদের অধীন হয়ে যায় ।

ইস্কান্দারের মৃত্যুর পরে তাঁর বিশাল সাম্রাজ্যের ওপর আধিপত্য ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার জন্য তাঁর সেনাবাহিনীর সেনাপতিদের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয় যা ২০ বছর স্থায়ী হয়েছিল । বাতালিসা (বাতলীমূসীয়রা) মিশর সরকারের অধিকাংশ অঞ্চলের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয় এবং সেলূকীয়রা (সেলূকূস-এর সাথে সংশ্লিষ্ট) সিরিয়া ও অন্যান্য অংশের ওপর নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন ।

আর এভাবেই আল কুদ্স খ্রি.পূ. ৩১২ সালে বাতলীমূসীয়দের নিয়ন্ত্রণে আসে । কিন্তু তৃতীয় সেলূকীয় নৃপতি আনতিয়োকূস খ্রি. পূ. ১৯৮ সালে বাতলীমূসীয়দের নিয়ন্ত্রণ থেকে আল কুদ্স মুক্ত করেন । অতঃপর আবারও বাতলীমূসীয়রা আল কুদসের ওপর নিজেদের আধিপত্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন এবং খ্রি. পূ. ৬৪ সালে রোম কর্তৃক উক্ত অঞ্চল বিজিত হওয়া পর্যন্ত তারা সেখানে নিজেদের শাসনকর্তৃত্ব অব্যাহত রাখে ।

বর্তমান তাওরাত ছয় জন বাতলীমূসীয়কে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় এভাবে ষষ্ঠ বাতলীমূসীয় পর্যন্ত স্মরণ করে বলেছে : “তাদের মধ্যকার প্রথম ব্যক্তি শনিবার ঊরশালিমে প্রবেশ করে বিপুল সংখ্যক ইহুদীকে বন্দী করে মিশরে প্রেরণ করেছিলেন ।”২৮

ঠিক একইভাবে তাওরাত পাঁচ জন সেলূকীয় শাসনকর্তাকে প্রথম, দ্বিতীয় এভাবে পঞ্চম আনতিয়োকূস নামে উল্লেখ করেছে এবং বলেছে : “তাদের মধ্যকার চতুর্থ ব্যক্তি খ্রি.পূ. ১৭৫ সাল থেকে খ্রি.পূ. ১৬৩ সাল পর্যন্ত আল কুদসে সেনাভিযান পরিচালনা করেন এবং হযরত সুলাইমান (আ.)-এর উপাসনালয়ের যাবতীয় মূল্যবান জিনিস লুণ্ঠন করেন এবং দু’বছর পরে আল কুদসের ওপর এক বিরাট আঘাত হানেন।

সেখানে যা কিছু ছিল তা লুণ্ঠন এবং উক্ত নগরীর বাড়ি-ঘর ও প্রাচীরসমূহ ধ্বংস করা হয়। আক্রমণকারী চতুর্থ আনতিয়োকূস নারী ও শিশুদেরকে বন্দী করেন । তিনি নিজেদের উপাস্য যিউসের প্রতিমা উক্ত ইবাদতগাহে স্থাপন করেন এবং ইহুদীদেরকে উক্ত প্রতিমার উপাসনা করার আহবান জানান । তাদের অনেকেই তাঁর এ আহবানে সাড়া দিয়েছিল । অথচ মেকাবী ইহুদীদের আন্দোলনের কারণে খ্রি. পূ. ১৬৮ সালে তাদের অনেকেই গোপন স্থান ও গুহাসমূহে আশ্রয় নিয়েছিল।

ইহুদীরা নিজেদের যে বিপ্লব ও আন্দোলনের ব্যাপারে গর্ব করে তা গেরিলা গোষ্ঠীসমূহের যুদ্ধের সাথেই বেশি সদৃশ ছিল । ইহুদী ধর্মে বিশ্বাসীরা মূর্তিপূজারী গ্রীকদের বিরুদ্ধে এ সব যুদ্ধ পরিচালনা করেছিল । তারা বিভিন্ন সময়ে সীমিত সাফল্য লাভ করেছিল এবং এ অবস্থা রোমীয়দের চূড়ান্ত আধিপত্য ও কর্তৃত্ব স্থাপন করা পর্যন্ত অব্যাহত থাকে ।

৯. রোমীয়দের কর্তৃত্ব ও আধিপত্যের যুগ

রোম-সম্রাট বোম্বেই খ্রি. পূ. ৬৪ সালে সিরিয়া দখল এবং তা রোমান সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন । পরের বছর তিনি আল কুদ্স দখল করেন এবং তা সিরিয়াস্থ রোমান শাসনকর্তার অধীন করে দেন । মথির ইঞ্জিলে (মেথিউসের বাইবেল) বর্ণিত হয়েছে : “খ্রি.পূ. ৩৯ সালে রোম-সম্রাট অগাস্ট হিরোডিস আদোমীকে ইহুদীদের প্রশাসক নিযুক্ত করেন । নব নিযুক্ত শাসনকর্তা হযরত সুলাইমান (আ.)-এর ইবাদতগাহের ওপর একটি নতুন ও সুন্দর অট্টালিকা নির্মাণ করেন এবং তিনি খ্রি. পূ. ৪ সালে মৃত্যুবরণ করেন।”

ইঞ্জিলসমূহের বিবরণ অনুসারে তাঁর পুত্র দ্বিতীয় হেরোডিস খ্রি.পূ. ৪ সাল থেকে ৩৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ইহুদীদের শাসন করে এবং তার যুগে হযরত ঈসা (আ.) জন্মগ্রহণ করেন । এ শাসনকর্তাই ইয়াহ্ইয়া ইবনে যাকারিয়াকে হত্যা করে তাঁর কর্তিত মস্তক একটি সোনালী পাত্রে রেখে সালূমার কাছে উপঢৌকনস্বরূপ প্রেরণ করে । উল্লেখ্য যে, এ সালূমা ছিল বনি ইসরাইলের এক জঘন্য নারী।

ইঞ্জিলসমূহ ও ঐতিহাসিকরা নেরোনের (নিরো) যুগে ৫৪-৬৮ খ্রিস্টাব্দে রোমান ও ইহুদীদের মধ্যে যে সব ঘটনা এবং কুদ্স ও ফিলিস্তিনে যা কিছু ঘটেছে তা উল্লেখ করেছেন । রোমান সম্রাট কাসবেসীয়ান তাঁর পুত্র তিতুসকে ৭০ খ্রিস্টাব্দে উক্ত অঞ্চলের প্রশাসক নিযুক্ত করেন । তিনি আল কুদসে আক্রমণ চালান । ফলে সেখানকার ইহুদীরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে এবং তাদের রসদপত্রও শেষ হয়ে গেলে তারা দুর্বল হয়ে যায়।

তিনি তিতুস শহরের প্রাচীর ধ্বংস করেন এবং পুরো শহর তাঁর দখলে চলে আসে। তিনি শহরে প্রবেশ করে হাজার হাজার ইহুদীকে হত্যা এবং তাদের বাড়ি-ঘর ধ্বংস করেন। তাদের উপাসনালয় গুঁড়িয়ে ফেলা হয় এবং তাতে অগ্নি সংযোগ করা হয়। উপাসনালয়টি এমনভাবে ধ্বংস করা হয় যে, এর অস্তিত্বই আর খুঁজে পাওয়া যায় নি। শহরের যে সব অধিবাসী প্রাণে বেঁচে গিয়েছিল তাদেরকে রোমে নিয়ে যাওয়া হয়।

ঐতিহাসিক আল মাসউদী তাঁর ‘আত্ তাম্বীহ্ ওয়াল আশরাফ’ গ্রন্থে বলেন : “এ আক্রমণে নিহত ইহুদী ও খ্রিস্টানদের সংখ্যা ছিল তিন মিলিয়ন- যা বাহ্যত অনেক বাড়িয়ে বলা হয়েছে । এ সব ঘটনার পর রোমানরা ইহুদীদের সাথে বেশি কঠোর আচরণ প্রদর্শন করে যা ঐ সময়ে তুঙ্গে পৌঁছে যখন সম্রাট কন্সটানটাইন এবং তাঁর পরবর্তী কায়সাররা (সম্রাটরা) খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেন । তাঁরা ইহুদীদেরকে নির্যাতন ও শাস্তির মধ্যে রাখেন।

এ কারণেই ৬২০ খ্রিস্টাব্দে মহানবী (সা.)-এর যুগে শাম ও ফিলিস্তিনের অধিবাসীদের সাথে পারস্য সম্রাট খোসরু পারভেযের যে যুদ্ধ হয়েছিল সে যুদ্ধে রোমান বাহিনীর পরাজয় বরণ করার কারণে ইহুদীরা খুব খুশী হয়েছিল। ঠিক একইভাবে হিজাযের ইহুদীরাও আনন্দ প্রকাশ করেছিল এবং তারা মুসলমানদের ওপর তাদের বিজয়ী হওয়ার দূরাশা পোষণ করত।
তখন এ আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয় :

“আলিফ লাম মীম। এ সব অক্ষরের শপথ রোম পরাজিত হয়েছে। খুব নিকটবর্তী অঞ্চলে এবং পরাজয় বরণ করার পর তারা অতি শীঘ্রই বিজয়ী হবে, খুব অল্প কয়েক বছরের মধ্যে । অতীত এবং ভবিষ্যতের সকল বিষয় কেবল মহান আল্লাহরই। আর মহান আল্লাহর সাহায্য ও শক্তির দ্বারা ঈমান আনয়নকারীরা সেদিন আনন্দিত হবে। তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে সাহায্য করেন । আর তিনিই পরাক্রমশালী বিজয়ী এবং দয়ালু।”

ঐতিহাসিকদের অভিমত অনুযায়ী রোমানদের ওপর বিজয় লাভ করার পর বিজয়ী ইরানীদের কাছ থেকে ইহুদীরা নব্বই হাজার খ্রিস্টান যুদ্ধবন্দী ক্রয় করে তাদের সবাইকে হত্যা করেছিল ।

কয়েক বছর পর যখন রোমান সম্রাট হেরাক্লিয়াস ইরানীদের ওপর বিজয়ী হন তখন তিনি ইহুদীদেরকে শাস্তি দেন এবং আল কুদসে যে ইহুদীই ছিল তাকে তিনি সেখান থেকে বহিষ্কার করেন; আর এভাবে খ্রিস্টানদের পক্ষ থেকে এ শহর ইহুদীদের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষিত হয় । দ্বিতীয় খলীফা উমর ইবনুল খাত্তাবের কাছে খ্রিস্টানরা শর্তারোপ করেছিল যে, কোন ইহুদী যেন সেখানে বসবাস না করে এবং তিনিও তাদের ইচ্ছার প্রতি ইতিবাচক সাড়া দেন এবং এ বিষয়টি তাদের সাথে সম্পাদিত চুক্তিপত্রে লিপিবদ্ধ করেন। 
আর তা ৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে অর্থাৎ হিজরী ১৮ সালে যখন আল কুদ্স ও ফিলিস্তিন ইসলামী রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায় তখন থেকে ১৩৪৩ হিজরী অর্থাৎ ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দ অর্থাৎ পাশ্চাত্যের হাতে তুর্কী উসমানী খিলাফতের পতন না হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকে ।

এ হচ্ছে ইহুদী জাতির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস যা আমাদের কাছে নানাবিধ বিষয়, যেমন ইহুদীদের ব্যাপারে সূরা ইসরা (বনি ইসরাইল) ও অন্যান্য সূরার আয়াতসমূহের তাফসীরও স্পষ্ট করে দেয়।... এ সব আয়াতের তাফসীর এবং ‘তোমরা পৃথিবীতে দু’বার ফিতনা করবে’- এ আয়াতে মহান আল্লাহর বক্তব্যের প্রকৃত অর্থ হচ্ছে এই যে, মহানবী (সা.)-এ নবুওয়াতে অভিষেকের আগে একবার এবং এরপর আরেকবার তোমরা পৃথিবীতে ফিতনা করবে। আর এটিই হচ্ছে তাদের বহু ফিতনা ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের পর্যায় ব্যাখ্যাকারী একমাত্র শ্রেণীবিন্যাস । উল্লেখ্য যে, ইহুদী জাতির ইতিহাস এ সব বিষয় দিয়ে পরিপূর্ণ ।


১০. ইসলাম ও মুসলমানদের আধিপত্য ও কর্তৃত্বের যুগ

‘আমাদের পক্ষ থেকে এমন সব বান্দাদেরকে প্রেরণ করব যারা হবে প্রচণ্ড শক্তি ও ক্ষমতার অধিকারী’- মহান আল্লাহর এ বাণীর অর্থ হচ্ছে মুসলমানরা। কারণ মহান আল্লাহ্ ইসলামের প্রাথমিক যুগে আমাদেরকে তাদের ওপর কর্তৃত্বশীল করে দিয়েছিলেন। আমাদের পূর্বপুরুষরা তাদের ঘরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে তন্নতন্ন করে তল্লাশী করেছেন। এরপর তাঁরা মসজিদে আকসায় প্রবেশ করেন। আবার যখন আমরা পবিত্র ইসলাম ধর্ম থেকে দূরে সরে যাই তখন মহান আল্লাহ্ আমাদের বিরুদ্ধে ইহুদীদেরকে শক্তিশালী করে দেন এবং তাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি (লোকবল) দিয়ে সাহায্য করেন এবং জনশক্তির দিক থেকে তাদেরকে আমাদের চেয়ে সংখ্যায় বৃদ্ধি করে দিয়েছেন।

অতঃপর ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর হুকুমতের ক্ষেত্র প্রস্তুতকারী আন্দোলন এবং তাঁর আবির্ভাব আন্দোলনের মাধ্যমে মহান আল্লাহ্ আমাদেরকে তাদের ওপর বিজয়ী ও কর্তৃত্বশীল করে দেবেন। আমরা ইতিহাসে মুসলিম উম্মাহ্ ব্যতীত অন্য কোন জাতিকে প্রত্যক্ষ করি না যাদেরকে মহান আল্লাহ্ ইহুদীদের ওপর বিজয়ী করে অতঃপর ইহুদীদেরকে তাদের ওপর বিজয়ী করেছেন।

তবে জাতিসমূহের ওপর ইহুদীদের প্রতিশ্রুত শ্রেষ্ঠত্ব ও আধিপত্য অর্জন কেবল একবারই হবে, তা দু’বার হবে না। তাদের এ আধিপত্য লাভ তাদের দ্বিতীয় নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড এবং ফিতনার সমসাময়িক হবে অথবা তারা তাদের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ও সৃষ্ট ফিতনা-ফাসাদের মাধ্যমেই তা অর্জন করবে। আর আমরা ইহুদীদের এ শ্রেষ্ঠত্ব দ্বিতীয় মহাযুদ্ধোত্তর কাল ব্যতীত তাদের ইতিহাসের আর কোন পর্যায়ে প্রত্যক্ষ করি না।

আজ ইহুদীরা তাদের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার দ্বিতীয় পর্যায়ে এবং শ্রেষ্ঠত্ব ও আধিপত্যের তুঙ্গে অবস্থান করছে। আমরা বর্তমানে আমাদের ঐশ্বরিক কর্তৃত্ব ও আধিপত্যের সূচানলগ্নে প্রবেশ করেছি এবং আমরা তাদের কুৎসিত চেহারা উন্মোচন করার পর্যায়ে রয়েছি ঐ সময় যখন মহান আল্লাহ্ আমাদেরকে তাদের বিরুদ্ধে বিজয়ী করবেন।

যেমনভাবে আমাদের পূর্বপুরুষরা প্রথমবার মসজিদুল আকসায় প্রবেশ করে পৃথিবীতে তাদের গর্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের ধারাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিয়েছিলেন ঠিক তেমনি আমরা ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের আগে অথবা তাঁর সাথে মসজিদুল আকসায় প্রবেশ করব এবং তাদের আধিপত্য, গর্ব ও শ্রেষ্ঠত্বকামিতার ধ্বংস সাধন করব ।

তবে ‘যদি তোমরা প্রত্যাবর্তন ও তওবা কর তাহলে আমরাও প্রত্যাবর্তন করব, আর আমরা জাহান্নামকে কাফিরদের জন্য কারাগাররূপে নির্ধারণ করেছি’- মহান আল্লাহর এ বাণী থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ইসরাইল ধ্বংস হওয়ার পর অনেক ইহুদী পৃথিবীতে থেকে যাবে । যারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করবে না ইমাম মাহ্দী (আ.) তাদেরকে আরব দেশসমূহ থেকে বহিষ্কার করবেন।

রেওয়ায়েত অনুসারে তারা আবার নাশকতামূলক কাজে লিপ্ত হবে । আর তা হবে এক চোখ বিশিষ্ট দাজ্জালের ফিতনা চলাকালে । ইমাম মাহ্দী (আ.) এবং মুসলমানরা এ সব ফিতনা সৃষ্টিকারীদের চূড়ান্তভাবে ধ্বংস করবেন এবং মহান আল্লাহ্ তাদের মধ্য থেকে যারা নিহত হবে তাদের জন্য জাহান্নামকে কারাগার করে দেবেন এবং মুসলমানরা তাদের অবশিষ্টদেরকে কারাগারে অন্তরীণ করে তাদের নাশকতামূলক কর্মতৎপরতা ও ফিতনা চিরতরে বন্ধ করে দেবে ।

তথ্যসূত্র :
(মোহাম্মাদ মুনীর হোসেইন খান কর্তৃক অনুদীত ‘ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ’ গ্রন্থ থেকে সংকলিত।)
১. দ্বিতীয় পুস্তিকা, অধ্যায় ৩৩ : ৫০-৫৩ ।
২. দ্বিতীয় পুস্তিকা, অধ্যায় ১ : ৩৮ ।
৩. বিচারকগণ, অধ্যায় ৩ : ১৩ ।
৪. বিচারকগণ, অধ্যায় ৪ : ২ ।
৫. বিচারকগণ, অধ্যায় ১ : ৮ ।
৬. বিচারকগণ, ১৩ : ১ ।
৭. সূরা বাকারা : ২৪৬ ।
৮. সামূয়েলের পুস্তিকা, ইসহাহ্ (আয়াত) ২৪ :২৪ এবং খবরসমূহ সংক্রান্ত ১ম পুস্তিকা, ইসহাহ্ ২১ : ২২, ২৮ ।
৯. সূরা শুরা : ২৭ ।
১০. রাজন্যবর্গ ও শাসকদের ১ম পুস্তিকা, ইসসাহ্, ১১ : ১-২ ।
১১. জেরুজালেমকে হিব্রু ও আরবীতে ঊর শালিমও (اور شاليم) বলা হয় ।
১২. রাজা ও শাসকবর্গের কাহিনীসমূহ সংক্রান্ত পুস্তিকা, অধ্যায় ১২ : ২৬-৩৩ ।
১৩. প্রাগুক্ত, অধ্যায় ১২ : ৩১; প্রাগুক্ত, অধ্যায় ১১ : ১৩-১৫ এবং অধ্যায় ১৩ : ৯ ।
১৪. প্রাগুক্ত, অধ্যায় ১৪ : ২১-২৪; প্রাগুক্ত, ২য় পুস্তিকা, অধ্যায় ১১: ১৩-১৭ এবং অধ্যায় ১২ ।
১৫. রাজা ও শাসকবর্গের কাহিনীসমূহ সংক্রান্ত ২য় পুস্তিকা, অধ্যায় ১৩ : ৩-১৩ ।
১৬. প্রাগুক্ত, অধ্যায় ২১ : ১৬-১৭ ।
১৭. প্রাগুক্ত, অধ্যায় ২৪ : ৩ এবং অধ্যায় ১২ : ১৭-১৮ ।
১৮. প্রাগুক্ত, অধ্যায় ১৪ :১১, অধ্যায় ২৫ : ২১-২৪ ।
১৯. প্রাগুক্ত, ২য় পুস্তিকা, অধ্যায় ১৫ : ২৯ ।
২০. দিবসসমূহের সংবাদ ও তথ্যাবলী, ৫ম অধ্যায় : ২৯ ।
২১. রাজা ও শাসকবর্গের তথ্য ও বিবরণাদি সংক্রান্ত ২য় পুস্তিকা,অধ্যায় ১৭ : ৫, ৬ ও ১৭ ।
২২.   প্রাগুক্ত, অধ্যায় ১৭ : ১৩-১৫ ।
২৩. প্রাগুক্ত, অধ্যায় ১৮ : ১৩-১৫ ।
২৪. প্রাগুক্ত, অধ্যায় ২৪ : ১-৬ ।
২৫. প্রাগুক্ত, অধ্যায় ২৪ : ১৭-২০ এবং ২৫; অধ্যায় ৩৬ : ১১-২১; ইরেমিয়ার পুস্তিকা, অধ্যায় ৩৯ : ১-৪ ।
২৬. আযরার পুস্তিকা, অধ্যায় ৬ : ৩-৭, অধ্যায় ১ : ৭-১১ ।
২৭. তিনি মূলত মাকদুন বা ম্যাসেডোনিয়ার অধিবাসী ছিলেন ।
২৮. দানিয়ালের পুস্তিকা, অধ্যায় ১১ :৫ ।
২৯. মেকাবীয়দের পুস্তিকা, অধ্যায় ১ : ৪১-৫৩ ‍।
৩০. মথির ইঞ্জিল, পৃ. ২ ।
৩১. মারকোসের ইঞ্জিল, ৬ : ১৬-২৮ ।
৩২. সূরা রূম : ১-৫ ।

সমাপ্ত

পঠিত : ১৩০৭ বার

মন্তব্য: ০