Alapon

রাইয়ানের মেহমান


বালিশে মাথা রেখেছে সেই কখন!শুধু এপাশ ওপাশ ফিরছে।একটুও ঘুম আসছে না তার।কে যেন বুকের ভেতর হাঁতুড়ি পিটাচ্ছে।কিঞ্চিৎ প্রশান্তিও নেই।শুধুই মাথার মধ্যে অতীতের ঘটনাগুলো বার বার নাড়া দিচ্ছে।
.
এইতো ক'বছর আগেই যার অমীয় আলাপনে,অগ্নিঝরা শব্দচয়নে কেঁপে উঠেছে তাবৎ অসত্যের ফেরিওয়ালারা,
মানবতার ধ্বংসস্তূপের উপর দাঁড়িয়ে যে সিপাহশালার গেয়ে গেছেন সত্য আর সুন্দররের জয়গান তাঁর জীবনের সাথে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনার সাক্ষী বলেই হয়ত এমন করছে ছেলেটি।মা এমন করেই ভাবছেন আর আদরিয় পরশে স্নেহের স্পর্শ দিয়ে বুঝানোর চেষ্টা করছেন প্রিয় সন্তানকে।
.
ঘড়ির কাঁটা ৩টা ছুঁই ছুঁই করছে।আলতো পরশে মা'য়ের হাতটি শরীর থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে উঠে বসে রাইয়ান।
ইচ্ছে রবের দরবারে চিৎকার করে মনের আকুতিগুলো পেশ করা।কারণ এই মালিকই যে তার পথপ্রদর্শক। হেদায়ত আর মুক্তির মঞ্জিল।প্রিয় আমীরের হায়াত আর সম্মান বাড়িয়ে দেয়ার একমাত্র অবলম্বন। আশার বসতি।
.
অজু করে এসে আনুসাংগিক কার্যক্রম শেষ করে জায়নামাজে দাঁড়ায় ২২ বছরের তরুণ।পড়তে থাকে মননে প্রশান্তি জাগানিয়া আয়াতগুলো।এক একটি রুকু-সিজদা রবের সান্নিধ্যে নিজেকে সাজিয়ে নেয়ার সর্বোচ্চ সুযোগ।আল্লাহ'র রংয়ের চেয়ে উত্তম রং আর কিইবা হতে পারে।
.
নামাজের শেষান্তে মুনাজাতে মা'বুদের কাছে হাত তুলে রাইয়ান।দু'চোখের জমানো প্রতিফোটা অশ্রুবিন্দু ফেলে মনের বাসনা তুলে ধরে 'হে আমার মালিক আমাকে ক্ষমা করুন।আমার জীবনের গতি ফিরিয়ে দেয়া ব্যক্তিটি আজ জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে তোমার সাক্ষাতের প্রহরগুণছেন।আমি জানি শহীদি মৃত্যুর চেয়ে শ্রেষ্ঠ মৃত্যু নেই।আমার নেতা,শ্রদ্ধেয় আমীরের জীবনের বাসনাই ছিল এ মৃত্যু।
.
মা'বুদ কিন্তু আমার/আমাদের মন বলে এই মহান ব্যক্তিত্বের আরো কিছু দিন এ জমিনে থাকা চাই।এ বাগানটাযে মাত্র চারারোপনের উপযোগী হয়েছে।এর পরিচর্যার জন্য একজন দক্ষ আর অভিজ্ঞ মালি থাকা চাই মা'বুদ।এটাও জানি আমাদের ধারণার চেয়ে কোটি কোটিগুণে বেশি কল্যাণ আপনার সিদ্ধান্তে।
মা'বুদ এতগুলো অপবাদ কাঁধে নিয়ে আমার রাহবারকে ছেড়ে দিতে মন চাচ্ছে না যে।ও আল্লাহ্‌,প্রিয় মানুষটাকে একটু করে ছোঁয়ে দেখতে খুব মন চাচ্ছে।একটু করে উনার পাশে থেকে জাতিকে নিয়ে,এদেশের ইসলাম এবং মুসলিমদের নিয়ে উনার ভাবনাগুলো শুনতে মন চাচ্ছে।আল্লাহ উনাকে যদি শাহাদাতের পেয়ালা পানে ধন্য করো আমি অধমকে সে জান্নাতে একটুখানি জায়গা দিও।মালিক আমি বিশ্বাস করি যত অভিযোগ এ মানুষটার বিরোদ্ধে আনা হয়েছে তার প্রতিটি অক্ষর,শব্দ,বাক্য,লাইন,মাত্রা সব, সব মিথ্যে।আল্লাহ আপনি সর্বোত্তম বিচারক।"
.
পিঠের মধ্যে কারো স্পর্শে চোখের পানিগুলো মুছে উঠে দাঁড়ায় রাইয়ান।মা!
মাকে জড়িয়ে ধরে আবার শিশুরমত কেঁদে ফেলে ছেলেটি।মা পুনঃরায় সান্তনাচ্ছলে পিঠচাপড়ে দেন।অভয় দেয়ার চেষ্টা করেন।
.
সেহরি শেষ করে ফজরের নামাজ শেষে স্থানীয় দায়িত্বশীলের কাছ থেকে মিছিলের সময়টি কনফার্ম হয়ে শুয়ে পড়ে।সকাল ৯.০০টার দিকে এলার্ম শুনে ঘুম থেকে উঠেই রেডি হয়ে মিছিলের জন্য নির্ধারিত পয়েন্টের দিকে রওনা হয় রাইয়ান।
.
আজ যেন এক অলৌকিক প্রেরণা,সাহস আর শক্তি কাজ করছে তার ভেতর।
পৃথিবীর সকল অসত্যের ধারক-বাহকরা এই শক্তির কাছে সব সময়ই পরাজিত।
আর রাইয়ান কেনইবা ভীত হবে সে যে সত্য সাধকদের দলে।সত্যের ধারকের মুক্তির মিছিলে সামিল।
.
প্রজ্জ্বলিত,প্রস্ফুটিত প্রদীপের আবরণ হবার জন্যই তার আজকের পথচলা।
একটি প্রতিষ্ঠিত সত্যেকে মিথ্যার আলখেল্লা থেকে মুক্তির জন্য এগিয়ে যাওয়া।
.
যথাসময়ের আগেই মূল জায়গায় চলে যায় সে।মিছিলের নির্ধারিত স্থানের আশেপাশে আগে থেকেই সরকারী বাহিনী মোতায়েন করছে ডিএমপি।রাইয়ান জানে সকল বাঁধা উপেক্ষা করে আজকের কর্মসূচী বাস্তবায়ন করবেন নেতৃবৃন্দ। কিন্তু মনের লোকানো প্রশ্নগুলোর কোন উত্তর সে খুঁজে পায়না।একটা স্বাধীন দেশে কিভাবে এত বেশি স্বেচ্চাচারী হতে পারে একটা অনির্বাচিত সরকার!
.
চিন্তা করতে করতে কখন জানি আনমনা হয়ে পড়েছিল কিছুটা।পাশ থেকেই কারো আল্লাহু আকবার স্লোগানে সম্বিত ফিরে পায় সে।চারদিক থেকে ছুটে আসতে থাকেন আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নেতা-কর্মীরা।পুলিশও তাঁবেদারি র অংশ হিসেবে পিছন পিছন আসতে থাকে।
.
মিছিলটি যেই শাহবাগ পাড়ি দেবে ঠিক তখনই ব্রাশফায়ার শুরু হয় পিছন থেকে।ছত্রভংগ মিছিলে ইট-পাটকেল নিয়ে কেউ কেউ প্রতিরোধ গড়ে তুলেন পরক্ষণেই গুলি আর টিয়ারশেলের আঘাতে পুনঃ রায় ছত্রভংগ হয়ে যান।
আবার প্রতিরোধের চেষ্টা করেন আবার আশেপাশের ছোট ছোট অলিগলিকে আশ্রয় মনে করে গোপনে নিজেদেরকে আড়াল করার চেষ্টা করে প্রায় আধাঘণ্টা লড়ে যান।প্রত্যেকবারই সামনে থেকে একটি ছেলে প্রতিপক্ষকে মোকাবেলার জন্য সাথীদের সাহস যোগিয়ে যাচ্ছে।একবারে শেষ মূহুর্তে ঘাতকের একটি বুলেট নেতৃত্বদানকারী ছেলেটির ঠিক বুকে এসে পড়ে।পরক্ষণেই নিস্তেজ হয়ে যায় রোজাদার রাইয়ান।থেমে যায় হায়নার রাক্ষুসে আচরণ। শুরু হয় ধড়পাকড়।মিছিলের সাথীরা প্রিয় ভাইয়ের লাশ রেখে যেতে পারছেন না।অনেকেই গ্রেফতার হন তখন।লাল রক্তে ভেসে যায় শাহবাগমোড়।তাওহীদের নিশানাবাহীর চোখ উপড়ে ফেলে আধুনিক সভ্যতার হিংস্র পশুরা।নেতার আগেই ঐশীনহরে স্নান করে সত্যের সিপাহি।অপেক্ষায় প্রহরগুণে নতুন মেহমানের...

#রাইয়ানের_মেহমান
10/05/2016

পঠিত : ৬৩৪ বার

মন্তব্য: ০