Alapon

‘দ্য গ্রেটেস্ট’ মোহাম্মদ আলী

ক্রীড়াবিশ্ব থমকে গেল বক্সিং রিংয়ের এক ঘটনায়। ফেব্রুয়ারিতে শিরোপার লড়াইয়ে বিশ্ব হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন সনি লিস্টন রিংয়ে কুপোকাৎ হলেন তরুণ এক মুষ্টিযোদ্ধার হাতে। ওটা ছিল মার্কিন বক্সার লিস্টনের ক্যারিয়ারে প্রথম হার। এতে ২২ বছরের আলীর নাম উঠলো অন্য রেকর্ডেও। মোহাম্মদ আলী হেভিওয়েট শিরোপা জয়ী সবচেয়ে কম বয়সী বক্সার। ওই সময় ক্যাসিয়াস ক্লে নামে পরিচিত ছিলেন তিনি। ইসলাম গ্রহণের পর তিনি নাম ধারণ করেন মোহাম্মদ আলী। আর প্রতিবাদী চরিত্র ও বাকপটু মোহাম্মদ আলী এ সংক্রান্ত ঘোষণাতেও ছিল সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে কটাক্ষ। আলী বলেন, ক্যাসিয়াস ক্লে আমার ক্রীতদাস নাম (স্লেভ নেম)।


মোহাম্মদ আলী ও সনি লিস্টন, ছবিঃ AllPosters.ca

১৯৬০ সাল ছিল আলীর জীবনের স্মরণীয় একটি বছর। রোম অলিম্পিকে বক্সিংয়ে সোনা জেতেন। অলিম্পিকে স্বর্ণ পদক জয়ী খেলোয়াড় হওয়ার পরও রোমের একটি রেস্টুরেন্টে তাঁকে খাবার দিতে অস্বীকৃতি জানানো হয়। ‘অপরাধ’ তিনি ছিলেন কৃষ্ণাঙ্গ! রাগে, দুঃখে, অপমানে আলী অলিম্পিক মেডেলটি টাইগ্রিস নদীতে ফেলে দেন। ১৯৬১ সালে আমেরিকান কৃষ্ণাঙ্গ নেতা মালেক এল শাহাবাজের (ম্যালকম এক্স) অনুপ্রেরণায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তার পর থেকে পরিচিত হন ‘মোহাম্মদ আলী’ নামে।


মালেক এল শাহাবাজের (ম্যালকম এক্স), ছবিঃ Famous Biographies

ভিয়েতনামের সাথে যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য নির্দেশ দেয়া হলে তিনি বলেন, ভিয়েতনামের মানুষের সঙ্গে আমার কোনো ঝগড়া নেই। শুধু সাদা চামড়ার মানুষের আধিপত্য বজায় রাখার জন্য ১০ হাজার মাইল দূরের কোনো দেশে গিয়ে মানুষের ওপর অত্যাচার করা, খুন করা, বোমা ফেলা এই কাজে আমি যুক্ত হব না। পৃথিবীর বুকে এসব অবিচার বন্ধ হওয়া উচিত।’

কথাগুলো বলছিলেন এমন একজন মানুষ, যাঁর ছিল মানবতার প্রতি ভালোবাসা, খেলোয়াড়ি ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যেতে পারে জেনেও তিনি এই কথাগুলো বলেছিলেন। দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। খেলার লাইসেন্স সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ হয়েছিল। গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন। তার পরও মানবতার বিরুদ্ধে গিয়ে কোনো কাজ করেননি। মানুষটি আমাদের সবার প্রিয় বক্সার মোহাম্মদ আলী।

মার্কিন সরকারের রোষে পড়ে ক্যারিয়ারের উড়ন্ত সময়টা রিংয়ের বাইরে কাটাতে হয় আলীকে। ১৯৬৭ থেকে টানা তিন বছর নিষেধাজ্ঞা পোহান তিনি। ১৯৭১ সালে আলীর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট। 


বিখ্যাত ‘থ্রিলার অব ম্যানিলার’ লড়াইয়ে আলী এবং জো ফ্রেজিয়ার, ছবিঃ The Fight City

১৯৭১ সালে আবার মোহাম্মদ আলীকে বক্সিংএ দেখতে পায় মানুষ। সেই বছরই ‘ফাইট অব দ্য সেঞ্চুরি’ দেখতে পান বক্সিংপ্রেমীরা। ৮ই মার্চ জো ফ্রেজিয়ারের বিপক্ষে এ লড়াইয়ের ১৫ রাউন্ড শেষে পয়েন্টের বিতর্কিত সিদ্ধান্তে হার দেখেন মোহাম্মদ আলী। ফ্রেজিয়ারকে আলী ডাকতেন ‘শ্বেতাঙ্গদের বোবা পুতুল’ নামে। এটা ছিল আলীর ক্যারিয়ারে প্রথম হার।

শিরোপার বাইরের এক লড়াইয়ে ১৯৭৪ সালে জো ফ্রেজিয়ারকে হারান মোহাম্মদ আলী। শিরোপা পুনরুদ্ধারের পর ফের মোহাম্মদ আলী জো ফ্রেজিয়ারের মুখোমুখি হন ১৯৭৫ সালের ১লা অক্টোবর। বিখ্যাত ‘থ্রিলার অব ম্যানিলা’ লড়াইয়ের ১৫তম রাউন্ডে নকআউটে জয় পান আলী। 


বাংলাদেশ সফরে প্রেসিডেন্ট জিয়ার সাথে মোহাম্মদ আলী। 

১৯৭৮ সালে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আমন্ত্রণে বাংলাদেশে এসেছিলেন অনেকের চোখে সর্বকালের সেরা এই ক্রীড়াবিদ। বিমানবন্দরে আলীকে স্বাগত জানাতে লাখ লাখ মানুষ উপস্থিত হয়েছিল। সেই সময় বাংলাদেশের নাগরিকত্বও দেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশে এসে এত খুশি হয়েছিলেন, ফিরে গিয়ে সবাইকে বলেছিলেন, ‘স্বর্গ দেখতে চাইলে বাংলাদেশে যাও।’

১৯৮১ সালে এই মহান বক্সার অবসর গ্রহণ করেন। ৩ জুন ২০১৬ সালে মৃত্যুবরণ করেন ‘দ্য গ্রেটেস্ট’ মোহাম্মদ আলী।  

পঠিত : ৭৩৭ বার

মন্তব্য: ০