Alapon

সারপ্রাইজ!

গার্লফ্রেন্ড ফোন দিয়েই বলল " জান, আজ আমাদের বাসায় কেউ নেই।সবাই দাওয়াত খেতে মামা বাড়ি গেছে। তুমি চাইলে আসতে পারো"।
খুশিতে বিছানা থেকে লাফিয়ে উঠে বললাম, " কলিজা আমি দশ মিনিটের মধ্যে আসতেছি"।

তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে গার্লফ্রেন্ডের বাসার দিকে দৌড় দিলাম। আমি যাচ্ছি আর আমার মনের মধ্যে বেজে চলেছে সেই বিখ্যাত গান " আজ পাশা খেলবো রে শাম"। গার্লফ্রেন্ডের বাসায় ঢুকে দেখি। বাসা একদম ফাঁকা। কেউ নাই। মনের মধ্যে আমার খুশির বন্যা বয়ে যাচ্ছে। এমন সময় গার্লফ্রেন্ড বলল "ঐ রুমে চলো"।

রানীর আদেশের মতন গার্লফ্রেন্ডের পিছু পিছু গেলাম। একটা চেয়ারে আমাকে বসতে দিয়ে গার্লফ্রেন্ড কানে কানে বলল " আজ আমরা একটা নতুন খেলা শিখবো। কিন্তু তার আগে তোমার চোখ বাঁধতে হবে"। আমি বললাম "তোমার যা ইচ্ছে বেঁধে ফেলো"।

আমি চেয়ারে বসে আছি। গার্লফ্রেন্ড কাপড় দিয়ে আমার চোখ আর চেয়ারের সাথে আমার হাত পা বেঁধে ফেলল।

অনেকক্ষণ চুপচাপ চোরের মতন বসে আছি। গার্লফ্রেন্ডের কোনো সাড়াশব্দ নাই। বুকের মধ্যে কেমন যেন একটা অজানা আতঙ্ক কাজ করা শুরু করলো। আমার গার্লফ্রেন্ড সাইকো নয় তো? বাইরের অনেক দেশেই তো এভাবে ডেকে এনে ওরা মানুষ খুন করে।

একটা টেবিল টেনে নিয়ে আসার শব্দ শুনে বুকের মধ্যে ভয় আরো দ্বিগুণ হয়ে গেলো। আমি মনে মনে নিশ্চিত এই টেবিলের উপর নানা রকম দাঁ, কুড়াল, চুড়ি, হাতুড়ি রাখা আছে। আজ আমার জীবন এখানেই শেষ। খেয়াল করে দেখলাম চেয়ারের সাথে আমাকে এমন করে বাঁধা হয়েছে যে আমার নড়াচড়া করার কোনো সুযোগ নেই। মনে মনে আল্লাহ কে ডাকা শুরু করলাম।

গার্লফ্রেন্ড কে বললাম " কি করছ তুমি এসব? এক্ষণ আমার চোখের বাঁধন খুলে দেও বলছি"। গার্লফ্রেন্ড হঠাৎ রাক্ষুসীর মতন হাসতে হাসতে বলল " এখনো আমার কাজ শেষ হয়নি"। ভয়ে কলিজা শুকিয়ে গেলো। শরীরের সমস্ত লোম দাঁড় হয়ে গেলো। হৃদপিন্ড ধপাস ধপাস করে কেঁপে উঠতে লাগলো।

হঠাৎ পিছন থেকে গার্লফ্রেন্ড চোখের বাঁধন খুলে দিয়ে বলল " সারপ্রাইজ "। চোখ মেলে দেখি আমার সামনে একটা টেবিল। টেবিলে রাখা আছে একটা রড, একটা হাতুড়ি,কয়েকটা চাকু, কয়েকটা কাঁটাচামচ, কয়েকটা ফাকা প্লেট আর বড়সড় করাত। আর টেবিলের ওপাশে দাঁড়িয়ে আছে আমার গার্লফ্রেন্ডের বাবা, মা আর ছোট ভাই। ওদের দেখে বুঝলাম বেঁচে থাকার কোনো আশা নেই আমার। নির্ঘাত কোনো সাইকো ফ্যামিলির পাতানো ফাঁদে পা রেখেছি।এরা সবাই মিলে আমাকে কেটে খাবে।

এবার টেবিলের ওপাশে থাকা সবাই আমাকে দেখে রহস্যময় ভাবে হেসে উঠলো। ওদের হাসি দেখে আমি চিৎকার করে কেঁদে উঠলাম। বারবার বলতে লাগলাম "বাঁচাও, বাঁচাও।

পিছন থেকে গার্লফ্রেন্ড সামনে এসে বলল " বাবু তুমি কাঁদছ কেন? কি হয়েছে তোমার"? গার্লফ্রেন্ডের কথা শুনে আরো জোরে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলাম। বললাম " কে কোথায় আছো আমাকে বাঁচাও।

হঠাৎ গার্লফ্রেন্ড কষিয়ে একটা থাপ্পড় দিলো আমার গালে। তারপর বলল " কদিন আগে আব্বুকে আমাদের রিলেশনশিপের ব্যাপারে সব খুলে বলেছি। আব্বু বলেছে যে চোর আমার মেয়ের মন চুরি করেছে তাকে একবার আমাদের বাসায় নিয়ে আয়। আব্বুকে বলেছিলাম তাহলে ঠিক চোরের মতন তোমাকে নিয়ে আসবো। এইজন্য তোমাকে এভাবে ডেকে এনে চোরের মতন বেঁধে রেখেছি সারপ্রাইজ দিবো বলে"।

তারপর ওর ফ্যামিলির সবাই মিলে একসাথে বলে উঠলো "সারপ্রাইজ "। ওদের সারপ্রাইজ দেওয়ার পদ্ধতি দেখে এবার সত্যি সত্যি জ্ঞান হারালাম।

পঠিত : ১২৫৭ বার

মন্তব্য: ০