বিশৃঙ্খলা যখন তুঙ্গে তখন এর পালে আরো হাওয়া লাগাল চার ভণ্ড নবী। আবু বকর (রা.) ভীত না হয়ে এদের বিরুদ্ধে সম্মিলিত সামরিক আক্রমণের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। ইতিহাসে এই যুদ্ধই রিদ্দার যুদ্ধ নামে সুপরিচিত।
৬৩২ সালের আগস্টের শেষের দিকে বিদ্রোহীদের মূল উৎপাটন করতে আবু বকর (রা.) তার সৈন্যদলকে যুকিসার দিকে যাত্রা করার আদেশ দেন। যুকিসা ছিল বিদ্রোহীদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘাটি। আবু বকর (রা.) তার সেনাদলকে ১১ টি দলে বিভক্ত করেন। এর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী দলের নেতৃত্বে ছিলেন মহাবীর খালিদ বিন ওয়ালিদ। প্রতি সৈন্যদলের একজন করে কমান্ডার ছিল। প্রত্যেকে কমান্ডারের হাতে থাকত একটি করে পতাকা।
কোন বিদ্রোহী গ্রুপের সাথে কে লড়াই করবে তার রূপরেখাও তৈরি করে দেন আবু বকর। খালিদ বিন ওয়ালিদকে দায়িত্ব দেয়া হয় বুজাখার আসাদ গোত্রের তুলায়হাকে দমন করতে। মুসায়লামাকে টেক্কা দিতে প্রস্তুত থাকেন ইকরিমা বিন আবু জেহেল। খালিদ বিন সাইদকে দায়িত্ব দেয়া হয় সিরিয়া সীমান্তের খ্রিষ্টান বিদ্রোহীদের শায়েস্তা করতে। এভাবে ১১ জন কমান্ডার ১১ টি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে সম্মিলিত আক্রমণের প্রস্তুতি নিতে থাকেন।
১- খালিদ বিন ওয়ালিদ প্রথমে বুজাখার আসাদ গোত্রের তুলায়হা বিন খুওয়াইলিদ আল আসদি ও পরে বুতাহর মালিক বিন নুয়াইরা।
২- ইকরিমা ইবনে আবি জাহল মুসায়লিমার সাথে লড়াই করেন।
৩- আমর ইবনুল আস তাবুক ও দুমাতুল জান্দালের কুজা ও ওয়াদিয়া গোত্রের বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াই করেন।
৪- শুরাহবিল ইবনে হাসানা ইকরিমাকে অনুসরণ করেন ও খলিফার নির্দেশের অপেক্ষায় ছিলেন।
৫- খালিদ বিন সাইদ, সিরিয়ান সীমান্তের কিছু বিদ্রোহী গোত্র।
৬- তুরাইফা বিন হাজিজ, মদিনা ও মক্কার হাওয়াজিন ও বনি সুলাইমের বিদ্রোহী গোত্র।
৭- আলা বিন আল হাদরামি, বাহরাইনের বিদ্রোহী।
৮- হুজায়ফা বিন মিহসান, ওমানের বিদ্রোহী।
৯- আরফাজা বিন হারজামা, মাহরার বিদ্রোহী।
১০- মুহাজির বিন আবি উমাইয়া, ইয়েমেনের বিদ্রোহী, পরে হাদরামাওতের কিন্দার বিদ্রোহী।
১১- সুয়াইদ বিন মুকারান, ইয়েমেনের উত্তরে উপকূলীয় এলাকার বিদ্রোহী।
সেনাদল গঠন সম্পন্ন হওয়ার পর খালিদ এগিয়ে যান। এর কিছু পর ইকরিমা ও আমর ইবনুল আস তাকে অনুসরণ করেন। অন্যান্য সেনাদলগুলো খলিফার অধীনে ছিল। পরের সপ্তাহ ও মাসগুলোতে এদের প্রেরণ করা হয়। শত্রুদের শক্তিশালী অবস্থানের ব্যাপারে খালিদের অপারেশনের উপর এদের প্রেরণ নির্ভর করত।
বিভিন্ন সেনাদলের যুকিসা ত্যাগ করার আগে আবু বকর বিদ্রোহী গোত্রগুলোর কাছে আত্মসমর্পণের জন্য চূড়ান্ত আহ্বান জানান।
নির্দিষ্ট দায়িত্বের পাশাপাশি কমান্ডারদেরকে নিম্নোক্ত নির্দেশনা দেয়া হয়:
যেসব গোত্র তাদের উদ্দেশ্য ছিল তাদের অনুসন্ধান করা।
১- আজান দেয়া।
২- গোত্রগুলো যদি আজানের উত্তর দেয় তবে তাদের আক্রমণ করা যাবে না। আজানের পর গোত্রগুলোকে জাকাত প্রদানসহ আত্মসমর্পণের আহ্বান জানাতে হবে। যদি তারা তা মেনে নেয় তবে আক্রমণ করা যাবে না।
৩- যারা আত্মসমর্পণ করবে তাদের আক্রমণ করা হবে না।
৪- যারা আজানের উত্তর দেবে না বা আজানের পর পূর্ণরূপে আত্মসমর্পণ করবে না তাদের সাথে তলোয়ার দ্বারা ব্যবহার করা হবে।
৫- যেসকল বিদ্রোহী মুসলিমদের হত্যা করেছে তাদের হত্যা করা হবে।
এসকল নির্দেশনাসহ আবু বকর মুসলিম বাহিনীকে ধর্মত্যাগী ও বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে এগিয়ে যাওয়ার আদেশ দেন।
এমন নির্দেশনা পালন করে আবু বকর (রা.) এর বাহিনী মধ্য আরবের ভণ্ড নবী মুসায়লামা, বুজাখার তোলায়হা, নজদের বনু তামিম গোত্র, ইয়েমেনের ভণ্ড নবী আল আসওয়াদ এবং বাহরাইন, হাজরামাউত, মাহরা অঞ্চলের বিদ্রোহ সাফল্যের সাথে দমন করতে সমর্থ হয়। এই অভিযানের ফলাফল হিসেবে কার্যত সব ধরণের বিদ্রোহের ইতি ঘটে এবং সাম্রাজ্যে শৃংখলা ফিরে আসে। ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ যারা করেছে তাদের দমন করার যুদ্ধকেই রিদ্দার যুদ্ধ বলা হয়। আবু বকর রাঃ কঠোর অবস্থানের কারণেই খিলাফতে শান্তি ফিরে এসেছিল।
মন্তব্য: ০