Alapon

রমজানের প্রস্তুতি শুরু হোক এখনই

রমজান ইবাদতের বসন্তকালঃ

রমজান মাস ইবাদতের বসন্তকাল। আল্লাহর প্রিয় বান্দারা সুবর্ণ সুযোগকে কাজে লাগাতে ইবাদতে মশগুল থাকেন। রমজান শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই সারা মাসের জন্য শয়তানকে বেড়িবদ্ধ করা হয়। সে কারণে রমজানের বরকতস্বরূপ দ্বীনি পরিবেশের সৌন্দর্য পরিলক্ষিত হয়। আর এ জন্যই রমজান মাস মানুষের মন ও আত্মাকে পরিশোধন করার শ্রেষ্ঠ সময়।

মানুষ তার পেট ও লজ্জাস্থানের চাহিদা মেটানোর তাড়নায় গুনাহ করে। তাই তাকওয়া অর্জনের নিমিত্তে এই দুই ধরনের গুনাহের উৎসকে দুর্বল করতে আল্লাহতায়ালা রোজার বিধান দিয়েছেন। রোজার দাবি তাকওয়া অর্জন। আর এ জন্য সব ধরনের গুনাহ থেকে বিরত থাকা অপরিহার্য। এতে আত্মার পরিশুদ্ধি ঘটবে, চারিত্রিক গুণাবলি উন্নত হবে, নিজেকে রক্ষা করতে পারবে অশুভের বিরুদ্ধে। একজন রোজাদার রমজান মাসে তার প্রতিটি অঙ্গ- বিশেষ করে হাত, পা, চোখ, মুখ, উদরকে অবৈধ ও গর্হিত কাজ থেকে বিরত রেখে সংযমী হন। ইচ্ছাশক্তিকে নিয়ন্ত্রণে রেখে দৈহিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে আল্লাহর নির্দেশিত পথে পরিচালিত করার শিক্ষা পান।

রোজা ধৈর্য, সংযম ও নৈতিক উৎকর্ষের জন্ম দেয়। শিষ্টাচারের মাধ্যমে নৈতিক চরিত্র গঠন রমজানের সিয়াম সাধনার একটি মৌলিক শিক্ষা। রমজানে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মুমিনবান্দা হিংসা-বিদ্বেষ, কামনা-বাসনা, লোভ-লালসা প্রভৃতি অন্যায় আচরণ পরিহার করে থাকেন। ফলে কুপ্রবৃত্তির সব দেয়াল ভেঙে যায়। খারাপের ইচ্ছা নষ্ট হয়ে যায়। অন্তর নির্মল ও সুন্দর হয়।

কিন্তু আমরা কি পরিকল্পনা করেছি রমজানের দিনগুলিকে ঈমান ও এহতাসেবের সাথে অতিবাহিত করার? ফলপ্রসূ রোজা পালনের পাশাপাশি সুস্থতার সাথে পবিত্র রমজান কিভাবে অতিবাহিত করা যায় সে বিষয় এখন জানবো আমরা-

কিভাবে রোজার দিনগুলি অতিবাহিত করবো?
রোজায় যা করা উচিত নয়ঃ
১. অতিরিক্ত ঘুমানো।
২. অলস সময় কাটানো।
৩. টিভি দেখে এবং নেট ব্রাউজ করে সময় কাটানো।
৪. নফল ইবাদাতের কথা বলে বেড়ানো।
৫. ভারী কাজ করা। 
৬. সারা রাত জেগে থাকা (রাসুল স. ঘুম থেকে উঠে খাবার খেতেন)
৭. তারাবী নিয়ে বিতর্ক করে তাহাজ্জুদ তারাবী কোন টাই না পড়া।
৮. সেহরীতে ও ইফতারে অতিরিক্ত খাওয়া। 
৯. বেশি কথা বা একদম চুপ থাকা।
 
রোজায় যা করা জরুরীঃ
১. এটা আপনার জীবনের শেষ রমজান মনে করা।

২. পুরো রমজানের একটি রুটিন তৈরি করা।
•  সকালে কি কি কাজ করবেন? বিকালে কি কি কাজ করবেন? সন্ধার পর কি করবেন? এর একটি তালিকা তৈরি করা।
•  বিশেষ করে বলপ্রয়োগের কাজ, চিন্তাশীলতার কাজ,গবেষণার কাজ, মুখস্ত করার কাজ, বাহিরের কাজ গুলো মধ্যাহ্নের আগে করা।
•  হালকা কাজ গুলো দুপুরের পর করা, আসরের পর ভারী কোন কাজ না করা এবং তখন না ঘুমানো।

৩. খাদ্য তালিকা তৈরি করা।
যথা সম্ভব ভাজাপোড়া কম খাওয়া।
যে খাবার গুলো উপকারীঃ
১. রসুন: হৃদপিণ্ডের জন্য উপকারী খাদ্য হিসেবেই পরিচিত রসুন।
২. সবুজ চা: শরীরকে বিষমুক্তকরণের আরেকটি উত্তম পন্থা হল নিয়মিত সবুজ চা পান করা।
৩. আদা: বমিবমি ভাব দূর করতে, হজমপ্রক্রিয়ার উন্নয়ন, পেটফাঁপা থেকে মুক্তি ও পেটের গ্যাস নি:সরণে আদা খুবই কার্যকরী খাদ্য।
৪. লেবু: লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এই উপাদানগুলো ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখার পাশাপাশি শরীরে রোগবালাই সৃষ্টিকারী অযাচিত উপাদান সৃষ্টি প্রতিরোধ করে।
৫. ফলমূল: তাজা ফলমূলে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন, খনিজ পুষ্টি উপাদান, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও আঁশ রয়েছে।
৬. গাজর: গাজরে ম্যাগনেশিয়াম, লোহা ও ভিটামিন সিতে পরিপূর্ণ যা স্বাস্থ্যের জন্য বহুমুখি উপকারীতা বয়ে আনে। এই খাদ্যটি রক্তে কোলোস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ও লিভারকে বিষমুক্তকরণে খুবই কার্যকরী।
৭. বাদামি চাল: বাদামি চালে ভিটামিন বি, ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও ফসফোরাসের মতো শরীরকে বিষমুক্তকরণের প্রধান প্রধান পুষ্টি উপাদানগুলো রয়েছে।
ইফতারের পর কমপক্ষে ৮ গ্লাস পানি খাওয়ার পরামর্শ দেন ডাক্তার।
অতিরিক্ত মিষ্টি ও মশলা জাতীয় খাবার গুলো খাবেন না। ইফতার বা সেহরীর পর  পরই চা না খাওয়া। ইফতারের কমপক্ষে ২ ঘন্টা পর চা খাবেন।

৪. নফল ইবাদতে প্রতি পূর্ণ মনোনিবেশ করা।
৫. দৈনদিন কাজে ব্যবহ্নত দোয়া গুলোর তালিকা তৈরি করে মুখস্ত করা।
৬. বিষয় ভিত্তিক আয়াত মুখস্ত করা এবং বিশেষ করে ৩০ তম পারাটি মুখস্ত করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো।
৭.নিয়মিত তাহাজ্জুদ আদায় করা।
৮. বেশি বেশি দান-সাদকাহ করা। 
৯. সার্বক্ষণিক জিকির করা।

মানুষের চরিত্র গঠনে ফলদায়ক ব্যবস্থা রোজাঃ

রোজার মাসে আল্লাহতায়ালা জান্নাতের দরজা খুলে দেন, জাহান্নামের দরজা বন্ধ রাখেন এবং শয়তানকে শৃঙ্খলিত করে রাখেন। ফলে ইবাদত, জিকির-আজকার, কোরআন তেলাওয়াত, কৃচ্ছ্রতা সাধন ও আল্লাহর একনিষ্ঠ আনুগত্যের স্বর্গীয় পরিবেশ সৃষ্টি হয়। রোজার মাধ্যমে মানুষের আত্মিক, দৈহিক, নৈতিক ও সামাজিক পরিশুদ্ধি ঘটে। আসলে আল্লাহতে যার পূর্ণ ঈমান রয়েছে, যারা খোদাভীরু শুধু তারাই রোজা রাখতে সক্ষম হন। এভাবে আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাসের কারণেই রোজাদার খাঁটি মুমিন বান্দায় পরিণত হন। তাই রমজানের বড় প্রাপ্তি তাকওয়া।

একজন আল্লাহর প্রেমিকের সওম হয় সর্বপ্রকার পাপাচার থেকে মুক্ত। প্রকৃত রোজাদার পানাহার ও ইন্দ্রিয় তৃপ্তি ছাড়াও শিরক, কুফর, বিদআত, হিংসা-লোভ, পরচর্চা ও পরনিন্দা থেকেও আত্মাকে পবিত্র রাখেন, আল্লাহর প্রেমরঙে হৃদয় রাঙান। কেবল তখনই একজন রোজাদার খুঁজে পান নিজেকে, নিজের সত্তা ও আত্মপরিচয়কে।

রমজানে চরিত্র মাধুর্যমণ্ডিত করার সময়, আত্মাকে শানিত করার সময়, কুপ্রবৃত্তিকে দমন করার সময়, অন্তরকে ধুয়ে মুছে পূত-পবিত্র করে আধ্যাত্মিকতার নূর জ্বালানোর সর্বোত্তম সময়। এ মাসে আমাদের চলার পথ ও পদ্ধতি কোরআন ও সুন্নাহর ছাঁচে গড়ে তোলার এবং সালাফে সালেহিনদের নমুনায় ঢেলে সাজানোর মোক্ষম সময়। বস্তুত ‘মানুষের চরিত্র গঠনে রোজা খুবই ফলদায়ক ব্যবস্থা।’

চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের মতে, ‘রোজা মানুষের মনের ওপর দারুণ প্রভাব ফেলে। যেমন- কর্মে মনোযোগ আসে, পশুত্ব দূরীভূত হয়, সমাজ গঠনে সহায়তা করে।’ আর ইমাম গাজ্জালি (রহ.) বলেন, ‘সিয়াম মুসলমানদের কেবল পরকালের মুক্তির পথ দেখায় না, নৈতিক চরিত্র গঠনেও এর দারুণ ভূমিকা রয়েছে।’

রোজা ভালো মনের মানুষ গঠনে অবিশ্বাস্য ভূমিকা পালন করে। তাই আমাদের সুস্থ সুন্দর দেহ-মন ও স্বাস্থ্য নিয়ে অতি সহজ ও শান্তিময় জীবন গড়ার ব্যবস্থা হিসেবে মহান আল্লাহতায়ালা রোজা ফরজ করেছেন। ‘তোমাদের ওপর রমজানের রোজা ফরজ করা হয়েছে, যাতে তোমরা খোদাভীরু হতে পারো।’ -সূরা বাকারা : ১৮৩

মূলত ভালো মনের ভালো মানের মানুষ গঠনে খোদাভীরুতার কোনো বিকল্প নেই। তাই আসুন পবিত্র মাহে রজমানে পুরো মাসের রোজা রাখার মানসিক প্রস্তুতি গ্রহণ করি। আল্লাহ আমাদের তওফিক দান করুন। আমিন।

পঠিত : ৭৮৫ বার

মন্তব্য: ০