Alapon

মা দিবসের চাওয়া...

রেহানা বেগম একজন রত্নগর্ভা মা। তার এক ছেলে সচিব ,একছেলে একটা প্রাইভেট ব্যাংকের ম্যানেজার আরেকছেলে শিল্পপতি। এক মেয়ে আছে যার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। একজম মা হিসেবে একজন মানুষের যে যে সাফল্য পাওয়া প্রয়োজন তার সবই পেয়েছেন রেহানা বেগম।

ছেলে মেয়েদের আদরে শাসনে বড় করেছেন। পড়ালেখার ক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র ছাড় দেননি। মেঝো ছেলের বয়স যখন ৪ তখন হুট করে একদিন রেহানা বেগমের স্বামী মারা যান। স্বামী হারা রেহানা বেগম পড়েন অকুল পাথারে। চাকরি নেন এলাকার প্রাইমারী স্কুলে। দু বেলা টিইশনি করিয়ে ছেলে মেয়েদের শহরে পড়ালেখা করান তিনি।

আজ ৬২ বছর বয়সে রেহানা বেগম পেছন ফিরে তাকিয়ে পরিতৃপ্তির হাসি হাসেন। একজন গর্বিত মায়ের হাসি। স্কুলের চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন বহুদিন হলো।

অবসর জীবনে একজন গর্বিত মা রেহানা বেগমের একমাত্র কাজ হলো ছেলের বউদের উপর অত্যাচার করা। এইত গত কাল মেঝো ছেলের বউটা তরকারি পুড়িয়ে ফেলল।

দুই গালে দুই থাপ্পড় দিয়ে সোজা রুমে পাঠিয়ে দিয়েছেন রেহানা বেগম। অবশ্য হাতে মারতে মজা লাগেনা। খুন্তির ছ্যাকা দেয়া রেহানা বেগমের সবচাইতে বেশী পছন্দের্। ছেলের বউদের মাইরের উপর রাখতে হয়। নাহলে সংসারে তার একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রন থাকবে কিভাবে। 
ছেলেরাও মা বলতে পাগল। মা যদি তোমাদের চুলের মুঠি ধরে লাথিও মারে তোমরা চুপ করে সহ্য করবে।


এই গেলো গর্বিত মা রেহানা বেগমের গল্প। এবার শুনেন রেহানা বেগমের মেয়ের গল্প।

বিয়ের দুই বছরের মাথায় শ্বশুর শ্বাশুড়ি থেকে আলাদা হয়ে হাজব্যান্ড কে নিয়ে গুলশানের অভিজাত ফ্ল্যাটে উঠেছে সুমাইয়া। বাপ মায়ের ন্যাওটা ছেলেকে আলাদা করতে কম কষ্ট করতে হয়নি সুমাইয়াকে। একমাত্র ছেলে বাবা মায়ের্।

মাঝে মাঝে অবশ্য এই বাসায় এসে শ্বাশুড়ি থাকেন কয়েকদিন। সুমাইয়ার কাছে সেই দিনগুলো অসহ্য লাগে। স্বামী সন্তান আর আমি তিন জনের ছোট্ট জগতে শ্বাশুড়ী নামক তৃতীয় পক্ষ আসবেই বা কেন?

বুড়ি মরেও না। মরলে শান্তি। বুড়ির পেছনে মেডিসিন খরচ যায় মাসে ১০ হাজার্। এই টাকা দিয়ে ভাল একটা ইন্ডিয়ান কাতান শাড়ি কিনতে পারে সুমাইয়া। ৭৮ বছর বয়স্ক একজন বৃদ্ধাকে বাঁচিয়ে রাখার পেছনে টাকা নষ্ট করতে রাজি না সে।

হাজব্যান্ড কে হাতে হাতে রাখতে খুবই স্টাইলিশ ভাবে চলতে হয় সুমাইয়ার্। বুড়ি আজকে আবার বাসায় এসেছে। দুপুরে বুড়িকে ভাত দেয়নি সুমাইয়া। মরুক না খেয়ে মরে যাক। তাহলে বুড়ির আলমারির দলিলগুলো তার হাতে আসবে। মুচকি হাসি হাসে সুমাইয়া।


এই হলো রেহানা বেগমের মেয়ে সুমাইয়ার গল্প।

নিজ সন্তানের কাছে ভাল মা সবাই হয় ,অন্যের মেয়ের কাছে মা সবাই হতে পারেনা। নিজ পিতামাতাকে সবাই ভালোবাসে,অন্যের পিতামাতাকে ভালো সবাই বাসতে পারেনা।

মা দিবসে তাই একটাই চাওয়া

এ দেশের প্রতিটা শ্বাশুড়ী তাদের ছেলের বৌদের কাছে শ্বাশুড়ি না বরং মা হয়ে উঠুক। প্রতিটা ছেলের বৌ তাদের শ্বাশুড়ীদের কাছে ছেলের বৌ না,মেয়ে হয়ে উঠুক।

পঠিত : ৬৮২ বার

মন্তব্য: ০