Alapon

রমাদানে নারীর ইবাদাহ্ কেমন? তা কি রান্নাঘরের সময় বাঁচিয়ে! নাকি যন্ত্রমানবী হয়ে?

মমতাজ বেগমের সারা শরীর ক্লান্তিতে ভেঙ্গে আসছে। রোজা রেখে এত ধকল আর নিতে পারছেনা। 
ছয় সদস্য বিশিষ্ট সংসারের কাজের ঘানি এতটা বছর ধরে একাই সামলে এসেছেন। ছোট ছেলেটা হবার পর নতুন করে বাতের ব্যথাটাও দেখা দিয়েছে।

শামসুল সাহেবের আবার স্পেশাল নিয়ম। রোজা এলেই খালি ভাল মন্দ খেতে ইচ্ছে করে। সেই সাথে মেজাজের পারদটাও থাকে বেশ চড়া। এক কথা একবারের বেশি বলা যায়না। চেঁচামেচি করে ঘর মাথায় তুলেন। ছেলেরাও যে যার মত ব্যস্ত থাকে।

মমতাজ বেগুনী ভাজা রাখতে রাখতে ঘড়ির দিকে তাকালেন, ইফতারের আর মাত্র বিশ মিনিট বাকি আছে। ভাজা ভুজি গুলো শেষের দিকে করেন যাতে মচমচে থাকে। ঠান্ডা হয়ে গেলে আবার কেউই খেতে চায়না। 

এদিকে শরবতের জন্য চিনি ভিজিয়ে রেখেছেন সেটাও ভাল করে নেড়ে আরো পানি আর লেবুর রস যোগ করা বাকি। শ্বশুর মশায়ের আবার শরবতের সাথে ইসবগুল পছন্দ। এদিকে ছোট ছেলেটা লেবুর শরবত পছন্দ করেনা। মাল্টা কেটে জুস করে দিতে হবে।
আপেল, মালটা, পেঁপে ইত্যাদি ফল কেটে সাজাতে হবে। শশা, টমেটো , কাচামরিচ মাখিয়ে সালাদটা করতে হবে। অবশ্য ছোলা, মুড়ি, খেজুর, হালিম, জিলাপী আগেই টেবিলে সাজিয়ে রেখেছেন।

ঐ দিকে পরিবারের সবাই ডাইনিং টেবিলে এসে অলরেডি জড়ো হয়ে গেছেন। মমতাজ বেগম ঘড়ির কাঁটার সাথে পাল্লা ধরে প্লেট সাজাতে থাকেন। শামসুল সাহেব বেশ রেগে গেছেন। তোমার আক্কেলটা কি বলত? ইফতারিরআর মাত্র দশ মিনিট বাকি আছে। এতক্ষন কি করেছো ? মমতাজ বেগম কথার প্রতিউত্তর হিসেবে নিরবে কেঁদে ফেলেন। 
দুপুর একটা থেকে রসুই ঘরে ঢুকে ইফতার, রাতের খাবার,সেহরীর আয়োজন সব কিছু কমপ্লিট করতে করতে এখন মাগরিব দোর গোড়ায়।

আজানের দুই মিনিট আগে কোন রকমে সব কমপ্লিট করতে করতে পারলেও নিজের জন্য কোন আয়োজনই করতে পারলেন না। আজান দিতেই কোন রকমে একটা খেজুর আর শরবত খেয়ে সবাইকে খাবার বেড়ে দিতে লাগলেন। ঘরের একটা সদস্যও বললনা যে আমরাই নিজেরা নিয়ে খাব। তুমিও রোজাদার। আমাদের পাশে বসে ইফতারিটা সেরে নাও।

সবাই উদর পূর্তি করে নামাজে গেলে মমতাজ বেগম নিজেও নামাজটা পড়ে নেন।  তারপর ঠান্ডা ছোলা, পেঁয়াজু,বেগুনী মুড়ির সাথে মেখে খেতে বসেন। নামাজ সেরে পরিবারের কিছু সদস্য এসে দেখে মমতাজ বেগম খাচ্ছেন। 

ইফতারির টাইম তো শেষ। এখনও খাওয়া শেষ হয়নি? প্রশ্ন বোধক বাক্যটা কলিজাটা ফুটো করে দিল। মমতাজ বেগম টিটকারি হজম করতে গিয়ে ইফতারি হজম করতে ভুলে যান। এঁটো থালাবাটি, টেবিল, সবকিছু ধুয়ে মুছে সাফ করতে করতে এশার আজান দিয়ে দেয়। এবার তারাবী পড়তে গিয়ে রুকু সিজদায় গিয়ে মনে হল কেউ যেন হাতুড়ি পিটিয়ে শরীরের সব জয়েন্ট ব্যথা করে রেখেছে। নামাজ শেষে ক্লান্তিতে চোখ বুজে আসে।  কিন্তু ঘুমাবার ফুসরত কই ?

নামাজ সেরে সবাই এসে গেছে। রাতের খাবারের আয়োজন করতে হবে। সবাই ক্লান্ত,খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে গেছে আবার সেহরিতে উঠতে হবে। মমতাজ বেগম তখন সেহেরির জন্য ভাত রান্না করছেন। শামসুল সাহেব আবার গরম ধোঁয়া উঠা ভাত ছাড়া সেহরি করতে পারেননা।
মমতাজ বেগমের মাথা ব্যথা করছে। তিনি ক্লান্ত শরীরে কিচেনের দেয়ালে গা এলিয়ে দেন। ভাতের পানি ফুটছে।

একমাত্র দেয়াল ঘড়িটা টিকটিক করে মমতাজ বেগমকে সঙ্গ দিয়ে যাচ্ছে.....

পুনশ্চ : রমাদান মাসে ভীষণ কমন চিত্র। ভাবি,তাকওয়া আর সংযম পরিপূর্ণ হবে কবে!

আচ্ছা রমাদানে নারীর ইবাদাহ্ কেমন? তা কি রান্নাঘরের সময় বাঁচিয়ে! নাকি যন্ত্রমানবী হয়ে?

এই প্রথা থেকে বেরিয়ে আসা ঈমানের দাবী। পরিবারের নারী সদস্যদের আমলিয়াত বাড়ানোর তাগিদ নিজেদের সাথে মিলিয়ে নিলে রমাদানকে যথাযথ কাজে লাগানো সম্ভব হলেও হতে পারে।

পঠিত : ১৩৫৮ বার

মন্তব্য: ০