Alapon

সারা বিশ্বের কলকাঠি নাড়ে একটি পরিবার

অনেকেই হয়তো জানেন না পুরো পৃথিবীর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে একটি পরিবারের হাতে। কিন্তু কারা সেই পরিবারের সদস্য? কিভাবেই বা করছে তারা নিয়ন্ত্রণ? কি তাদের উদ্দেশ্য? চলুন জানা যাক।

New World Order কি ?

New World Order (NWO) বলতে মূলতঃ বংশগত সম্পর্কযুক্ত একটা গোষ্ঠিকে বুঝায় যারা বিশ্বের সকল স্বাধীন সরকার উঠিয়ে দিয়ে বিশ্বব্যাপী একটা একক সরকার গঠন করতে চায় ।

এই গ্রুপের লোকেরা খুবই শক্তিধর আর প্রভাবশালী । বিশ্বের বড় বড় অনেক রাজনৈতিক নেতা, ধনাঢ্য ব্যাক্তি, কর্পোরেট ব্যাক্তিত্ব রাজবংশের বিশিষ্ট্য ব্যাক্তিবর্গ (এরা Black Nobility of Europe নামে বেশি পরিচিত) এই দলের সদস্য ।

১৯৫০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি একজন ইহুদী ব্যাংকার পল ওয়ারবার্গ ইউ এস সিনেটে বলেন, "আপনি চান আর না চান, আমরা বিশ্ব শাসন করবো । এখন একমাত্র প্রশ্ন হল এটা আমরা বিজয়ের মাধ্যমে অর্জন কারবো নাকি সম্মতির মাধ্যমে অর্জন করবো"

New World Order এর চূড়ান্ত উদ্দেশ্য হল বিশ্বের প্রত্যেকটা ব্যাক্তির উপর নিয়ন্ত্রন আরোপ করা এবং বিশ্বের জনসংখ্যা ৫.৫ বিলিয়নে নামিয়ে আনা । ধারণা করা হয় যে, অধিকাংশ রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ঘটনাবলী এই New World Order এর পেছনে থাকা সংগঠনগুলির দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হয় ।

১৯৯২ সালে ড. জন কলেমন “Conspirators Hierarchy: The Story of The Committee of 300” নামে একটা বই প্রকাশ করেন । এই বইয়ে তিনি তার "New World Order" বিষয়ক গবেষণা প্রকাশ করেন । তিনি লিখেন, “মধ্য যুগের সামন্ত কায়দার মত স্থায়ী, অনির্বাচিত, বংশ পরম্পরাগত শাসন ব্যাবস্থার অধীনে একটা একক বিশ্ব শাসন ও নিয়ন্ত্রণ ব্যাবস্থা যেখানে শাসক নিয়োগ দেয়া হয় ঐ নির্দিষ্ট রাজকীয় বংশের ভেতর থেকে” এই নতুন বিশ্ব ব্যাবস্থায় জনগন হবে সীমিত ।

পরিবারের সন্তান সংখ্যা সীমাবদ্ধ করে দিয়ে, রোগ-বালাই, যুদ্ধ আর দুর্ভিক্ষের মাধ্যমে দক্ষ জনসংখ্যা ১ বিলিয়নের মধ্যে রাখা হবে যারা শাসক গোষ্ঠির কার্যোদ্ধারের জন্য উপযুক্ত হবে, আর এরা একটি সুনির্দিষ্ট এলাকায় (region) বাস করবে । কোন মধ্যবিত্ত থাকবে না, থাকবে কেবল শাসক আর কর্মচারী । বিশ্বজুড়ে একটাই আইন ব্যাবস্থা আর একই রকম আইন থাকবে । “একক বিশ্ব ব্যাবস্থা”র পুলিশ এই আইন বাস্তবায়ন করবে । বিশ্বব্যাপী একটা সেনাবাহিনী থাকবে তারা পূর্বের সকল দেশগুলোতে এই আইন প্রয়োগ করবে । ন্যাশনাল বাউন্ডারী বলতে কিছু থাকবে না, যেহেতু আলাদা আলাদা কোন দেশ থাকবে না ।

এর সিস্টেম হবে একটা কল্যান রাষ্ট্রের মত । যারা এই শাসন ব্যাবস্থার অনুগত হবে তাদেরকে জীবন ধারণের উপায় উপকরণ দিয়ে পুরস্কৃত করা হবে । আর যারা এর বিরুদ্ধে যাবে তাদেরকে সোজা মৃত্যুর রাস্তা দেখান হবে, অথবা “দুস্কৃতিকারী” হিসেবে ঘোষণা দেয়া হবে । এরপর যে কেউ ইচ্ছা করলে এই ঘোষিত “দুস্কৃতিকারীদের” হত্যা করতে পারবে । যেকোন ধরণের ব্যাক্তিগত আগ্নেয়াস্ত্র রাখা নিষিদ্ধ হবে ।

NWO –এর সদস্য কারা ?

NWO এর অধিকাংশ সদস্যরা হয়ত বড় তেল ব্যাবসায়ী, নয়ত ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংকার, অথবা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বা বড় ফার্মাসিস্ট । NWO এর ক্ষেত্রে ইংল্যান্ডের রাজকীয় পরিবারের রয়েছে বিরাট ভূমিকা । বিশেষ করে রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ এবং “House of Windsor” এর । ( হাউস অব উইন্ডসর হল জার্মানীর রাজগোষ্ঠি সাজে-কোবার্গ-গোথা’র বংশজাত রাজন্যবর্গ) । লন্ডন, বাসেল, আর ব্রাসেলসে অবস্থিত ন্যাটোর হেড কোয়ারটারে NWO এর বিভিন্ন কার্যসূচী আর গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ।

শীর্ষ সংগঠনগুলো যেমন জাতিসংঘ এবং এর অঙ্গ-সংগঠন World Health Organization –এই NWO এর অংশ । NWO এর “মিলিটারি টুলস” হিসেবে ন্যাটোর নামটা ঘুরেফিরেই আসে । ইউএস, ইংল্যান্ড, জার্মানী ও G-7 এর অন্তর্ভুক্ত দেশগুলির মত উন্নত দেশসমুহ WNO কে পূর্ণ সহযোগীতা করে থাকে । NWO এত শক্তি অর্জন করেছে যে এরা চাইলে যে কন ব্যাক্তিকে জাতীয় নেতায় পরিণত করতে পারে । ১৯৯৬ সালে বিল ক্লিনটন নাকি বব ডোল প্রেসিডেন্ট হল তাতে কিছু যায় আসে না, কারণ এরা দু’জনই NWO এর এজেন্ডা অনুসরণকারী।

যারাই NWO এর এজেন্ডা বাস্তবায়নের পথে অগ্রসর হয়নি তারাই গুপ্তহত্যার স্বীকার হয়েছে । উদাহরণস্বরূপ যুক্তরাষ্ট্রের জন এফ কেনেডি, ইটালির আলদো মারো, এবং পাকিস্তানের মুহাম্মাদ আলি ভুট্টোর নাম করা যায় । উইলিয়াম কোলবাই ( সি আই এ চীফ) এবং এডমিরাল বোরডা গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছিলেন, কারণ তাদেরকে যাভাবে বলা হয়েছিল তারা সেভাবে করেননি অথবা তারা জনসম্মুখে NWO এর এজেন্ডা প্রকাশ করে দিতে চেয়েছিলেন ।

NWO এর প্রপাগান্ডাঃ

NWO নানান ধরণের প্রপাগান্ডা ব্যাবহার করে । “পাবলিক অপিনিয়ন” তার মধ্যে একটা । এটা পূর্ব পরিকল্পিত প্রপাগান্ডা । জনগনের আচরণ (public behaviour) চেঞ্জ করে তাদের নিজস্ব উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য এই প্রপাগান্ডার আয়োজন । “পাবলিক অপিনিয়ন” মার্কা ভোটিংগুলো দ্বারা মূলতঃ দেখা হয় জনগন NWO এর এজেন্ডাগুলো গ্রহণ করছে কিনা । ভোটিং এর রেজাল্ট ইতিবাচক হলে এরা মনে করে যে এদের উদ্দেশ্য সফল হয়েছে । আর ফলাফল নেতিবাচক হলে এরা এদের কার্যক্রম চালিয়ে যায় যে পর্যন্ত না তারা তাদের “কাঙ্ক্ষিত প্রতিক্রিয়া” পায় । 

Tavistock institute এ যখন কোন প্রপাগান্ডার বিষয়বস্তু নির্ধারিত হয় তখন বুঝতে হবে এটা (প্রপাগান্ডার পরিকল্পনা) তৈরী হয়েছে ইউএস এ । এবং এই পরিকল্পনার পেছনে থাকে “ব্রোকিং ইন্সটিটিউশন” এবং “র্যা ন্ড করপোরেশন” এর মতো দুই শতাধিক থিংক ট্যাংক । এগুলোর আবার তত্তাবধান করে ক্যালিফোর্নয়ার মেনলো পার্কে অবস্থিত NWO এর প্রধান মাইন্ড কন্টোল অরগানাইজেশন “দ্য স্ট্যান্ডফোর্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউট” ।

NWO জনগনের আবেগ ব্যাবহার করে তাদের সার্থোদ্ধারের চেষ্টা করে । গত শতাব্দীতে তারা তাদের উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য একই কৌশল বারবার ব্যাবহার করেছে । কৌশলটি হলঃ “Problem-Reaction-Solution”

কৌশলটা এরকমঃ NWO প্রথমে একটা “Problem” তৈরী করে । এরা যে জাতীর/দেশের ভেতর “অস্থিরতা” তৈরী করতে চায় সেখানে এরা ফান্ডিং, ট্রেইনিং ইত্যাদির মাধ্যমে একটা “অপজিশন” তৈরী করে । আসলে এই “অপজিশন” এর মাধ্যমে এরা নিজেরাই প্রকাশ্য ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় । গত কয়েক দশক ধরে এই তথাকথিত অপজিশনগুলোই মিডিয়ায় “স্বাধীনতাকামী” বা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রচারিত হয়ে আসছে।

এবার সেই “অস্থির” জাতির জনগন যে কী দুর্দশার ভেতর দিয়ে দিন যাপন করছে, কী পরিমান অত্যাচার নির্যাতন তাদের উপর দিয়ে চলছে –এসব নিয়ে তাদের নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া রিপোর্ট করে NWO এর ফরম্যাটে যাতে তাদের স্বার্থ পুরোপুরি রক্ষিত হতে পারে । মিডিয়ার রিপোর্ট পেয়ে গোটা দুনিয়া চিৎকার করে ওঠে “এসব মেনে নেয়া যায় না, একটা কিছু করা হোক” । এটাই হল NWO এর সেই কাঙ্ক্ষিত “Reaction”

অধিকাংশ দেশ (যারা মূলতঃ NWO এর পুতুল) জাতিসংঘের মাধ্যমে “Solution” প্রদান করতে এগিয়ে আসে । যেমন উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় “জাতিসংঘ কোয়ালিশন ফোর্স” পাঠিয়ে, বসনিয়াতে “জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী” পাঠিয়ে, অথবা কসোভোর কথা বলা যায়, সেখানে ন্যাটো প্রথমে “বোম্বার” এবং পরবর্তিতে “গ্রাউন্ড ট্রুপস” পাঠায় । এভাবেই NWO তার “Solution” স্টেজ হাসিল করে । আবার কোথাও “Weapons of Mass Destruction” খোঁজার নামে সৈন্য পাঠানো হয়, যা আদৌ কোনদিন খুঁজে পাওয়া যায় না ।

এই তথাকথিত “শান্তিরক্ষী বাহিনিঃ একবার কথাও গেলে সেখান থেকে আর ফেরে না । এর উদ্দেশ্য হচ্ছে গুরুত্তপূর্ণ দেশ এবং কৌশলগতভাবে প্রয়োজনীয় এলাকাগুলিতে নিজেদের সামরিক বাহিনীর অবস্থান তৈরী করা । যখন “একক বিশ্ব ব্যাবস্থা”র চূড়ান্ত পর্ব শুরু হবে তখন যাতে এগুলো কাজে লাগে ।

ঐতিহাসিক ইভেন্টগুলোতে NWO এর ভূমিকাঃ

গত শতাব্দীর অনেকগুলো বড় বড় যুদ্ধ, অর্থনৈতিক সঙ্কট এবং রাজনৈতিক ঘটনাবলীত জন্মদাতা এই NWO . তেমন কিছু ঘটনা হলঃ
স্প্যানিশ-আমেরিকান যুদ্ধ ( 1898), প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ , বলশেভিক বিপ্লব (১৯১৭), The Great Depression, হিটলারের নাজি জার্মানী উত্থান, ভিয়েতনামের যুদ্ধ, কোরিয়ার যুদ্ধ, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ( 1989), কসোভোর যুদ্ধ, উপসাগরীয় যুদ্ধ ( 1991) এবং ইরাক যুদ্ধ ইত্যাদি ।

আজকের দুনিয়ার ঘটনা প্রবাহের দিকে গভীরভাবে নজর রাখলে NWO এর এসব কার্যাবলীর নজরানা পাওয়া যায় । প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন থেকে শুরু করে অধুনা জর্জ বুশ, হেনরি কিসিঞ্জার, মিখাইল গর্ভাচেভ সহ আরও অনেকে এই বিষয়ে তাদের নিজস্ব অবজারভেশন ব্যাক্ত করেছেন । বিষয়টা একেবারে উড়িয়ে দেবার মত নয় ।

পঠিত : ৯০১ বার

মন্তব্য: ০