Alapon

ফিলিস্তিনিদের লাশের উপর মার্কিন দূতাবাস স্থাপন

আবারও রক্তাক্ত গাজাঃ
গতকাল ১৪ মে সোমবার জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থাপনের দিন ইসরায়েলি হত্যাযজ্ঞের শিকার হওয়া ফিলিস্তিনির সংখ্যা ৫০ ছাড়িয়েছে। সুদূর লক্ষ্যভেদী অত্যাধুনিক ইসরায়েলি স্নাইপারে (বিশেষ ধারার বন্দুক, যা দিয়ে অনেক দূরের লক্ষ্যবস্তুকে নির্ভুল নিশানা বানানো যায়) অন্তত ৫৫ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে। জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থাপনকে কেন্দ্র করে এদিন আরও জোরালো হয় ভূমি দিবসের চলমান বিক্ষোভ কর্মসূচি। জাতিগত মুক্তির লড়াইয়ে অর্ধশতাধিক ফিলিস্তিনির জীবন দেয়ার পাশাপাশি কর্মসূচি সফল করতে গিয়ে আহত হন অন্তত ২ হাজার ৪শ মানুষ। 



১৯৪৮ সালের ১৫ মে দখলীকৃত ফিলিস্তিনি ভূমিতে প্রতিষ্ঠিত হয় ইসরায়েল রাষ্ট্র। ১৯৭৬ সালের ৩০ মার্চ অবৈধ বসতি নির্মাণের প্রতিবাদ করায় ছয় ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়। পরের বছর থেকে ৩০ মার্চ থেকে ১৫ মে পর্যন্ত পরবর্তী ছয় সপ্তাহকে ভূমি দিবস হিসেবে পালন করে আসছে ফিলিস্তিনিরা। এদিনের কর্মসূচিতে নিহতদের মধ্যে ছয় শিশু এবং একজন প্যারামেডিক রয়েছেন।

নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও যারা আন্দোলনেঃ
২০১৪ সালে গাজায় ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর একদিনে এত সংখ্যক ফিলিস্তিনি নিহতের ঘটনা এটাই প্রথম। আল-জাজিরার ভাষ্যমতে, গতদিনে মোট শহীদ হয়েছেন ৫২ জন, শিশু নিহতঃ ৬ জন, কন্যা শিশু নিহতঃ ১ জন, আহত শিশুঃ ২০৩ জন, আহত নারীঃ ৭৮ জন, মোট আহতঃ ২৪১০ জন, মাথায় আঘাত প্রাপ্তঃ৭৯, গুরুতর আহতঃ ১৬১ জন, বুকে ও পিঠে আঘাত প্রাপ্তঃ ৬২ জন, পাকস্থলিতে আঘাত প্রাপ্তঃ ৫২ জন, টিয়ারশেলে আঘাত প্রাপ্তঃ৮৩৭ জন, মেডিকেল অফিসার আহতঃ ১ জন, সাংবাদিক আহতঃ ১২ জন



ট্রাম্প উস্কে দিলেন হত্যাযজ্ঞঃ
ট্রাম্পের আগের সব মার্কিন প্রেসিডেন্টসহ বিশ্বের প্রায় সবদেশ জেরুজালেমে ইসরায়েলি দূতাবাস চালু করা থেকে বিরত থেকেছেন। তারা চাইতেন আগে জেরুজালেমের অবস্থান চূড়ান্ত হোক ইসরায়েল-ফিলিস্তিন আলোচনার মধ্য দিয়ে। পূর্ব জেরুজালেমকে নিজেদের স্বাধীন রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে চায় ফিলিস্তিনিরা। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প এই অবস্থান থেকে সরে গিয়ে ২০১৭ সালের ৬ ডিসেম্বর জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থাপনের ঘোষণা দিয়ে শহরটিকে ইসরায়েলের রাজধানীর স্বীকৃতি দেন।



নাকবায় প্রাণ দিয়েই যাচ্ছে ফিলিস্তিনীরাঃ
১৯৪৮ সালের ১৫ মে দখলীকৃত ফিলিস্তিনি ভূমিতে প্রতিষ্ঠিত হয় ইসরায়েল রাষ্ট্র। ১৯৭৬ সালের ৩০ মার্চ অবৈধ বসতি নির্মাণের প্রতিবাদ করায় ছয় ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়। পরের বছর থেকে ৩০ মার্চ থেকে ১৫ মে পর্যন্ত পরবর্তী ছয় সপ্তাহকে ভূমি দিবস হিসেবে পালন করে আসছে ফিলিস্তিনিরা। ভূমি দিবসের কর্মসূচির শেষ দিনটিকে ফিলিস্তিনিরা‘নাকবা’ বা বিপর্যয় দিবস হিসেবে পালন করে থাকে। গ্রেট রিটার্ন মার্চ খ্যাত এবারের কর্মসূচিতে ও বিক্ষোভে অংশ নেন লাখো মুক্তিকামী ফিলিস্তিনি। এদিন নিহত ৫৮ ফিলিস্তিনিকে নিয়ে মৃতের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছে। বিক্ষোভে হানাদার বাহিনীর নির্বিচার গুলিবর্ষণে সাম্প্রতিক ইতিহাসের এ ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়। 




মার্কিন দূতাবাস স্থাপনের তীব্র প্রতিবাদ সারাবিশ্বেঃ
ইসরায়েলের তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থাপনের নিন্দা জানিয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ। জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তর ও গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতার নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও মানবাধিকার সংস্থা। নিন্দা ও পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন কয়েকটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের রাষ্ট্র প্রধানরা।

কায়রোভিত্তিক ২২টি আরব দেশের জোট আরব লিগ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করার আহ্বান জানিয়েছে। একই সঙ্গে সংস্থাটি জেরুজালেমে ইসরায়েলের চলমান দখলদারিত্বের বিরোধিতারও আহ্বান জানায়। এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থাপনকে আরব ও মুসলিম বিশ্বের অনুভূতিতে ভয়ঙ্কর আঘাত বলে উল্লেখ করেছে।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থাপনের দিনকে লজ্জার দিন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

টুইটারে এই পদক্ষেপের ক্ষোভ জানিয়েছেন লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরি।  দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ জানিয়েছে, ফিলিস্তিনিরা যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত মেনে নেবে না। তাই এটা অর্থহীন।

তুরস্কে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে তলবঃ
গাজায় ইসরায়েলি হত্যাযজ্ঞকে গণহত্যা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান। পাশাপাশি ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে তুরস্ক। দেশটির প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান ইসরায়েলকে একটি সন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আখ্যায়িত করে জানান, গাজায় ইসরায়েল যা করছে তা গণহত্যা।



আজান নিষিদ্ধ করেছে ইসরাইলঃ
জেরুজালেম, ১৪ মে- তেলআবিব থেকে জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরের কার্যক্রম শুরুর পর সেখানে আজান দেয়া নিষিদ্ধ করেছে ইসরাইল।

সৌদি আরবের মনে একটুও আঘাত লাগে নি?
এতো বড় হত্যাযজ্ঞে সৌদি সরকারের মনে একটুও আঘাত লাগে নি? এটা এখন অনেক বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ মুসলিম দেশ গুলোর মধ্যে মিশর ও সৌদি এই ইস্যুতে এখনো কোন প্রতিবাদ করে নি।

হামাসের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাঃ



গাজার ক্ষমতায় থাকা কট্টরপন্থী মুসলিম সংগঠন হামাস ছয় সপ্তাহ ধরে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ চালিয়ে আসছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, প্রায় ৩৫ হাজার ফিলিস্তিনি বিক্ষোভ করছেন। হামাস নিহতদের স্মরণে আগামী তিনদিন দোয়া দিবসের ঘোষণা দিয়েছেন। আগামীতেও এভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন ইসমাঈল হানিয়া ও খালেদ মিশাল।

পঠিত : ১৪২৫ বার

মন্তব্য: ০