"আমার রমজানের রুটিন, কাজে লাগতে পারে আপনারও"
তারিখঃ ১৬ মে, ২০১৮, ১২:৩১
গত কিছুদিন আগে এই ব্লগেই একটি পোষ্ট দেখেছিলাম কিভাবে রমজানের প্রস্তুতি নিতে হবে সে বিষয়ে। সেখানে একটি বিষয়ে খুব বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়, তাহলো পুরো রমজান কে কিভাবে অতিবাহিত করা হবে তার একটি রুটিন করে নেয়া। কখন কি কাজ করা হবে তা আগে থেকেই ঠিক করে নেয়া যেন ইবাদতের মাসের প্রতিটি সময় যথাযথ ভাবে কাজে লাগে। তাই আমি রমজান মাসের জন্য ২৪ ঘন্টার একটি রুটিন তৈরি করি। আর তা আপনাদের জন্যেও শেয়ার করি যেন এ থেকে আপনাদেরও পরিকল্পনা নিতে সহজ হয়।
তাহলে চলুন দেখি রমজানের ২৪ টি ঘন্টা কিভাবে কাটাবো আমরা-
মধ্যরাত- ২:৩০-২:৪০ - নিদ্রাত্যাগ ও পবিত্রতা অর্জন।
মধ্যরাত- ২:৪০-২:৪৫ - তাহ্যিয়াতুল ওযুর ২ রাকাত নামাজ আদায়।
মধ্যরাত- ২:৪৫-৩:২৫ - তাহাজ্জুদের ৮ রাকাত নামাজ (বোনেরা বিতরের নামাজ এই সময় পড়তে পারেন)।
মধ্যরাত- ৩:২৫-৩:৩৫ - দোয়া ও মুনাজাত।
ভোর- ৩:৩৫-৩:৫০ -সাহরী গ্রহণ করা।
ভোর- ৩:৫০ -ফজরের আযান পর্যন্ত কোরআন তেলাওয়াত।
তারপর সালাতুল ফজর আদায় করা। জিকির-আযকার ও কোরআন তিলাওয়াত করা। সম্ভব হলে এশরাক পর্যন্ত জেগে থাকা। আর যদি সকালে কাজ থাকে তবে নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে যাওয়া।
সকাল ৯:০০-৯:১৫ -ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়া। ইস্তেঞ্জা ও পবিত্রতা অর্জন করা এবং তাহ্যিয়াতুল ওযুর নামাজ।
সকাল ৯:১৫- দুপুর ১:০০ -যারা বাইরে কাজ করবেন তারা কাজে চলে যাবেন। যারা বাসায় থাকবেন তারা বাসার কাজ সেরে চেষ্টা করবেন যেন অন্তত ১ ঘন্টা কোরআন তিলাওয়াত করার জন্য। কাজের ফাঁকে ফাঁকে ইস্তেগফার, জিকির করা। গাড়িতে থাকলে মাসনূন দোয়া মুখস্থ করা। গাড়িতে থাকলে বই পড়া ।
দুপুর ১:০০-১:৪৫ - যোহরের সালাত আদায়।
দুপুর ১:৪৫-২:১৫ - কোরআন অধ্যায়ন করা।
দুপুর ২:১৫- বিকাল ৩:৩০- বাহিরে থাকলে বাসায় ফেরা, দ্বীনি ইলম অর্জন, লেখালেখি করা, অর্থসহ কোরআন তিলাওয়াত করা, জিকির, দোয়া ও অন্যান্য ভালো কাজ করা।
বিকাল ৩:৩০-৪:৩০ - বিশ্রাম/ঘুম।
বিকাল ৪:৪৫-৫:১০ -আসরের সালাত আদায় করা।
বিকাল ৫:১০-৫:৫০ - মাসনূন জিকির, কোরআন তিলাওয়াত, টিভিতে ইসলামিক অনুষ্ঠানমালা দেখা।
বিকাল ৫:৫০-৬:২৫ - ইফতারি তৈরি/ তৈরিতে সাহায্য করা।
সন্ধ্যা ৬:২৫-৬:৩০ - সম্মিলিত দোয়া করা।
সন্ধ্যা ৬:৩০-৭:০০ - ইফতার ও মাগরিবের সালাত আদায়।
সন্ধ্যা ৭:০০-৮:০০ -বিশ্রাম। এই সময় বিভিন্ন মোটিভেশনাল লেকচার, কোরআন তিলাওয়াত শোনা।
রাত ৮:০০-১১:০০ -এশার সালাত ও সালাতুত তারাবীহ আদায়।
রাত ১১:০০-১১:১৫ - আয়াত-হাদিস রিভাইস দেয়া।
রাত ১১:১৫-১১:৩০ - ঘুমের প্রস্তুতি।
রাত ১১:৩০-২.৩০ -ঘুম।
এই রুটিনটা আমার একটা খসড়া রুটিন। যার যার সুবিধামত একে পরিবর্তন করে নিতে পারেন। সবার সাথে টাইমিং না মিললেও আমলের ক্রমধারা বজায় রাখার চেষ্টা করতে পারেন। রমাদানে সবচেয়ে বেশি নফল যে আমল করতে হবে তা হল কোরআন তেলাওয়াত। এরপর কিয়ামুল লাইল বা রাতের সালাত। গোনাহ থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকা। গীবত, চোগলখোরি সম্পূর্ণরুপে ত্যাগ করা। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনদের যথাসম্ভব দ্বীনের দাওয়াত দেয়া। বেশি বেশি সাদাকা করা। মনে রাখতে হবে রমাদান মাস আমলের মাস। যে যত বেশি আমল করবো সে তত লাভবান হবো। দুনিয়াবি ব্যস্ততা, মার্কেটে ঘু্রে সময় নষ্ট না করা।
আমি রোজায় যে কাজ গুলো করবো না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিঃ
১. অতিরিক্ত ঘুমানো।
২. অলস সময় কাটানো।
৩. টিভি দেখে এবং নেট ব্রাউজ করে সময় কাটানো।
৪. নফল ইবাদাতের কথা বলে বেড়ানো।
৫. ভারী কাজ করা।
৬. সারা রাত জেগে থাকা।
৭. তারাবী নিয়ে বিতর্ক করে তাহাজ্জুদ তারাবী কোন টাই না পড়া।
৮. সেহরীতে ও ইফতারে অতিরিক্ত খাওয়া।
৯. বেশি কথা বা একদম চুপ থাকা।
যে কাজ গুলো করবো বলে মনস্থির করেছিঃ
১. পুরো কোরআন একবার অর্থসহ পড়া।
২. ৩০ তম পারাটি মুখস্থ করা।
৩. ইসলামের ইতিহাস ও সাহাবীদের জীবনী অধ্যায়ন করা।
৪. নফল ইবাদতে প্রতি পূর্ণ মনোনিবেশ করা।
৫. দৈনদিন কাজে ব্যবহ্নত দোয়া গুলোর তালিকা তৈরি করে মুখস্ত করা।
৬. বিষয় ভিত্তিক আয়াত মুখস্ত করা।
৭.নিয়মিত তাহাজ্জুদ আদায় করা।
৮. বেশি বেশি দান-সাদকাহ করা।
৯. সার্বক্ষণিক জিকির করা।
আসুন না আমরা সবাই মিলে এই বছরের রোজা টাকে জীবনের শেষ রোজা মনে করে সঠিক ভাবে সময় গুলো কাজে লাগাই। নিজের পাপের বোঝাকে হালকা করি। আমলের পাল্লা টা ভারী করি।
মনে রাখবেন রোজা ভালো মনের মানুষ গঠনে অবিশ্বাস্য ভূমিকা পালন করে। তাই আমাদের সুস্থ
সুন্দর দেহ-মন ও স্বাস্থ্য নিয়ে অতি সহজ ও শান্তিময় জীবন গড়ার ব্যবস্থা
হিসেবে মহান আল্লাহতায়ালা রোজা ফরজ করেছেন।
তিনি বলেন- ‘তোমাদের ওপর রমজানের রোজা ফরজ
করা হয়েছে, যাতে তোমরা খোদাভীরু হতে পারো।’ -সূরা বাকারা : ১৮৩
আল্লাহ্ তা'অালা আমাদেরকে রমাদানের হক যথাযথভাবে আদায় করার তৌফিক দিন।
মন্তব্য: ০