Alapon

চেঙ্গিস খান: ইতিহাসের এক বর্বর বিজেতা

চেঙ্গিস খানের জীবন থেকে শেখার আছে অনেক কিছু। জীবনের শুরুতেই হয়েছেন এতিম। মোঙ্গল সমাজে বাবার পরিচয় তথা গোত্রের সুরক্ষা  ছাড়া বেচে থাকা ছিল অত্যন্ত কঠিন। চোখের সামনে বারবার মাকে ধর্ষিতা হতে দেখে বড় হয়েছেন,খুন করেছেন ভাইকে। এরপর পরিনত হয়েছেন অন্য তাইয়ুচিদ গোত্রের দাসে, দাসত্বের বেড়ি পরে কাটিয়েছেন তিন তিনটি বছর।

তারপর মাত্র যখন ঘুরে দাড়াতে শুরু করেছেন, তার মা, বোন ও স্ত্রীকে তুলে নিয়ে গেছে শত্রুরা, ফিরে পেতে লেগেছে পুরো আট মাস। এই সময় তাকে ক্ষমতাবানদের দ্বারে দ্বারে ধরনা ধরতে হয়েছে। নিজের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু তার সাথে বেইমানী করেছেন,বন্ধুর সাথে যুদ্ধে হেরে দশ বছর জঙ্গল-পাহাড় আর মরুভুমিতে লুকিয়ে থাকতে হয়েছে তাকে।

এসবের ভেতর দিয়ে গিয়ে শেষমেশ যখন তার জীবনে সাফল্য ধরা দিয়েছে তখন তার বয়স বিয়াল্লিশ বছর, খাকান হয়েছেন চুয়াল্লিশ বছর বয়সে। এর আগের ইতিহাস কেবলই মার খাওয়ার ইতিহাস।

মার খেতে খেতে হয়েছেন হিংস্র, পাষান্ড। আর বার হোচট খাওয়া সেই মানুষটিই এক সময় পুরো পৃথিবীতে রাজ করেছেন। পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম অপরাজিত জেনারেল তিনি। তার সমকক্ষ সেনাপতির সংখ্যা মাত্র হাতে গোনা কয়েকজন। যিনি  এককভাবে জয় করেছিলেন পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি অঞ্চল এবং যিনি একই সাথে ৪ কোটি নিরাপরাধ মানুষের মৃত্যুর দায়ী। ধ্বংস, হত্যা, চাতুর্য, ক্ষমতা, লিপ্সা এবং রণকুশলতার এক অভূতপূর্ব মিশেলে গড়া চেঙ্গিস খানের জীবন কাহিনী যেন একটি জীবন্ত সিনেমার মত। তার ঘটনা বহুল জীবনের রোমাঞ্চকর উত্থান পতন নিয়ে আজ লিখছি।

যেখানে জন্ম নিলেন তিনিঃ


ছবিঃ বুরখান খালদুন পর্বত

মঙ্গোলিয়ার স্তেপ বা তৃণ চারণভূমিতে জন্ম হয়েছিল ইতিহাস সৃষ্টিকারী দাপুটে এই বিজেতার। ধারণা করা হয় চেঙ্গিসে জন্মস্থান ছিল উত্তর মঙ্গোলিয়ার খেনতি পর্বতমালার অন্তর্ভুক্ত বুরখান খালদুন পর্বতের খুব কাছে দেলুন বলদাখ নামের এক জায়গায়। সেটা জন্ম খুব সম্ভবত ১১৬২ সালে। বলা হয়ে থাকে ওনন নদীর পাড়ে তৃণচারণ ভূমিতেই তার বেড়ে ওঠা।

তেমুজিন থেকে চেঙ্গিসঃ


ছবিঃ শিল্পীর তুলিতে আঁকা চেঙ্গিস

যদিও সারা পৃথিবীর কাছে তিনি পরিচিত চেঙ্গিস খান নামে, তবে এই বিশ্ব বিজেতার আসল নাম কিন্তু চেঙ্গিস নয়। “চেঙ্গিস খান” তার উপাধি। “তেমুজিন” তার প্রকৃত নাম। অনেক যুদ্ধ এবং রক্তপাতের পর ১২০৬ সালে তেমুজিন যখন সমগ্র মঙ্গোলিয়ান স্তেপের একক অধিপতি হিসাবে আবির্ভূত হন তখন তাকে “চেঙ্গিস খান” উপাধি দেওয়া হয়। যার বাংলা অর্থ খুব সম্ভবত সমগ্র পৃথিবীর অধিপতি। হয়ত একারণেই তার পিতৃ প্রদত্ত নাম তেমুজিন কালের অতলে হারিয়ে গেছে চেঙ্গিস নামের পরাক্রমতার কাছে।

চেঙ্গিস খানের ভালোবাসা ও ভয়াবহ বিপদঃ


ছবিঃ চিত্র শিল্পীর কল্পনায় চেঙ্গিসের স্ত্রী


১৭ বছর বয়সে তেমুজিন ঘরে তুলে আনলেন তার বাল্যবধূ বোর্তেকে। বহুগামী চেঙ্গিসের জীবনের হাজার হাজার নারীর সঙ্গ আসলেও বোর্তে ছিল তার প্রথম ও শেষ ভালবাসা। অসংখ্য সন্তানের পিতা হওয়া সত্ত্বেও শুধু বোর্তের গর্ভে জন্ম নেওয়া চার ছেলেকেই উত্তরাধিকারী হিসাবে মনোনীত করেছিলেন তিনি। বোর্তে আর তেমুজিনের এই ভালবাসা ইতিহাসে বেঁচে আছে অনন্য হয়ে। বেঁচে আছে বোর্তের গর্ভে জন্ম নেওয়া চেঙ্গিসের চার ছেলের নাম জোচি, তুলুই, ওদেগিই, চুঘতাই খানের মাধ্যমে।

সে যাই হোক। বোর্তেকে নিয়ে খুব বেশি দিন একসাথে থাকা হল না তেমুজিনের। কিছুদিনের মধ্যেই আবারও এল বিচ্ছেদ। প্রতিপক্ষ অতর্কিত হামলা চালিয়ে হত্যা করল তেমুজিনের গোত্রের লোকদের সেই সাথে তুলে নিয়ে গেল বোর্তেকেও। এই ঘোর বিপদে তেমুজিন পিতৃবন্ধু তুঘরুল খানের শরণাপন্ন হলেন। 

তুঘরুল খান ছিলেন এক শক্তিশালী গোত্র প্রধান এবং চেঙ্গিসের পিতার রক্তের ভাই। সেকালে মোঙ্গলরা ছোটবেলায় ব্লাড ব্রাদার বা রক্তের ভাই সম্পর্কে আবদ্ধ হতেন হাত কেটে রক্ত বিনিময় করে। ব্লাড ব্রাদাররা আজীবন একে অপরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতেন। এছাড়াও বোর্তেকে উদ্ধার করতে চেঙ্গিস সাহায্য চাইলেন তার নিজের “রক্তের ভাই” জমুখার কাছে। অবশেষে উদ্ধার করা হল বোর্তেকে।  ফিরিয়ে আনার কিছুদিন পরেই বোর্তের গর্ভে জন্ম নিল চেঙ্গিসের বড় ছেলে জোচি। কিন্তু শত্রু শিবির থেকে বোর্তের মুক্ত হওয়ার মাত্র নয় মাস পর জন্ম হওয়ায় জোচির পিতৃ পরিচয় নিয়ে কানাঘুষা শুরু হল। তবে চেঙ্গিস আজীবন জোচিকে নিজের সন্তান হিসাবে পরিচয় দিয়েছেন।

উত্থান ও চেঙ্গিস উপাধী লাভঃ

ছবিঃ চেঙ্গিস খান

আস্তে আস্তে জমুখা ও তুঘরুলের সহযোগিতায় শক্তিশালী হয়ে উঠছিলেন তেমুজিন। তবে উচ্চাভিলাষী তেমুজিন প্রস্তুত হচ্ছিলেন আরও বড় কোন সাম্রাজ্যের মালিক হওয়ার জন্য। তিনি সেনাবাহিনীর উচ্চপদের জন্য বংশ পরিচয়ের চেয়ে যোগ্যতাকে প্রাধান্য দিতেন যেটা ছিল মোঙ্গল রীতি বিরুদ্ধ এবং তার রক্তের ভাই জমুখার কাছে খুবই অপছন্দনীয়। এছাড়া দুজনেরই চূড়ান্ত লক্ষ্য ছিল একাধিকপত্য কায়েম করার। তাই দুজনের মধ্যে সংঘাত অনিবার্য হয়ে দাঁড়াল। এককালে তেমুজিনের রক্তের ভাই জমুখা পরিণত হলেন চেঙ্গিসের ঘোর দুশমনে। সময়ের সাথে সাথে আধিপত্য বিস্তারের এই সংঘাত কমলনা বরং বেড়েই চলল।

তবে চূড়ান্ত মীমাংসা পেতে বেশি দিন অপেক্ষা করতে হল না।  চেঙ্গিস খানের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি ঘটল ১২০৬ সালের দিকে অর্থাৎ চেঙ্গিসের বয়স যখন মোটামুটি ৩৫ বছর। মঙ্গোলিয়ান স্তেপ তখন দুই শিবিরে বিভক্ত। একদিকের নেতৃত্বে চেঙ্গিস অন্যদিকে জমুখা। জুমখার উপাধি তখন “গুর খান”। তেমুজিনের সাথে বেশ কয়েকটি যুদ্ধ জমুখার পরাজয়ের পর জমুখার লোকেরাই তাকে চেঙ্গিসের হাতে তুলে দেয়।

তবে চেঙ্গিস খানের কাছে সবচেয়ে মারাত্মক অপরাধ ছিল বিশ্বাসঘাতকতা। জমুখার যে জেনারেলরা চেঙ্গিসের কাছে পুরস্কৃত হওয়ার আশায় নেতাকে তুলে দিয়েছিল শত্রুর কাছে তাদের বিশ্বাসঘাতকতার পরিণতি হয়েছিল খুবই ভয়ঙ্কর। চেঙ্গিস তাদের সবাইকে বিশ্বাসঘাতকতার অপরাধে ফুটন্ত পানিতে সেদ্ধ করে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন। জমুখাকে তার নিজের ইচ্ছা অনুসারেই মোঙ্গল রীতি অনুসাতে পিঠ ভেঙে হত্যা করা হয়েছিল। যদিও চেঙ্গিস জমুখাকে হত্যা করতে চান নি বলে বেশ কিছু সূত্রে উঠে এসেছে কিন্তু জমুখা নিজেই পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে বেঁচে থাকতে চাননি। জমুখাকে পরাজিত করার পর মঙ্গোলিয়ার বাকি গোত্রগুলোও একে একে চেঙ্গিসের বশ্যতা মেনে নিতে থাকে। সে বছরই তাকে “চেঙ্গিস খান” উপাধিতে ভূষিত করা হয়।

সামাজ্র বিস্তার ও বর্বরতা


ছবিঃ মোঙ্গলদের রাজ্য সীমানা

“চেঙ্গিস খান” হওয়ার পর তেমুজিন আরও ২১ বছর বেঁচে ছিলেন আর সেটাই ছিল তার জীবনের স্বর্ণযুগ। সেই সময়ের মধ্যে তিনি জয় করেছিলেন চীন, ভারত, ইউরোপ, ভারত ও এশিয়ার প্রায় ১ কোটি বর্গ কিলোমিটার বিস্তৃত অঞ্চল। ১২১১ সালে পশ্চিম Jin  সাম্রাজ্য, ১২১৫ সালের ঐশ্বর্যমণ্ডিত xia সাম্রাজ্য, ১২২০ সালে প্রবল প্রতাপশালী খোয়ারেজেম সাম্রাজ্য তার পদানত হয়।

এছাড়া আফগানিস্তান হয়ে ভারতের পাঞ্জাব পর্যন্ত চলে এসেছিল মোঙ্গল বাহিনী। ককেশাস ও কৃষ্ণসাগরের আশে পাশের অঞ্চল গুলোও একে একে অন্তর্ভুক্ত থাকে চেঙ্গিসের সাম্রাজ্যে। ইউরোপে চেঙ্গিসের জয়রথ পৌঁছেছিল বুলগেরিয়া হয়ে ইউক্রেন পর্যন্ত। অবাক করা ব্যাপার চিরকাল অজেয় রাশিয়া জয় করতে চেঙ্গিস খানের বাহিনীর একটুও বেগ পেতে হয়নি।

মোঙ্গল বাহিনীর বর্বরতা


ছবিঃ মোঙ্গলীয় বাহিনী

চেঙ্গিস খানের রাজ্য জয় করার পদ্ধতি ছিল ভয়াবহ রকমের বীভৎস। কোন শহর জয়ের আগে সে শহরের মানুষদের নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের আদেশ করা হত। সেটা না মেনে নিলে শুরু হত অবরোধ, তারপর একসময় অনাহার ক্লিষ্ট নগরবাসীর উপর চালানো হত অতর্কিত হামলা। নারী, পুরুষ, শিশু কেউই মোঙ্গল বাহিনীর বর্বরতা থেকে বাঁচতে পারেনি। মারভ, বেইজিং, সমরখন্দের মত মধ্যযুগের জনবহুল শহরগুলো মোঙ্গল বাহিনীর পাশবিকতায় একদম মাটির সাথে মিশে গিয়েছিল।

বর্তমান তুর্কমেনিস্তানের উরগেঞ্জ ছিল মধ্যযুগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোর একটি। সেটিও মোঙ্গল বাহিনী পুরোপুরি ধ্বংস করে ফেলে। প্রায় ১২ লক্ষ মানুষের এই শহর জয় করার সময় চেঙ্গিসের বাহিনীর ৫০ হাজার সৈনিকের প্রত্যককে গড়ে ২৪ জন করে নিরীহ মানুষ হত্যার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।

মোঙ্গল বাহিনী যেসব এলাকায় হামলা চালাত সেগুলো হয়ে পড়ত জনশূন্য। হাজার হাজার বর্গমাইল জুড়ে বিস্তৃত সভ্যতা পরিণত হত ভূতুড়ে নগরীতে। আজও সেন্ট্রাল এশিয়ার বেশ কিছু শহরের ধ্বংসাবশেষ টিকে আছে মোঙ্গল আক্রমণের ভয়াবহতার সাক্ষী হিসাবে। ধারণা করা হয় চেঙ্গিস খানের বিভিন্ন অভিযানে মারা পড়েছিল প্রায় ৪ কোটির মত সাধারণ মানুষ যা তৎকালীন পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় ১১ শতাংশ।

চেঙ্গিস খানের জীবনাবসানঃ

তিনি ছিলেন সুদক্ষ ঘোড়সওয়ার। ঘোড়া দৌড়ানোর নানা কৌশল জানা ছিল। তাকে বলা হতো ‘মাস্টার হর্স রাইডার’। কিন্তু সেই তিনি শিকার করার সময় ঘোড়ার ওপর থেকে পড়ে মারাত্মক আহত হন এবং আহত হওয়ার অল্প কিছুক্ষণ পরই তিনি মারা যান। আবার এমন কথাও চালু আছে, তিনি মারা যান ম্যালেরিয়ায়। তখন তার বয়স ৬০। অপর দিকে কেউ বলছেন, তিনি মারা যান ১২২৭ সালের ১৮ আগস্ট পশ্চিম জিয়া সাম্রাজ্যে আক্রমণ চালানোর সময়। এ হামলা চালানোর সময় তিনি ঘোড়া থেকে পড়ে আহত হয়ে মারা যান।

তার মৃত্যুর কারণ সঠিকভাবে জানা যায়নি। এর একটি বড় কারণ তার মৃত্যুর ব্যাপারে কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়েছিল। তবে মারা যাওয়ার কিছুক্ষণ আগে তার পুত্রদের তিনি বলে গিয়েছিলেন : ‘স্বর্গীয় সহায়তায় আমি তোমাদের জন্য বিজয় করে রেখে গেলাম এক বিশাল সাম্রাজ্য। কিন্তু গোটা দুনিয়া জয় আমি করতে পারিনি। কারণ আমার জীবনটা খুবই ছোট।’

চেঙ্গিসের সমাধি এক অজানা রহস্যঃ

চেঙ্গিস খান বলে গিয়েছিলেন তাকে কোথায় সমাধিস্থ করা হবে তা যেন কাউকে জানানো না হয়। মারা যাওয়ার পর তার লাশ ফিরিয়ে আনা হয় মঙ্গোলিয়ায়। ধরে নেয়া হয় তাকে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল তার জন্মস্থান উলান বাতুরের উত্তর-পূর্বে খেন্তি আইম্যাগে। এই স্থানটি ওনন নদীর তীরের কাছাকাছি। এমন কথাও প্রচলিত আছে, তাকে সমাহিত করার জন্য যখন নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন পথে যাকেই পাওয়া গিয়েছিল তাকেই তার সৈন্যরা হত্যা করে, যাতে করে কেউ জানতে না পারে তাকে কোথায় কবর দেয়া হয়েছে। যেসব শ্রমিক তার কবর খনন করেছিল, খনন শেষে তাদেরকেও মেরে ফেলা হয়। তারও পর যেসব সৈন্য তাদের হত্যা করেছিল, তাদেরকেও হত্যা করা হয়।

শেষ কথাঃ

পৃথিবীতে কেউ শান্তি করতে আসে না।পৃথিবী লড়াইয়ের জায়গা।মার খাওয়া এবং মার দেওয়া দুইটাই লড়াইয়ের অংশ। আজকে যার দিন খারাপ যাচ্ছে,কাল সে ঘুরে দাড়ানোর সুযোগ পাবে না, এর কোন গ্যারান্টি নেই। তবু আমরা হতাশ হতেই যেন বেশি পছন্দ করি।

জীবনের শুরুটা খুব কম মানুষেরই চমৎকার হয়, কিন্তু শেষতক যে ফোকাস ধরে রাখতে পারে, জিত সাধারনত তারই হয়।

তথ্যসূত্র
১) wikipedia
২) সানজাক ই উসমান
৩) The 100 by Michael H Hart

পঠিত : ১২৭৭ বার

মন্তব্য: ০